পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে সবুজে ঘেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাজশাহী নগরী। বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা দ্রুত কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বে পরিচিতি অর্জন করেছে রাজশাহী শহর। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এখন উন্নয়নের স্রোতধারায় বদলে যাওয়া নগরী। অনেকেই এই নগরীকে গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি ও আলোকিত নগরী হিসেবে দেখতে আসেন।
স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে দেশের সব শহরের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে রাজশাহী। নগর উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও জিরো সয়েল প্রকল্প গ্রহণের কারণেই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে একক সর্ববৃহৎ ২ হাজার ৯৩১ কোটি ৬২ লাখ টাকার রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভায় ২ হাজার ৯৩১ কোটি ৬২ লাখ খরচে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বাম তীরের স্থাপনাসমূহ নদী ভাঙন হতে রক্ষা’ প্রকল্প এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৭২২ কোটি ২৪ লাখ টাকা খরচে ‘রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বাম তীরের স্থানসমূহ নদী ভাঙন হতে রক্ষা’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
২০০৮ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনকে নির্বাচিত করে রাজশাহী মহানগরবাসীর সেবার দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। তিনি রাজশাহীবাসীর সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে রাজশাহী মহানগরীকে একটি উন্নত, পরিচ্ছন্ন, শান্তি ও স্বস্তির আবাসভূমি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এর ফলে রাজশাহী দেশের একটি পরিচ্ছন্ন মডেল সিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আবারও খায়রুজ্জামান লিটনকে নির্বাচিত করে রাজশাহী নগরবাসী সেবা করার দায়িত্ব তুলে দেয়।
এবারেও উন্নয়ন কাজ ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। রাজশাহীকে মেগাসিটি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণসহ মাস্টার প্লান তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।
এছাড়াও চীন, ভারত, কানাডা, নরওয়ে এবং ইন্দোনেশিয়া সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় রাজশাহীর যোগাযোগ ব্যবস্থা, নদী খনন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, নগরায়ন, কৃষিজ এবং ফলজ দ্রব্যাদি প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি উন্নয়ন সাধন করা হবে। এসব ক্ষেত্রে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করা হবে।
রাজশাহী মহানগর উন্নয়নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, জনসাধারণের বহুমুখী চাহিদা অনুযায়ী মহানগরীর বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সময়পোযোগী নাগরিক সেবা দ্রুত প্রদান, ক্রমবর্ধমান নগরায়নের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট যানজট নিরসনকল্পে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ এবং বর্তমান সড়কসমূহ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
‘একটি অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় চলমান অন্যান্য সড়ক ও সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের প্রান্তিক এলাকায় জনসাধারণের নিবিঘ্নে চলাচলে ১৫ কিলোমিটার লেন রাস্তা নির্মাণ এবং পানি নিষ্কাশনে ১৮ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ করা হবে। চলমান একটি সড়ক নির্মাণ কাজে ১৭০ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। জনসাধারণের নিরাপদ চলাচলে সকল সড়ক প্রশস্তকরণসহ দুইপাশে ফুটপাত মিডিয়ান ও সাইকেল লেন নির্মাণ করা হবে।’
‘নগরীর পরিবেশ রক্ষার্থে নর্দমা নির্মাণ, বর্জ্য সংগ্রহ, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন কভারেজ বৃদ্ধি করা হবে। রাত্রিকালীন জনসাধারণের নিরাপদ চলাচলে সকল রাস্তায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী আধুনিক সড়ক বাতি সংযোজন করা হবে। অনলাইনের মাধ্যমে টাক্স আদায় ও অন্যান্য সেবা প্রদানে ই-গভর্নমেন্ট সিস্টেম চালুকরণ, অফিসের কাজ দ্রুততর করার জন্য ই-ফাইলিং চালুকরণ করে আধুনিক নাগরিক সেবা প্রদান সম্প্রসারণ করা হবে।’
হলফ করেই বলা যায় রাজশাহী সিটিতে মানুষের চাওয়া পাওয়ার প্রত্যাশার জায়গা পূরণ হচ্ছে। সাধারণত আমরা সমস্যার আদলে যখন প্রতিশ্রুতি দেখি তখন সেটার বাস্তবায়ন দেখি না। কিন্তু রাজশাহীর ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখা গিয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে বদলে গছে রাজশাহী নগরী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়নের ধারার সাথে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে পড়া বিভাগ, শহর, জেলা, উপজেলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)