চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোহিঙ্গাদের ছেড়ে আসা গ্রামে মিয়ানমারের সামরিক স্থাপনা

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ছেড়ে আসা গ্রামগুলোতে মিয়ানমার সামরিক ঘাঁটি ও স্থাপনা তৈরি করছে বলে নতুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করেছে মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

ওই প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি দাবি করেছে, গ্রামগুলো পুড়িয়ে দেয়ার পর জমিগুলো দখল করে সেখানে হেলিপ্যাড ও সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে।

স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যের বরাতে সংস্থাটি বলছে, নতুন অবকাঠামো নির্মাণের উদ্দেশ্যে জানুয়ারিতেই রোহিঙ্গা গ্রামগুলো বুলডোজার দিয়ে পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।

কমপক্ষে ৩টি নিরাপত্তা ঘাঁটি নির্মাণের তথ্য নিশ্চিত হয়েছে সংস্থাটি।

এ ঘটনায় অ্যামনেস্টির এক মুখপাত্র বলেন, রাখাইনের ভূমিতে এই ‘উদ্বেগজনক’ সামরিকীকরণ প্রকল্পের ফলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও গণহত্যার প্রমাণ মুছে যাচ্ছে।

তবে অ্যামনেস্টির এসব অভিযোগ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি মিয়ানমার।

এর দু’দিন আগেই অবশ্য রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন ও গণহত্যার অভিযোগের পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ চেয়েছিলেন মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং তুন।

এই অভিযোগকে ভয়াবহ উল্লেখ করে তা হালকাভাবে নিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ওই সময় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সাংবাদিকদের থাউং তুন বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের বড় অংশ এখনো রাখাইন রাজ্যে বসবাস করছে। যদি সেখানে জাতিগত নিধন চলত তাহলে তাদের সবাইকেই এতদিনে তাড়িয়ে দেয়া হতো।

কিন্তু অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি, তাদের নতুন প্রতিবেদনে যে তথ্য উঠে এসেছে তা আংশিক চিত্র মাত্র। বাস্তবে অবস্থা আরও বেশি ভয়াবহ। এর ফলে বাস্তুহারা প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গার ভবিষ্যৎ সংকটাপন্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে রাখাইনে এখনো বসবাসরত কয়েক লাখ রোহিঙ্গা।

মিয়ানমার-রোহিঙ্গা-অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
এমনই কিছু স্যাটেলাইট ছবি দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো ধ্বংস ও পরে সেখানে সামরিক স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।

৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্তিয়েরস – এমএসএফ) জানিয়েছে, গত ২৫ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর সময়টার মধ্যে অন্তত ৯ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তবে একেবারে কাটছাঁট করা হিসেবেও সংখ্যাটি ৬ হাজার ৭শ’র কম নয়, বরং বেশি। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৭৩০ জন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।মিয়ানমার-রোহিঙ্গা-অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। এখন পর্যন্ত হিসেব অনুসারে বাংলাদেশে আগস্ট থেকে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে একে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধন কর্মসূচি’ বলে বর্ণনা করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।