এক
এই যে পত্র পত্রিকা, রাস্তা জুড়ে বিলবোর্ড কিংবা টেলিভিশনের রঙিন পর্দায় হোটেল রেস্তোরা-শপিং মলের চটকদার বিজ্ঞাপনে আকর্ষণীয় সব টসটসে, তাজা ফলফলাদি আর রসনা উদ্রেককারী খাবার দাবারের ছবি আর বিবরণ দেখে আপনি আমি খাবারের উত্তেজনায় অকাতরে এসব খাবার খেতে ঝাঁপিয়ে পড়ছি সেটা কি ভালো! ভালো মন্দ জানি না তবে এতকাল আমার মতো অনেকেই লোভনীয় খাবার দাবারের ছবি দেখে যে তার প্রতি লোভাতুর হয়ে উঠতেন না – একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন!
তবে আমি এতকাল রসনা জাগানিয়া এসব খাবার দাবারের ছবি, বিবরণকে রসনা উদ্রেককারী , লোভ জাগানিয়া বলেই জানতাম – মানতাম আর বলতামও।
কিন্তু এখন আর সে কথা বলি কি করে!দুই
ফুড পর্নোগ্রাফি!
বলবেন এর মানে কি?
ফুড পর্নোগ্রাফি’র অর্থ হলো অস্বাস্থ্যকর খাবারকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে টেলিভিশন,পত্রিকা বা অন্য মাধ্যমে লোভনীয় ছবির মাধ্যমে পরিবেশন করার মধ্য দিয়ে মানুষের মনে কাম উত্তেজনার মতো খাদ্য উত্তেজনা তৈরি করাকে বোঝায়।
( Food porn is a glamourized visual presentation of cooking or eating in advertisements, infomercials, cooking shows or other visual media. These may be foods of a high fat and calorie content, or exotic dishes that arouse a desire to eat or the glorification of food as a substitute for sex. Food porn often takes the form of food photography with styling that presents food provocatively, in a similar way to glamour photography or pornographic photography.)
ফুড পর্নোগ্রাফি শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ফ্রাঙ্ক চিন তার রেইল রোড স্ট্যার্ন্ডাড টাইমস-এ। আরও পরে,১৯৮৪ সালের দিকে নারীবাদী সমালোচক রোজালিন্ড কোওয়ার্ড তার ফিমেল ডিজায়ার-এর মাধ্যমে একে জনপ্রিয় করে তোলেন।
তিন
বর্তমান বিশ্বের বাঘা বাঘা বিশেষজ্ঞরা দুনিয়া জুড়ে চলছে ফুড পর্নোগ্রাফির জোয়ারকে মানুষের জন্য মারাত্মক বিপর্যয়ের উল্লেখ করে বলছেন, এই ফুড পর্নোগ্রাফি যৌন পর্নোগ্রাফির চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকারক – ঝুঁকিপূর্ণও বটে। তারা বলছেন, যৌন পর্নোগ্রাফি যেমন ব্যক্তি মানুষ অথবা সামাজিকভাবে মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের প্রভূত ক্ষতি করতে পারে ঠিক একইভাবে এই ফুড পর্নোগ্রাফি’র মনোগ্রাহী আকর্ষণে ঝাঁপিয়ে পড়ে গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন এতে। এর ফলে পৃথিবী ব্যাপী কোটি কোটি মানুষ হাজার রকমের রোগ বালাইয়ের শিকার হয়ে, শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে অধঃপতিত হচ্ছে। তারা তাদের মৃত্যুকে তরান্বিত করছে। তারা আরও বলছেন, যৌন পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে পৃথিবীর দেশে দেশে নানা রকম আইন চালু থাকলেও ফুড পর্নোগ্রাফির ব্যাপারে এখনো তেমন কোনো আইন প্রণয়ন হয়নি – তাই এ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্যও নেই। বিষয়টিকে তারা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন।চার
তবে অনেকেই হয়ত বলবেন – এ আবার কেমনতর কথা!
কেউ কেউ প্রশ্নও তুলতে পারেন এই বলে, তাহলে এতকাল যে বাঙালি ভোজন রসিক – শুনে এসেছি তার কি হবে!
যারা এসব বলছেন বা বলবেন তাদের উদ্দেশ্যে বলি, বাঙালি কিন্তু কারণে অকারণে ভীষণ রকমের যুক্তিপ্রবণ – সেকথাও উড়িয়ে দেবেন না। তাহলে?
তথ্য সূত্র / মোহাম্মদ আবুল বাসার লিটন
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)