চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় আদালতে সংগ্রাম সম্পাদক

যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশের জেরে ‘দৈনিক সংগ্রাম’ এর সম্পাদক আবুল আসাদকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশীদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। একটি রাষ্ট্রদ্রোহীতা মামলা অপরটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা। গতকাল রাতে তাকে পু্লিশি হেফাজতে এনে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করি। মোহাম্মদ আফজাল নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় একটি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা (নং-২৪) দায়ের করেন। ওই মামলায় আবুল আসাদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব বিজয় তালুকদার চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান: আবুল আসাদকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি ধারায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশের জেরে শুক্রবার বিকেল থেকে রাজধানীর হাতিরঝিলে দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের’ ব্যানারে অসংখ্য মানুষ।

সন্ধ্যার দিকে কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে সামনে অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধরা। এ সময় তারা পত্রিকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং সম্পাদককে গ্রেপ্তারসহ পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধের দাবি জানায়।

এ অবস্থায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে সংগ্রামের কার্যালয় থেকে সম্পাদক আবুল আসাদকে হেফাজতে নেয় হাতিরঝিল থানা পুলিশ।

সে সময় পুলিশ জানায়: আবুল আসাদকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে কার্যালয়ের ভেতরে বিক্ষুব্ধরা ভাংচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পত্রিকাটির সংবাদিকরা।

এরপর সম্পাদক আবুল আসাদকে তার রুমের বাইরে এনে টিভি সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। তখন তিনি ‘শহীদ’ শব্দটি ব্যবহারের জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চান।

নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন হারানো রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত এ জাতীয় দৈনিকে শুক্রবার প্রকাশিত পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘শহীদ কাদের মোল্লার ৬ষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকী আজ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়: আজ ১২ ডিসেম্বর শহীদ কাদের মোল্লার ৬ষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করে সরকার। জাতিসংঘের মহাসচিব থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, মানবাধিকার সংগঠনের অনুরোধ উপেক্ষা করেই ফাঁসি কার্যকর করা হয়…

দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদন জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে চলে বিস্তর সমালোচনা। এই প্রতিবেদনকে ধৃষ্টতা বলেও আখ্যায়িত করেছেন অনেকে।

এমন প্রেক্ষাপটে চ্যানেল আই অনলাইনকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বলেন: এটা অবশ্যই গর্হিত এবং রাষ্ট্রবিরোধী সংবাদ। আমরা এই সংবাদ প্রত্যাখ্যান করি, এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এমন সংবাদের তীব্র বিরোধিতা করছি। দৈনিক সংগ্রামকে এর দায় নিতে হবে এবং জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম ফাঁসি কার্যকর করা হয় রাজাকার কাদের মোল্লার। কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জল্লাদ শাজাহান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল সেদিন ফাঁসি কার্যকর করে।

এর আগে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজাকার কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২। রায়ের পর সাধারণ মানুষ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা সেদিন বিকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে থাকে। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শাহবাগ চত্বরে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ।

গণদাবির মুখে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটি) আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনালস) সংশোধন বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই সংশোধনের ফলে ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল করার সুযোগ তৈরি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাণদণ্ড পায় একাত্তরের এই ঘাতক। মিরপুরের কসাই খ্যাত দণ্ডপ্রাপ্ত সেই কাদের মোল্লাকে ৬ বছর পরও ‘শহীদ’ বলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির আর সাবেক ছাত্রসংঘের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম।