চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে ভবিষ্যতের উপর ছেড়ে রেখেছেন ভাগ্যে বিশ্বাসী তারিন

জন্মসূত্রে বড় এক রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। বিয়ের পর রাজনৈতিক পরিবারটি আরো বড়। কিন্তু, এখনই রাজনীতিতে যোগ দেয়ার ব্যাপারে কিছু ভাবছেন না তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার নাতনি তারিন হোসেন।

তারপরও তার সঙ্গে আলাপচারিতায় বারবারই যে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ এসেছে তার কারণ পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য। দাদা মানিক মিয়া শুধু রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত ছিলেন না, এদেশের রাজনৈতিক গতিধারা পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বাবা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান, এখন মন্ত্রী। মা তাসমিমা হোসেনও এমপি ছিলেন।

আর নিক্সন চৌধুরী, এমপি’র সঙ্গে বিয়ের সূত্রে রাজনৈতিক পরিবারটি আরো বড় হওয়ার কারণে স্বভাবতই তার কাছে প্রশ্ন ছিল: রাজনীতিতে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছেন?

সরাসরি উত্তর না দিয়ে প্রেক্ষাপটটা তিনি তুলে ধরেছেন এভাবে: ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি বাবা রাজনীতি করেন। গ্রামে আমাদের এলাকার সঙ্গে আমাদের বন্ধনটা অনেক দৃঢ়। রাজনীতির মাঝেই বড় হয়েছি। দেশপ্রেম আমাদের রক্তে। এটাই আমাদের জীবন।

সঙ্গে তিনি এও বলেন: বাবা সবসময়ই আমাদের বলেছেন, জীবনে কখনো কোনো কিছু নিয়ে প্ল্যান করবে না। যা হওয়ার তা হবে। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। তাই আমিও মনে করি, রাজনীতি নিয়ে আমার আলাদা করে পরিকল্পনা করার কিছু নেই। যা হচ্ছে হচ্ছেই, আর যা হওয়ার তা ঠিক সময়ে এমনিই হবে।’

চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাজনীতিতে নিজের ভবিষ্যৎ ছাড়াও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন জাতীয় দৈনিক দৈনিক ইত্তেফাক-এর প্রকাশক ও কার্যনির্বাহী পরিচালক তারিন হোসেন।

বাংলাদেশের রাজনীতি: একটু সময় দেয়ার পরামর্শ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তারিন বলেন: সব দেশের রাজনীতির একটি নিজস্ব প্রক্রিয়া আছে। বাংলাদেশ খুবই নবীন একটি দেশ। তার বয়স অনেক কম। এটা খুবই শিশুসুলভ চিন্তা হয়ে যাবে যদি আমরা এই অল্প সময়েই ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে ভাবি ‘আমরা এত পিছিয়ে কেন? কিংবা, প্রতিবেশী ভারতও তো অনেক এগিয়ে গেছে’।

‘আমি বলব, একটু সময় দিন। আমরা সময়ের তুলনায় অনেক এগিয়ে আছি। আরও এগিয়ে যাব। আমরা এখনো ছোট ছোট কদম নিচ্ছি শিশুর মতোন, ধীরে ধীরে বড় হচ্ছি। যখন বড় হব তখন আরও অনেক উন্নয়ন দেখব। কিন্তু সেখানে পৌঁছুতে আমাদের দেশের নেতাদের একটু সময় দিতে হবে, তাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে, একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’

নারীর ক্ষমতায়ন
নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে তারিন হোসেন বলেন, দেশের অবস্থান থেকে বলা যায়, ‘বাংলাদেশে আমাদের জন্য নারীর ক্ষমতায়নের অনেক রোল মডেল রয়েছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলুন, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা… মন্ত্রিসভায়ও নারীর প্রতিনিধিত্ব অনেক ভালো বলে আমি মনে করি।’

‘সুতরাং আমার মনে হয় না এখানে কোনো ‘হ্যাঁ-না’ দ্বিধাবোধ থাকার সুযোগ রয়েছে। এসব দিক থেকে আমি অবশ্যই বলব, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বাংলাদেশ দেশ হিসেবে নিশ্চয়ই একটি আদর্শ।’

রাজনীতির বাইরেও নারীর যে ইতিবাচক অবস্থান
রাজনীতির বাইরের যে জায়গা সেদিকেও চোখ দিতে বলেন তারিন। ‘আমরা যারা অন্যান্য জায়গায় কাজ করি, যেমন: পত্রিকায়, বিভিন্ন সংগঠনে, শিল্প প্রতিষ্ঠানে, বিভিন্ন চেম্বার অব কমার্সের সদস্য, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা – সেখানেও নারীর যথেষ্ট উপস্থিতি রয়েছে।’

গর্বের সঙ্গেই তরুণ প্রজন্মের এ প্রতিনিধি বলেন: আমরা বলতে পারি বাংলাদেশ এ দিক থেকে অন্যান্য অনেক দেশের সঙ্গে সমপর্যায়ে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানেও আছে। নারীর ক্ষমতায়নের পরিসর কিন্তু তৃণমূল পর্যায় থেকেই আছে। তৈরি পোশাক ক্ষেত্র থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ – এসব জায়গায় নারীরাই কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

