চট্টগ্রাম থেকে: গত ২-৩ বছরে বারবার চোটে পড়া বোলারদের একজন রুবেল হোসেন। প্রতিবারই ফিটনেসের কঠিন পরীক্ষা দিয়েই দলে আসতে হয় এই পেসারকে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগেও দিলেন এমন পরীক্ষা। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তিনদিনের অনুশীলন ম্যাচে এক ইনিংসেই করলেন ১৭ ওভার। তাতে তিন উইকেট নিয়ে অবশ্য উতরেই গেছেন। বোলিং ও ফিটনেসে রুবেলের এই উন্নতিটা দেখছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও।
‘একটা খেলোয়াড়ের ফিটনেস কিন্তু বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে এসে বোঝা যায়। সেটা বোলার হোক, ব্যাটসম্যান হোক; এমনকি কিপারও। লম্বা সেশনে কে কতটা মাঠে থাকতে পারছে, তাতে স্কিল ও ফিটনেস দেখা যায়। সেই হিসেবে রুবেল যথেষ্ট ভাল ছন্দে আছে। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে দেখছি, ওয়ানডেতে যথেষ্ট ভাল করছে। টেস্ট ক্রিকেটেও ও নিয়মিত হতে পারে।’
ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময় চোয়ালে দরজার আঘাত পেলে দেশে ফিরে অস্ত্রোপচার করাতে হয় রুবেলকে। সুস্থ হয়ে দলের সঙ্গে যখন যোগ দিলেন, ফিটনেস ক্যাম্প ততদিনে শেষ। তবে সব ঘাটতি পুষিয়ে নির্বাচকদের মন জয় করেছেন ফাইটার রুবেল।
পরীক্ষার ম্যাচে গতি, বাউন্স, সুইং সবই দেখিয়েছেন। মুশফিকের দলে খেলা এই পেসার চার স্পেলে করেছেন ওই ১৭ ওভার। সেখানে বাকি দুই পেসার আল-আমিন ও শুভাশীষ রায় মিলে করেছন মাত্র ১৫ ওভার। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেও বেশি বেশি ওভার করানোর বার্তা ছিল টাইগারদের টেস্ট অধিনায়কের প্রতি। রুবেল তাতে সাড়াও দিয়েছেন, পারফরম্যান্সে মন জয় করেছেন সবার। সেটি আসন্ন টেস্ট সিরিজে তার নির্বাচকদের রাডারে থাকার বার্তাই দেয়।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ১৪ সদস্যের দল হবে। তাতে রুবেল থাকবেন কী থাকবেন না সেটি জানা যাবে ১৯ আগস্ট। ঐদিন ঘোষণা করা হবে দুই টেস্টের সিরিজের দল। চূড়ান্ত দল দেওয়ার আগে অবশ্য ক্রিকেটারদের দিতে হবে আরেকটি পরীক্ষা। ১৭ ও ১৮ আগস্ট ঢাকায় নিজেদের মধ্যে হবে আরেকটি দুদিনের ম্যাচ।
মিনহাজুল আবেদিন বললেন, ‘এমুহূর্তে বলা মুশকিল কাকে নেব। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ চ্যালেঞ্জিং হবে। সবশেষ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সাথে আমরা ভাল করেছিলাম। ভাল সিরিজ খেলার জন্য, ইতিবাচক ক্রিকেট খেলার জন্য সেরা দলটাই আমরা দেব।’
রুবেল অবশ্য একটা সময় টেস্ট দলে নিয়মিতই ছিলেন। একাদশে থাকতেন ‘অটোমেটিক চয়েস’ হিসেবে। কিন্তু চোট আর ফিটনেস ঘাটতিতে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। গত নিউজিল্যান্ড সফর থেকে আবারও নিয়মিত হন। তবে ভারত সফরের আগে আবারও পড়েন চোটে। আর শ্রীলঙ্কা সফরের দলে থাকলেও সুযোগ হয়নি একাদশে।
২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলার পর বাদ পড়েন রুবেল। এই পেসার সবশেষ টেস্ট খেলেছেন নিউজিল্যান্ডে, সিরিজের দুটি টেস্টেই খেলেছেন। এবার অপেক্ষা অস্ট্রেলিয়া সিরিজে খেলার। সুযোগের পথে থাকবে প্রতিযোগীতাও।
অনুশীলন ম্যাচে তামিমের দলে খেলা শফিউল ইসলাম করেছেন দুর্দান্ত বোলিং। ১৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। সে তুলনায় তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান করেছেন সাদামাটা বোলিং। এই চার পেসারের মধ্যেই তিনজন থাকতে পারেন মূল স্কোয়াডে। সঙ্গে থাকতে পারে সাকিব আল হাসান ছাড়াও তিন স্পিনার। বাঁহাতি স্পিনে সাকিবের সঙ্গী হবেন তাইজুল ইসলাম। ঘরের মাঠে সবশেষ সিরিজে ইংল্যান্ড বধের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের জায়গাও পাকা। টুকটাক কাজ চালিয়ে দেয়া বোলারদের মধ্যে অফস্পিনারের আধিক্য থাকায় বাড়তি বিশেষজ্ঞ অফস্পিনারের দরকার হচ্ছে না। তাহলে কে হচ্ছেন তৃতীয় স্পিনার? সেটি নিয়ে নান্নু এখনই মুখ খুললেন না। তবে চমক হিসেবে থাকতে পারে লেগস্পিনার তানবীর হায়দারের নাম।
অস্ট্রেলিয়া দল শেষ সময়ে লেগস্পিনার মিচেল সোয়েপসনকে দলে অন্তর্ভুক্ত করেছে। দেখাদেখি বাংলাদেশও রাখতে পারে লেগস্পিনিং অলরাউন্ডার তানবীরকে। সেক্ষেত্রে দলে একজন ব্যাটসম্যান কমিয়ে আনা হবে। সাকিব ছাড়া মূল ব্যাটসম্যান হবে সাতজন।
মিনহাজুল জানালেন পরীক্ষিতরাই সুযোগ পাবেন দলে, ‘টেস্ট ক্রিকেটে কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রশ্নই ওঠে না। এখানে অভিজ্ঞতার যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হবে। গত এক বছর টেস্ট দলে যারা খেলছে, যারা পারফর্ম করেছে, সেখান থেকেই সেরাদের বেছে নেব।’
ঘরের মাঠে স্পিনই মূল শক্তি। সঙ্গে পেসারদের উন্নতিতেও খুশি মিনহাজুল। অজি সিরিজের বোলিং ইউনিট নিয়েও বেশ আশাবাদী তিনি, ‘পেস বোলারদের ক্যাম্পে আমরা আটজনের পুল করে দিয়েছিলাম। অনেক পরিশ্রম করেছে ওরা। পেসাররা ধারাবাহিক আছে। সবাই নিজেদের নিয়ে সজাগ। ভাল ছন্দে আছে। যেটা টেস্ট ক্রিকেটের ক্ষেত্রে সবার আগে জরুরী। সব মিলিয়ে স্পিন ও পেস, দুই বিভাগ নিয়েই আমরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট।’