আওয়ামী লীগে বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশের অভিযোগ অনেক পুরনো। তৃণমূল থেকে শুরু করে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। সর্বশেষ শনিবার আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূলের নেতারা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে আবারো একইরকম অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তবে এবার শুধু অনুপ্রবেশের অভিযোগ নয়, বরং এবারের অভিযোগ আরো গুরুতর। অনুপ্রবেশের মাধ্যমে কোন ধরনের দলীয় ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বা ঐতিহ্য ছাড়া খুব সহজে দলের নেতৃত্বের পর্যায়ে চলে আসার বিষয়ে অভিযোগ করছেন তারা। এক্ষেত্রে তৃণমূলের অভিযোগের তীর দলের অনেক সংসদ সদস্যের দিকে। তারা বলছেন, দল একজন এমপিকে তৈরী করছে, কিন্তু এমপি হওয়ার পর তিনি নিজেই দলের বাইরে একটা বলয় তৈরি করার চেষ্টা করছেন। এজন্য তারা অনুপ্রবেশকারীদের নেতা বানিয়ে কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন কমিটি করিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে বিএনপি-জামায়াত-শিবির থেকে অনেকেই আওয়ামী লীগে ঢুকে সহজেই নেতা হয়ে যাচ্ছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এই বক্তব্যকে আমরা দেশ ও রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত হিসেবেই বিবেচনা করছি। কেননা যেকোন রাজনৈতিক দলের প্রকৃত ত্যাগী কর্মীরা তৃণমূল থেকে দলীয় আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করে দলের শীর্ষ পর্যায়ে উঠে এসে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত থাকবেন, এটাই স্বাভাবিকভাবে আমাদের কাম্য। যারা নিজেদের সুবিধার্থে ভোল পাল্টে নিজ আদর্শের বিরোধিতা করে অন্য দলে ঢুকে পড়ছে, তারা যে নেতৃত্বে এসে নিজের স্বার্থে দেশের সঙ্গেও বেঈমানি করবে না এর কোন নিশ্চয়তা নেই। তৃণমূলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি অবশ্য নেতা বানানোর জন্য এখন থেকে তাদের পারিবারিক ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’সহ তাদের অতীত কর্মকাণ্ড ভালোভাবে খোঁজ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দলীয় নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনাকে আমরা স্বাগত জানাই। কেননা এদেরকে এখনই প্রতিহত করতে না পারলে নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মী হারানোর মাধ্যমে শুধু আওয়ামী লীগই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, রাজনীতিও ক্ষতির শিকার হবে, আর এ কারণে সর্বোপরি মূলতঃ বাংলাদেশকেই ক্ষতির শিকার হতে হবে। আমরা মনে করি, অগ্রগতির জন্য গণতন্ত্র এবং রাজনীতির বিকল্প নেই, সেই রাজনীতি যেন সবসময় রাজনীতিকদের হাতেই থাকে।