রাঙ্গামাটিতে কাকরাইলের মা ও ছেলে খুনের পরিকল্পনা করা হয়। চলতি বছরের জুন মাসে তৃতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী শারমিন মুক্তাকে নিয়ে রাঙ্গামাটিতে ঘুরতে যায় আবদুল করিম। সেখানেই প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারকে খুন করার পরিকল্পনা করে সে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানা গেছে।
আবদুল করিমের বেপরোয়া জীবন-যাপনে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার। তার একাধিক বিয়ে নিয়ে শামসুন্নাহারের সঙ্গে পারিবারিক কলহ লেগেই ছিল। যেহেতু কাকরাইলের বাড়িটিসহ শামসুন্নাহারের নামে অনেক অর্থসম্পদ ছিল। সেহেতু মুক্তাও চিন্তা করে তাকে সরিয়ে দিতে পারলে সকল সম্পত্তি ভোগ করতে পারবে সে।
মুক্তার ভাই জনি ছিল বেকার। তার সঙ্গে স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় তার সন্তানকে দেখাশোনা করতে বোন মুক্তা। তার সামগ্রিক খরচও বহন করতে হত মুক্তাকে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তা শামসুন্নাহারকে খুন করার ব্যবস্থা করতে তার ভাই জনিকে বলে। তখন জনি বোনের প্রলোভনে গত ১ নভেম্বর কাকরাইলের বাসায় ঢুকে শামসুন্নাহারকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে। এ সময় তার ছোট ছেলে শাওন এ ঘটনা দেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জনি পেছন থেকে দৌড়ে বাসার সিঁড়িতে শাওনকেও ছুরিকাঘাত করে খুন করে।
রিমান্ডে করিম ও মুক্তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের এক কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, করিম দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর মুক্তাকে বিয়ে করেন। এসব নিয়ে প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারের সঙ্গে করিমের প্রায়ই ঝগড়া হতো। রাঙ্গামাটি যাওয়ার পর মুক্তাকে সঙ্গে নিয়ে শামসুন্নাহারকে খুন করার পরিকল্পন করে। মুক্তাও তার ভাইকে বলে, এ কাজটা করে দিতে হবে।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ঘটনার দিন জনি একটি ছুরি নিয়ে কাকরাইলের বাসায় প্রবেশ করে গলাকেটে শামসুন্নাহারকে খুন করে। বিষয়টি দেখে ফেলে তার ছোট ছেলে শাওন। শাওন দৌড়ে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় জনি পেছন থেকে ধরে সিঁড়িতে শাওনকেও ছুরিকাঘাত করে খুন করে।
হত্যাকাণ্ডের করিম এ ঘটনায় তৃতীয় স্ত্রী মুক্তা ও তার ভাই জনিকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চিন্তা করেছিল। তাতে সে সব ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা করেছিল বলেও পুলিশের কাছে তথ্য দিয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, আসামীরা রিমান্ড আছে, তারা তথ্য দিতে শুরু করেছে। রিমান্ড শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত নিশ্চিত হওয়া যাবে।
করিম ও মুক্তা বর্তমানে রিমান্ডে আছে এবং জনিকে শনিবার ভোরে গোপালগঞ্জর মোকসেদপুর থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
শনিবার দুপুরে সার্কিট হাউজ মসজিদে নিহত দুইজনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে উপস্থিত রমনা থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে বিদেশ ফেরত শামসুন্নাহারের দুই ছেলে মুন্না ও অনিক।
বড়ছেলে মুন্না বলে, স্যার, আমার মা এতো কষ্ট করে মারা গেল। ওরা আমার ভাইকেও ছাড়ল না। আমরা এর বিচার চাই। আমার বাবাও যদি দোষী হয় তারও বিচার চাই আমরা।
এসময় তাদের উদ্দেশ্যে ওসি বলেন, আমরা আপনাদের মা আর ভাইয়ের জীবন ফিরিয়ে পারবো না কিন্তু তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ব্যবস্থা করবো আমরা।