গ্রিন লাইন পরিবহনের বাস চাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও ২০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রাসেলের ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে জারি করা রুলের চুড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দেন। আগামি ৩ মাসের মধ্যে এককালীন এই টাকা দিতে বলা হয়েছে। রায় ঘোষনার আগে গ্রিন লাইনের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয় যে, তারা রাসেলের ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও ২০ লাখ টাকা দেবেন।
আজ আদালতে গ্রিন লাইনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও এম হারুন অর রশিদ। রাসেলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা ও জহির উদ্দিন লিমন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাসার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুল আলম।
এর আগে হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ রাসেলের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লাখ টাকা দেন। এছাড়া চিকিৎসা বাবদ আরও ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা পরিশোধ করে।
২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়িতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসের চাপায় এক যুবকের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই যুবককে চাপা দেওয়ার পর গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসটি এবং তার চালককে পুলিশ আটক করে। পরে পুলিশ জানায়, মো. রাসেল (২৫) নামের ওই যুবক একটি প্রাইভেট কার চালাচ্ছিলেন। বাসটি তার গাড়িকে ধাক্কা দিলে প্রতিবাদ জানাতে বাস থামাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাস চালক তার ওপর দিয়েই বাস উঠিয়ে দেন। এতে রাসেলের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ির বাসিন্দা রাসেল রাজধানীর আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ে বাস করতেন এবং স্থানীয় একটি ‘রেন্ট-এ-কার’ প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেট কার চালাতেন। রাসেলের পা হারানোর ওই ঘটনার পর গত বছরের ১৪ মে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃতি। সেই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণের কোটি টাকার রুলসহ আদেশ দেন। পরবর্তীতে গত বছরের ১২ মার্চ পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে অন্তরবর্তীকালীন আদেশ দেন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। সেই সাথে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে রাসেলের চিকিৎসার জন্য যা খরচ তা দিতে বলা হয়।
এরপর গত বছরের ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারের হাতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় গ্রিন লাইন বাস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রাসেলের চিকিৎসা বাবদ আরো সাড়ে তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে আদালতকে জানান গ্রিন লাইনের আইনজীবী। পরবর্তীতে রাসেলকে আরো ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়।
পরবর্তীতে হাইকোর্ট রাসেলকে প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা করে কিস্তিতে ক্ষতিপূরণ আদেশের টাকা দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু গ্রিন লাইনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কিস্তিতে ক্ষতিপূরণ দেয়া সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সেই সাথে আদালত ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত রুল হাইকোর্টকে নিস্পত্তির নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী রাসেলের ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে জারি করা রুলের চুড়ান্ত শুনানি শেষ আজ রায় দিলেন হাইকোর্ট।