শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করবেন না বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। আসন্ন
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না সবসময় মিডিয়ায় সরব থাকা বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
১২ নভেম্বর ২০১৮ সাল থেকে হাজার হাজার সংসদ সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর মাঝে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে গেলেও তিনি নিজে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।
কেন নির্বাচন করছেন না এর জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো না আমি। এটি আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। দলীয় কোনো বিষয় নয়।
বিএনপির এই নেতা মনে করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও ১৪ দল নেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারেনা। তবে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এতে তিনি অংশ নিতেন বলে জানান।
রুহুল কবির রিজভী সবসময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থাকা বিএনপির একজন ত্যাগী ও নিবেদিত প্রাণ নেতা হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত। ওয়ান ইলেভেনের সময় বিএনপি যখন প্রায় নেতৃত্বহীন, সংস্কারপন্থীদের সংস্কারবাদী তৎপরতায় বিএনপি যখন ভেঙে যাওয়ার পথে ছিল ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ছিল কারাবন্দি তখন মিডিয়ার সামনে নিয়মিত সরব থেকে বিএনপিকে চাঙ্গা রাখেতেন তিনি। সারাদেশের মানুষ তাকে বিএনপির মুখপাত্র হিসাবেই জানে৷
ছাত্রজীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ রাকসুর নির্বাচিত ভিপি ছিলেন রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হতে পরে নির্বাচিত সভাপতিও হয়েছিলেন তিনি৷
বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত রিজভী আহমেদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অত্যন্ত বিশ্বস্তজন বলে জানা যায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ নেতা।
উৎসব মুখর পরিবেশে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ও বিভিন্ন স্তরের জেলা নেতৃবৃন্দও। এমনকি কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষেও তিন তিনটি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে।
ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া ৭ আসনের মনোনয়ন ফরম কেনা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য। তবে তারেক রহমানের জন্য কোনো মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়নি।
বর্তমানে তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন৷ সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়েছে, বিএনপির মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিনেও উপচে পড়া ভিড়৷ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলছেন, বেগম জিয়ার মুক্তি আর তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
মনোনয়ন নিতে আসা নেতাকর্মীরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষেও জড়িয়ে গেল সেদিন। নির্বাচন শুরু হতে না হতেই কেন এই সংঘাত? নির্বাচনের ফরম কিনতে আসাটাকে বিশাল শোডাউনে রূপান্তরিত করার কি প্রয়োজন ছিল? মির্জা আব্বাস কার ইন্ধনে ও কি উদ্দেশ্যে এমনটি করল? রবিবার হতে শুরু হয়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ।
এর আগে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১২ নভেম্বর থেকে শুরু হয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদানের কার্যক্রম। ঢাকা ৯ এর মির্জা আব্বাস তার দলবল নিয়ে ঢাকা ৮ এর মনোনয়ন ফরম নিতে এলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
সঙ্গত কারণেই তিনি মনোনয়ন চাইবেন কিশোরগঞ্জে তার নিজ এলাকা অথবা ঢাকায় বসবাসরত এলাকা থেকে এমনটিই কি প্রত্যাশিত ছিলোনা? কার ইন্ধনে ও কি উদ্দেশ্যে তিনি এমন শোডাউন সম্বলিত মনোনয়ন ফরম কিনতে এসে এই সংঘর্ষের সৃষ্টি করলেন? অথচ এই দিনই তাদের নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার কথা ছিল নির্বাচন পেছানোর দাবিতে।
তারা নির্বাচন পেছানোর দাবিতে সোচ্চার,তবে কেন ছিল এই তাড়াহুড়ো? নির্ধারিত সময়ের আগে থেকেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ফরম জমা দিতে আসতে থাকেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
এই সংঘর্ষের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হতে না হতেই বিএনপির সংহিসতাও শুরু হয়ে গেছে। ঠিক যেভাবে তারা ২০১৩ ও ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে ছিল।
বিএনপিকে কোনোদিক থেকেই আর রাজনৈতিক দল বলা যায় না, তারা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন উল্লেখ করে জয় আরো লিখেন, কানাডিয়ান ফেডারেল আদালতও বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলেছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে দানবকে পরাজিত করবো। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোট যুদ্ধে নামতে হবে। খালেদা জিয়া ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা বলেছেন। আমরা সবার কাছেই খালেদা জিয়ার বার্তা নিয়ে গিয়েছি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমরা আর নির্বাচন বয়কট করবো না। ১০ নম্বর করলেও না। কারণ একবার নির্বাচন বয়কট করে জাতিকে খেসারত দিতে হচ্ছে। এবার নির্বাচনে প্রত্যেক ঘরে ঘরে গিয়ে লোকজনকে বুঝাতে হবে।
নির্বাচন পাহাড়া দিতে হবে। সবাইকে সংঘবদ্ধ এবং সচেতন হতেও আহ্বান জানান তিনি৷ অপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন,ধানের শীষের জোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে।
বিএনপির এই প্রভাবশালী স্থায়ী কমিটির সদস্য আরও বলেছেন, এবার সবাইকে লড়াই করে ভোট দিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে পরাজিত হবে।
রাজনৈতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মওদুদ বলেন, এ নির্বাচনে একটি ঐক্য প্রয়োজন ছিল। ড. কামাল হোসেনকে বলেছি, আপনি এগিয়ে আসুন। ১৬ কোটি মানুষের নেতৃত্ব দিন। এরপর ড. কামাল আসলেন, নেতৃত্ব দিলেন। তাই এই নির্বাচনে এলাম।
নয়া পল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনোনয়নের ফরম সংগ্রহ করতে এসে সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ও পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে৷
এ সংক্রান্ত মামলার অভিযোগে বলা হয়, বুধবার বেলা ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে নয়াপল্টনস্থ ভিআইপি রোডে আসামিরা বিএনপির পার্টি অফিস থেকে লাঠি-সোটা নিয়ে রাস্তায় দাঙ্গা করে পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা কয়েকটি ককটেলও নিক্ষেপ করে। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ দুটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এতে পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তা, দুজন আনসার সদস্যসহ ২৩ পুলিশ সদস্য আহত হন।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় বাঁশ হাতে দেখা গিয়েছিল নিপুণ রায় চৌধুরীকে।কে এই নিপুন রায় চৌধুরী?তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সংলাপ বর্জন করা উগ্রপন্থী জাসদ থেকে উগ্রপন্থী বিএনপি নেতায় রূপান্তরিত হওয়া গয়েশ্বর রায়ের পুত্রবধূ৷
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে হেলমেট পরে পুলিশের গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে কালো শার্টের বোতাম খুলে উল্লাস করা সোহাগ ভু্ইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোহাগ শাহজাহানপুর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ট জন। তিনি জামার বোতাম খুলে পুলিশের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলেছেন,আমাকে গুলি করো,গুলি করো। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সোহাগকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারও করেছে৷ সোহাগ কার ঈশারায় ও কেন এমন করল?
