কানাডায় প্রতি নভেম্বরই চোখে পড়ে টকটকে লালরঙা পপিফুলের ব্যাজ। পহেলা নভেম্বর থেকে এগারই নভেম্বর অনেকের বুকে । শপিং মলগুলোতে সৈনিকের ড্রেস পরা বয়োবৃদ্ধ লোকরা বাক্সের মধ্যে লাল পপিফুলের ব্যাজ নিয়ে তা বিক্রি করে কল্যানকর কাজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। আমার অফিসের রিসিপশনেও আছে কেউ এক ডলার/দু ডলার দিয়ে কিনে। আমার এটা পরতে ভীষণ ইচ্ছে হয়। জানতে ইচ্ছে করে, কেন্ টকটকে লালরঙা পপিফুলের ব্যাজ? জানতে পাই, এগারই নভেম্বর ‘রিমেম্বারেন্স ডে’। মনে করা বা স্মরণ করার দিন।
কানাডায় দিনটি বিশেষ গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়। অস্ট্রেলিয়া, বিৃটেনসহ আরও কয়েকটি কমনওয়েলথভুক্ত দেশ এই দিনটি স্মরণ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের। ফান্স এবং বেলজিয়ামে এগারই নভেম্বর ছুটির দিন। তারাও বিশেষ গুরুত্বের সাথে দিনটি পালন করে। কারণ ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়। যদিও বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় ১৯১৯ সালের ২৮শে জুন ভার্সাই চুক্তির মধ্য দিয়ে। আর আমেরিকানরা রিমেম্বারেন্স ডে না বলে বলতে চায় ভেটারেন্স ডে।
কানাডা-অস্ট্রেলিয়ায় রিমেম্বারেন্স ডে’র প্রতীক লাল পপি বা আফিমের ফুল । কিন্তু ফ্রান্স বেলজিয়ামের প্রতীকটা হচ্ছে নীল রঙ্গের কর্ণফ্লাওয়ার। তবে প্রতীক আর নাম যাই হোক সব দেশের উদ্দেশ্য কিন্তু একই।
১৯১৯ সালের নভেম্বরে ব্রিটেনের রাজা ৫ম জর্জ ১১ ই নভেম্বরকে যুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মরন করার দিন হিসেবে চালু করেন। সেই থেকে ইংরেজী এগার মাসের এগার তারিখ বেলা এগারটায় দুই মিনিট নীরবতা পালন করে শহীদদের স্মরণ করা হয়। লাল পপি ফুলটার প্রচলন হয় মুলত কানাডিয়ান সৈনিক লেঃ কর্নেল জন ম্যাকরে এর কবিতার জন্য। ১৯১৫ সালের বেলজিয়ামের ফ্লান্ডার্স এ নিহত তার সহযোদ্ধার কবরের উপর গজানো লাল পপি ফুল দেখে কবিতা লেখেন। এই লাল ফুল যেন সৈনিকের তাজা রক্ত।
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কানাডার নিহত সৈনিকের সংখ্যাএক লাখ এক হাজার ৫৪৮ জন। যারা দেশের জন্য তাজা রক্ত দিয়েছেন। একুশে ফেব্রুয়ারী ভাষা সৈনিকদের স্মরনে আমরা কালো ব্যাজ পরি। কিন্তুু ত্রিশ লাখ শহীদের স্মরণে আমরা কি ডিসেম্বর মাসে রক্ত লাল পপিফুলের ব্যাজ পরতে পারিনা? সে যাই হোক, এই নভেম্বরে স্মরণ করছি যুদ্ধে নিহত পৃথিবীর সব প্রান্তে সব মুক্তিকামী শহীদদের। এই এগারই নভেম্বরইতো একটি স্বাধীন দেশের জন্য সংগ্রাম করতে করতে মারা গেলেন প্যালাস্টাইনী অবিসংবাদিত নেতা ইয়াস্সির আরাফাত। অন্যদিকে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকুলে প্রলংকরী ঘুর্ণিঝড়ে নিহত হন দশ লাখ মানুষ।
লালরঙা পপিফুলের প্রতীকটা হয়ে উঠুক একটি শান্তিময়, নিরাপদ পৃথিবীর আহ্বাবান। এটাই কামনা।