বডিগার্ডসহ বনানীতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আপণ জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার হোসেনের পুত্র সাফাত আহমেদ ও তার সহযোগী সাদমান সাকিফকে আদালতে হাজির করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
শুক্রবার বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ ও গণসমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন: ‘রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী রিশাকে ধর্ষণ ও খুনের আসামী দর্জি ওবায়দুলকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করা হলো। কিন্তু বনানীতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আপণ জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার হোসেনের পুত্রকে কেন সেভাবে হাজির করা হলো না, সেটাই আমার প্রশ্ন।’
‘খুনি ধর্ষকদের বিরুদ্ধে জাগ্রত বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই কর্মসূচির আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চ। এতে আরও বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী ও ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির, শিক্ষাবার্তা সম্পাদক এএন রাশেদা, ভাস্কর রাশা প্রমুখ।
সুষ্ঠুভাবে বিচার সম্পন্ন করতে প্রয়োজনে আদালতে পাহারা বসানোর ঘোষণা দিয়ে ইমরান আরও বলেন: এখনও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশকে বলবো অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করুন। আদালতে নাকি তালবাহানা হয়। কোন আইনজীবীরা নাকি ধর্ষক-লুটেরাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, আমরা তাদের নাম জানতে চাই। সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন করতে প্রয়োজনে আমরা আদালতে পাহারা বসাবো।
তিনি আরও বলেন, ‘দিলদার হোসেনদের বলে দিতে চাই, আপনারা বডিগার্ড নিয়ে ধর্ষণ করে তার ভিডিও করাবেন, অস্ত্র নিয়ে পাহারা দেওয়াবেন, বডিগার্ড নিয়ে আদালতে হাজিরা দেবেন। কিন্তু জেনে রাখেন জনগণ যখন সাইজ করবে, তখন এই বডিগার্ড, এই পুলিশ কেউ আপনাদেরকে বাঁচাতে পারবে না।’
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয়ে টিএসসি ঘুরে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়।
গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে। পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে না চাইলেও পরে ৬ মে মামলা গ্রহণ করে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সারা দেশ। মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে। অন্য আসামিরা হলেন তার দুই বন্ধু নাঈম আশরাফ ও সাদমান সাকিফ এবং গাড়িচালক ও দেহরক্ষী। মামলার পর বনানী থানার পরিদর্শক মতিন এর তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে আদালতে আবেদন করলেও পরে তদন্তকারী বদলানো হয়।
এই ঘটনায় ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিবৃতি ও কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত নয়টায় দুই আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার তাদেরকে ঢাকায় এনে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। প্রধান আসামিসহ অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।