‘তবে নারীর ক্ষমতায়ন প্রত্যেক নারীর ওপরও নির্ভর করে,’ উল্লেখ করে তারিন হোসেন বলেন: সে নিজেকে কেমন করে সামলাচ্ছে, কেমন করে নিজেকে উপস্থাপন করছে, পরিবেশের সঙ্গে কীভাবে খাপ খাওয়াচ্ছে বা সামনে আসা সুযোগগুলোকে কীভাবে কাজে লাগাচ্ছে; এসবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ তৃণমূল থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সুযোগটুকু রয়েছে। নারীকে তা নিজের মতো করে বের করে নিতে হবে।

নারীর ক্ষমতায়ন ও গণমাধ্যম
নারীর ক্ষমতায়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী পরিচালক বলেন: অন্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারটা জানি না। তবে নিজের পত্রিকা সম্পর্কে বলতে পারি, আমাদের মহিলা অঙ্গন নামে একটি সাপ্তাহিক পাতা রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের নারীরা কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা তুলে ধরি অন্যদের প্রেরণা যোগানোর জন্য।

‘এছাড়াও শুধু নারীদের জন্য আমাদের ম্যাগাজিন ‘অনন্যা’ রয়েছে। আমি নিজেই একটি গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে নারীর সাফল্যগাথা প্রচারের সঙ্গে অনেক বেশি জড়িত। আমার মনে হয়, সার্বিকভাবে গণমাধ্যম নারীর ক্ষমতায়নকে বেশ ভালো গুরুত্ব দিচ্ছে, আমার কোনো অভিযোগ নেই।’

প্রতিষ্ঠান প্রধান নারী হলে এখন সবাই গর্ব বোধ করে
‘আন্তর্জাতিক পরিসরে সফল নারীদের উপস্থিতি আমরা অনেক দেখি,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন: মনে হয় বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোও এখন বুঝে গেছে সেখানে ক্ষমতাশীল নারীর রূপায়ন দরকার। তারা যেমন আগে নারীদের সংবাদ সামনে দিত না, লজ্জা পেত বা পুরুষেরা সেটা পছন্দ করত না, সেই মানসিকতাটা আর বাংলাদেশে নেই।

এখন অনেকেই তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান একজন নারী হলে তা গর্ব করে সবাইকে জানান, মন্তব্য করে তিনি বলেন: আমি যে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোতে কাজ করি, আমার বিশ্বাস তারাও এটা গর্বের সঙ্গে সবাইকে দেখাতে চান যে তাদের দলে নারীও ভালো অবস্থানে রয়েছে, তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষে ভারসাম্যটা প্রকাশের চেষ্টা করেন। এতে তাদের সম্পর্কে সমাজে বেশ ভালো একটা ধারণা তৈরি হয়।

‘এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক পরিবর্তন।’

ডিজিটাল গণমাধ্যম
তবে এক্ষেত্রে ডিজিটাল মিডিয়াকে নিয়ে কিছুটা হলেও দুঃখ প্রকাশ করেন তারিন।

তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই অনেক পুরনো একটি পত্রিকার অনলাইন সেকশনের দায়িত্বে আছি। সেখানে অনেক কম নারী কাজ করেন। সাক্ষাৎকার নেয়ার সময়ও আমি দেখি অনেক কম সংখ্যক মহিলা আসেন। এই সেক্টরে আমি আরও নারীর অংশগ্রহণ দেখতে চাই।

‘বাইরে গেলে অনেক নারী সাংবাদিক, ক্যামেরা পার্সন, ফটোগ্রাফার দেখি। কিন্তু গণমাধ্যমে আমার মতো অবস্থানেও আমি সম্ভবত দেশে একাই। ডিজিটাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে আমার মনে হয় নারীর অংশগ্রহণকে আরও প্রমোট করা উচিৎ।’

ডিজিটাল মিডিয়াগুলো খুব দ্রুত বেড়ে উঠছে উল্লেখ করে তারিন হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাগুলোর ঘটনায় সংবাদ সরবরাহে এরা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। চিরাচরিত গণমাধ্যমে আসার আগেই সামাজিক যোগাযোগ ও অনলাইন মাধ্যমগুলো পাঠকদের কাছে সংবাদ পৌঁছে দিয়েছে। এখন রিকশাচালক থেকে শুরু করে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে। ইন্টারনেটও বেশ সহজলভ্য।

অনলাইনে ভুয়া সংবাদ
তবে ‘আজগুবি’ ধরনের কিছু অনলাইন সংবাদমাধ্যম এবং ফেসবুক-টুইটারে শেয়ার হওয়া কিছু ভুয়া সংবাদ নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ আছে তার।

এ প্রসঙ্গে তারিন বলেন, ‘একে আমি নেতিবাচক না বলে ডিজিটাল মিডিয়ার বহু ফলাফলের একটি বলতে চাই। প্রত্যেক পরিবর্তনেরই নানা ধরণের ফলাফল ও প্রভাব থাকে। এক্ষেত্রে পাঠককেই সচেতন হতে হবে কোন মাধ্যমটি বিশ্বাসযোগ্য আর কোনটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।’