সোহাগের বাবা জানিয়েছেন, গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল সোহাগকে গ্রেপ্তার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গেছে। বিএনপি নেতাদেরই বলতে শোনা যায়, ব্যক্তির চেয়ে দল বড় ও দলের চেয়ে দেশ বড়। তবে বিএনপি যে দলগত ভাবে, জোটগত ভাবে ও ফ্রন্ট গত ভাবে নির্বাচনমুখী হল ও বিএনপি নেতা রিজভী আহমেদ যে নির্বাচন বর্জন করল এর দলীয় ব্যাখ্যা কি?
সব নেতারা সংলাপে গেল গয়েশ্বরের এই না যাওয়ার ব্যাখ্যা কি? একদিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গায়েবী মামলা প্রত্যাহারের দাবি ও নির্বাচন কমিশনে ২ হাজার ২টি মামলার তালিকা দেয়া আর অন্যদিকে নয়া পল্টনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়ে নতুন মামলার ক্ষেত্র সৃষ্টি করা,এর কি ব্যাখ্যা দেবে বিএনপি? মির্জা আব্বাস কখনও ঢাকা ৮ হতে নির্বাচন করেননি তিনি এই এলাকার অধিবাসীও নন৷ তিনি এবারও শেষ মুহূর্তে ঢাকা ৮ এর প্রার্থী থাকবেন কিনা তারও ঠিক নেই। তবে তিনি কী উদ্দেশ্যে ঢাকা ৮ এর মনোনয়ন ফরম কিনতে এসে এই সংঘাতের সৃষ্টি করে আরও মামলার সংখ্যা বাড়াতে গেলেন?
নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় করা ৩ মামলায় আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। আগাম জামিন পেয়েছেনও তিনি৷ কিন্তু মামলাতো বাড়লো।
রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের উপর হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগের তিনটি মামলা করা হয়। পুলিশের দায়ের করা তিনটি মামলার প্রতিটিতেই হুকুমের আসামি করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির সভাপতি নবীউল্লাহ নবী, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কফিল উদ্দিনকে৷
রিজভীর নির্বাচন বর্জন,গয়েশ্বর রায়ের সংলাপ বর্জন ও মীর্জা আব্বাসের মনোনয়ন ফরম কিনতে এসে সংঘাতের উস্কানি একসূত্রে গাঁথা হতে পারেনা কি? তবে কি বিএনপি দ্বিধাবিভক্ত এক পক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে ও অন্যপক্ষ নির্বাচনকে বানচালকরনের পক্ষে?
রিজভী,গয়েশ্বর,আব্বাস কার নির্দেশ পালনে সক্রিয়? রিজভী দলীয়, জোটগত, ফ্রন্টগত নির্দেশ অমান্য করে চলেছেন৷ গয়েশ্বর এইতো সেদিন বলেছিলেন সরকার পতনের জন্য প্রয়োজনে শয়তানের সাথেও জোট করবেন তিনি। এমন আত্মস্বীকৃত শয়তান বান্ধব আর কে কে আছেন? নয়া পল্টনে গয়েশ্বর রায়ের পুত্রবধূ নিপুন চৌধুরীকে বাঁশ হাতে শয়তান কর্মের সাথী হতে দেখা গেছে৷ ঢাকার খিলগাঁও সবুজবাগ থেকে বিগত দিনে এমপি হযেছিলেন মীর্জা আব্বাস৷ এবার তিনি হঠাৎ কেন মনোনয়ন কিনলেন ঢাকার মতিঝিল-পল্টন-কমলাপুরএলাকা হতে? মনোনয়ন ফরম কিনতে আসাকে নির্বাচনী মিছিলে রূপ দেয়া কি অনিবার্য ছিল? তিনি কেন এত হাঁকডাক করে এলেন ও সংঘর্ষ বাঁধালেন? আর রিজভী নির্বাচন বর্জন করাকে তার ব্যক্তিগত মত বলে অভিহিত করছেন৷ তার ব্যক্তিগত মত কি দলীয় মতের উর্ধ্বে?
তাহলে যে তারা বলেন,ব্যক্তির চেয়ে দল বড় ও দলের চেয়ে দেশ বড়। এটা কি কেবলই কথার কথা?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)