পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি বলছে, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটিতে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় সেই দেশের এক রুমমেটের কাছে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির হাতেখড়ি হয় শরিফুল ইসলামের।
যাকে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির মূল হোতা হিসেবে দাবি করে সিআইডি বলছে, শরিফুল বিশেষ স্কিমিং ডিভাইস ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ড প্রতারণা করতো।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মিরপুর থেকে শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট।
এ সময় একটি ল্যাপটপ, ১ হাজার ৪০০টি ক্লোন কার্ড, একটি ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ড রিডার ও রাইটার, তিনটি পজ্ মেশিন, সচল ডিজিটাল হাতঘড়ি (গ্রাহকদের তথ্য চুরিতে ব্যবহৃত), দুটি মিনি কার্ড রিডার ডিভাইস, ১৪টি পাসপোর্ট ৮টি মোবাইল ফোন সেট, একটি ডাচ বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস ক্রেডিট কার্ড, ৩টি এনআইডি কার্ড, একটি পরচুলা ও একটি কালো রংয়ের সানগ্লাস জব্দ করা হয়।
বুধবার দুপুরে সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন।
মোল্লা নজরুল বলেন, চলতি বছরের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংঘটিত ৫টি ( ব্রাক ব্যাংক, সিটিব্যাংক, ইবিএল ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া) ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি ঘটনাটি অর্গানাইজড ক্রাইম, সিআইডির নজরে আসে।
তদন্তে জানা যায় যে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র ব্যাংকের গ্রাহকরা যখন বিভিন্ন সুপার শপ ও ডিপার্টমেন্ট স্টোরে যান, তখন এই চক্রটি সুকৌশলে গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করে এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি করে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, শরিফুলের গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরের হেমায়েতপুর। তিনি হাট বোয়ালীয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে ২০০১ সালে এসএসসি এবং গাঙনী ডিগ্রী কলেজ হতে ২০০৩ সালে এইচএসসি পাস করে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটিতে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর তিন বছর মেয়াদী ডিগ্রী নিয়ে ২০১০ সালে বাংলাদেশে ফেরত আসে।
‘ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় তার রাশিয়ান রুমমেট ইভানোভিচ এর কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড প্রতারণার কৌশল শিখে আসে।’
তিনি আরও জানান, দেশে আসার পরপরই সে কার্ড জালিয়াতি শুরু করে। ২০১৩ সালে এই সংক্রান্তে দুইটি মামলা হয় এবং সেই মামলায় প্রতারক শরিফুল ১৮ মাস জেলে থাকে। এরপর সে কিছুদিন স্টুডেন্ট কন্সালটেন্সি ফার্ম খুলে, সেখানে তেমন সুবিধা করতে না পেরে রুমমেটের কাছ থেকে শিখা কৌশল আবারও কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
শরিফুলের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান সিআইডির এ বিশেষ পুলিশ সুপার।
মোল্লা নজরুল বলেন, প্রতারক শরিফুল ইসলাম একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সুপার শপের বনানী শাখায় কাজ করার সময়, নিজের হাতঘড়িতে সংযুক্ত বিশেষ স্কিমিং মিনি কার্ড রিডারের মাধ্যমেগ্রাহকের কার্ডের অভ্যন্তরীণ তথ্যাবলি নিয়ে নিতো।
‘তারপর গ্রাহক যখন পিন নাম্বার দিতো তখন কৌশলে পিন নাম্বার দেখে নিয়ে বিল পরিশোধের পর আবার গ্রাহকের যাবার পর রি-প্রিন্ট দিয়ে কপিটা সংগ্রহ করে তার পিছনে পিন নাম্বারটি লিখে রাখতো।’
‘পরে সে তার বাসায় গিয়ে ল্যাপটপ এবং ডিভাইসের মাধ্যমে কাস্টমারের তথ্যাবলি ভার্জিন কার্ড বা খালি কার্ডে স্থাপন করে ক্লোন এটিএম কার্ড বানিয়ে কোনো একটি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিতো। বুথে টাকা তোলার সময় সিসি ক্যামেরায় যাতে তাকে চেনা না যায় সে জন্য পরচুলা এবং চশমা ব্যবহার করতো।’
তিনি বলেন, স্বনামধন্য সুপার শপগুলোতে চাকরি করলেও তার মূল পেশা ছিল ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি। এই জালিয়াতি মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ টাকায় সে বিলাসবহুল জীবন যাপন করতো।
‘সে ব্যক্তিগত চলাচলের জন্য টয়োটা এলিয়ন মডেলের গাড়ি ব্যবহার করে এবং তার ব্যাংক একাউন্ট পর্যালোচনা করে এ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে।’