তথ্যপ্রযুক্তির এই আধুনিক যুগে এসেও আমরা যে সেঁকেলে ধ্যান-ধারণা থেকে বের হতে পারিনি আবারও তার প্রমাণ মিললো রংপুরের গঙ্গাচড়ায়। রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের পর এখানেও অভিযোগ: ফেসবুকে ‘এমডি টিটু’ নামের আইডি থেকে মুহাম্মদ (সা.) এর বিরুদ্ধে অবমাননাকর বক্তব্য শেয়ার করেছেন কথিত টিটু রায়। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানকার বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে আগুন দিয়ে সবকিছু পুড়িয়ে দেয়া হয়। এমনকি পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরকে এই কাজে বাধা দিলে সংঘর্ষে প্রাণহানি পর্যন্ত হয়। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ সেই টিটু রায়কে গেপ্তার করে। তবে জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান: ফেসবুকে টিটু রায়ের দেয়া ধর্ম অবমাননার কোন স্ট্যাটাস খুঁজে পাওয়া যায়নি। এলাকায় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে হিন্দুদের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই স্ক্রিনশট শেয়ারের মূল ব্যক্তি মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদিও একই কথা বলেছেন। তিনি জানান: আমি যে স্ক্রিনশট শেয়ার করেছি তা টিটু নামের কেউ দেয়নি। আমি শুনেছি, যে ব্যক্তি ওই স্ট্যাটাস দিয়েছিল সিলেট থেকে অনেক আগেই সে গ্রেপ্তার হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার এবং ইসলামি আন্দোলন নামক দলের এই নেতার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, গ্রেপ্তার হওয়া টিটু রায় এই ঘটনায় দোষী না। অথচ হিন্দু বাড়িতে হামলা এবং পুড়িয়ে দেয়ার আগে এই বিষয়গুলো কারও ভাবার প্রয়োজন হলো না! বিবিসি’র একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার শিকার এক নারী বলছেন: তাদের ধর্ম অবমাননা হলে এত কষ্ট, আর আমাদের মন্দির, প্রতিমা ভাংচুর এবং পুড়িয়ে দেয়া হলো- এটা কি আমাদের ধর্ম অবমাননা নয়? অসহায় নারীর এই প্রশ্ন থেকে ধর্মীয় কারণে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের পক্ষে মানবিকতার বুলি আওড়ানো আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে বলে আমরা মনে করি। আরও দুঃখের বিষয় হলো- এ দেশে অনেক বড় অপরাধী এবং রেইনট্রি হোটেলে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার আসামিদের পক্ষে আইনজীবী দাঁড়ালেও টিটু রায়ের পক্ষে রংপুরে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে এমনকি দোষী হলেও যে কারও আইনি লড়াইয়ের অধিকার পাওয়ার কথা কি তাহলে রংপুরের আইনজীবীরা ভুলে গেছেন? এটা কি পেশাদারিত্বের অবমাননা নয়? নাকি এটাই এখন সমাজের সার্বিক চিত্র? আমরা মনে করি, এক্ষেত্রে ঘটনা রোধে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের আরও জোরালো ভূমিকা পালনের সুযোগ ছিল। এরপরও একই ঘটনাকে ব্যবহার করে কেউ যেন আবার পরিস্থিতি ঘোলা করতে না পারে সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হতে আমরা আহ্বান করছি। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং নিরীহ কোন মানুষ যাতে এই ঘটনায় হয়রানির শিকার না হয় তাও সংশ্লিষ্টদের নিশ্চিত করতে হবে।