চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

যৌন সহিংসতার সঙ্গে ক্ষমতার সম্পর্ক জড়িত: আনু মুহাম্মদ

ক্ষমতার কারণে যে বেপরোয়া ভাব, মানুষের প্রতি অসম্মান ও বাহাদুরি তৈরি হয় তার কারণেই নিপীড়নের ঘটনা ঘটে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।

রোববার দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী কর্তৃক আয়োজিত দেশব্যাপী চলমান যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১ টায় ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন ও সাংস্কৃতিক জোটের নেতা-কর্মীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।

মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে মুরাদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে মিছিল পরবর্তী এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহম্মদ বলেন, ‘যে সমাজে নিপীড়নই প্রধান সেই সমাজের একটি ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে যৌন সহিংসতা। যৌন সহিংসতার সঙ্গে ক্ষমতার সম্পর্ক জড়িত। যারা বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত তারাই ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা বেপরোয়া ভাব দেখিয়ে নিপীড়নসহ বিভিন্ন সহিংসতামূলক কর্মকান্ড ঘটিয়ে থাকে। আর নিপীড়নেরই একটি বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ধর্ষণ।’

তিনি বলেন, ‘যৌন সহিংসতার বহু ঘটনাই আমাদের সামনে আসে না। কেবল সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনার ওপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে যৌন সহিংসতার সংজ্ঞা অনুযায়ী ঘরে-বাইরে, কর্মস্থলে, শিক্ষাঙ্গনে তালিকা করলে এই সংখ্যাটা আরও বেড়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি নারী শিশুই প্রতিনিয়িত যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় হচ্ছে। সেই নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশিত হলে আরো বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে কিংবা লোক-লজ্জার সম্মুখীন হওয়ার ভয়ে তারা খবরটা বাইরে প্রকাশ করতে চায় না। কিন্তু নিপীড়নের জগতে এই নীরবতা ভঙ্গ করাই হচ্ছে বড় লড়াইয়ের কাজ।’

সমাবেশে ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলি বলেন, ‘ধর্ষণের জন্য নারীর পোষাক, চালচলনকে দায়ী করতে একটি পক্ষ ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের প্রতি প্রশ্ন- তাহলে শিশুরা কেন যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছে? পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায় যেখানে ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাককে দায়ী কার হয় সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মির্জা তাসলিমা সুলতানা, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খায়েরুজ্জাহান মিতু প্রমুখ।

মুরাদ চত্বরের সমাবেশ শেষে দুপুর ১টার দিকে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ চত্বরে একই ব্যানারে অপর একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সহ-সভাপতি অলিউর রহমান সান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক সুস্মিতা মরিয়ম, ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) জাবি সংসদের সাধরণ সম্পাদক মাহাথির মুহাম্মদ, ছাত্র ফেডারেশনের সংগঠক অংশু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।