রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন ও গণহত্যার অভিযোগের পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ চেয়েছেন মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং তুন। এই অভিযোগকে ভয়াবহ উল্লেখ করে তা হালকাভাবে নিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সাংবাদকিদের তিনি এসব কথা বলেন।
থাউং তুন বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের বড় অংশ এখনো রাখাইন রাজ্যে বসবাস করছে। যদি সেখানে জাতিগত নিধন হতো তাহলে তাদের সবাইকে তাড়িয়ে দেয়া হতো।
তিনি বলেন, আমরা প্রায়ই অনেক অভিযোগ শুনি যে মিয়ানমারে জাতিগত নিধন এমনকি গণহত্যাও করা হয়েছে। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি, এটি আমাদের সরকারের নীতি নয় এবং আমরা আপনাদের এ বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারি। এরপরও অভিযোগ করা হলে আমরা এর পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ চাই।
থাউং তুন বলেন, যেসব মুসলিম পালিয়ে গেছে তাদের বেশিরভাগ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির(আরসা) ভয়ে পালিয়ে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, আরসা নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা করতে গ্রামবাসীকে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতো। তারা ভয় দেখানোর জন্য গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার নীতি গ্রহণ করে।
রোহিঙ্গারা বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে আসছে। কিন্তু মিয়ানমার সবসময়ই তাদের বাংলাদেশের নাগরিক বলে আসছে। গত ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বিদ্রোহীদের হামলার সূত্র ধরে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করে দেশটির আইনশৃংখলা বাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী। এ পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ লোক পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম।
স্বয়ং জাতিসংঘ রাখাইনে জাতিগত নিধনের অভিযোগ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সম্ভাব্য প্রমাণ মুছে ফেলতে মিয়ানমার সেখানে থাকা গণকবর গুড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের সেনাবাহিনীও নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণে কালক্ষেপণ করেছে, কিন্তু সব ধরণের নির্যাতনের সঙ্গেই সেনাবাহিনী জড়িত বলে অভিযোগ আছে। উপরন্তু জাতিসংঘের তদন্ত দলকে সেখানে ঢুকতে দেয়নি মিয়ানমার।
এরমধ্যেই সব অভিযোগের পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ চাইলেন থাউং তুন।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে থাউং তুন বলেন, আগে যারা ছিল তাদেরকে আবারো স্বাগত জানানো হবে, যদি তারা জাতির জীবন যাপনের সঙ্গে মিশে যেতে চায়, উদাহরণস্বরূপ বার্মিজ ভাষা শেখার মাধ্যমে।
তিনি আরো বলেন, যারা মিয়ানমারের নাগরিক হতে চায়, তাদেরকে আমরা স্বাগত জানাবো, তবে তা একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব প্রদানের মাধ্যমে নয়।