আজ বাইশে শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৬তম মহাপ্রয়াণ বার্ষিকী। গান, কবিতা, গল্প, নাটকের অমর সব সৃষ্টি দিয়ে বিশ্ব সাহিত্যের অঙ্গণে বাংলাকে অধিষ্ঠিত করে বাঙালি জাতিকে গর্বিত করে জন্মের আট দশক পেরিয়ে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের বাইশে শ্রাবণে এসে ইতি ঘটে মধুময় জীবনের।
১৮৬১ সালে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জন্ম নেয়া রবীন্দ্রনাথ আট বছর বয়সে কবিতা রচনা করে বিশ্বকে জানান দিয়েছিলেন নতুন বারতার। ভানুসিংহ ছদ্মনামে প্রথম কবিতা যখন প্রকাশিত হয় তখন রবীন্দ্রনাথ ১৬ বছরের বালক। এরপর শিল্পের যেখানে তিনি স্পর্শ করেছেন, সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিস্ময়কর এক শিল্পপ্রাণ।
কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, নির্দেশক কিংবা চিত্রকর যেকোন উপাধিতে ভূষিত করা যায় রবি ঠাকুরকে। এছাড়া পৃথিবীতে বিরল সৌভাগ্যের তিনিই একমাত্র কবি যার রচিত গান একাধিক স্বাধীন দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়।
প্রজা অন্ত:প্রাণ রবীন্দ্রনাথ সমাজের উঁচু আসনে বসেও ঐন্দ্রজালিক মায়ায় নতুন নতুন সৃষ্টিতে নিমগ্ন ছিলেন আমৃত্যু। আর বাঙালি আকণ্ঠ নিমজ্জিত তার শিল্পরসের অমৃত সুধায়। প্রেম, প্রকৃতি আর জীবনের প্রতি বাঙালির বোধকে রবীন্দ্রনাথ ছুঁয়ে দিয়েছেন আধুনিকতার পরশে। বাঙালির সাহিত্য জগতে বহুমাত্রায় সমৃদ্ধ একজন রবীন্দ্রনাথ আলোকবর্তী হয়ে থাকবেন আরো হাজার বছর।
তিনি গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরষ্কার অর্জনের পাশাপাশি জালিওয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের দেয়া নাইট উপাধি বর্জন করেছেন অবলীলায়।
ঋজু দেহের অধিকার রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন সুস্বাস্থ্য ভোগ করলেও অর্শ্ব রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী থাকেন জীবনের শেষ চারটি বছর। ১৯৩৭ এ জ্ঞান হারিয়ে কোমায় চলে গেলেও মানসিক দৃঢ়তায় ফিরে আসেন চেতনালোকে। পরবর্তীতে ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বার অসুস্থ হয়ে পড়লে ফিরে আসা হয়নি আর জীবনরথে। জন্মের আট দশক পেরিয়ে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের বাইশে শ্রাবণে এসে ইতি ঘটে মধুময় জীবনের।
তবে তিনি না থাকলেও তার নিজ হাতে গড়া রবীন্দ্রভারতী ও শান্তিনিকেতন বিশ্ববিদ্যালয় তারই মুক্তা ঝরানো বিপুল কর্মকাণ্ডের দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা বিশ্বে, প্রতিটি বাঙালির তরে।