ফ্রান্সের কনিষ্ঠতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে রবিবার আনুষ্ঠানিক অভিষেক হলো এম্যানুয়েল মাক্রোঁর (৩৯)। ফ্রান্সের বৈশ্বিক মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে এসময় মাক্রোঁ বলেন, ফ্রান্সের জনগণের মাঝে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়াই আমার লক্ষ্য।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্যালেসে অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে (ইইউ) সংস্কারের অঙ্গীকারও করেন। তার বিশাল জয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে মাক্রোঁ বলেন, ফ্রান্সের জনগণ ‘আশার’ প্রতি আস্থা রেখেছে এবং পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে।
সদ্যসাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওলাদের কাছ থেকে আজ দায়িত্ব বুঝে নেন এই মধ্যপন্থী রাজনৈতিক। আগামী ৫ বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। অভিষেক অনুষ্ঠানের আগে ওলাদের সঙ্গে মাক্রোঁ প্রায় এক ঘন্টার মতো সময় কাটান। এসময় ফ্রান্সের নিউক্লিয়ার কোড মাক্রোঁর হাতে হস্তান্তর করেন ওলাদ।
বিশাল বেকারত্বের সমস্যায় জর্জরিত (১০ শতাংশ) ফ্রান্সের নেতৃত্ব পাচ্ছেন মাক্রোঁ, গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা নির্বাচনেই তা নিশ্চিত হয়।ন্যাশনাল ফ্রন্টের কট্টরডানপন্থী মারিন লা পেনকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে মাক্রোঁ পান ৬৬ শতাংশ ভোট। এর আগে প্রথম দফা নির্বাচনে ১১ প্রার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পান মাক্রোঁ ও লা পেন।
নতুন প্রেসিডেন্টকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করতে হবে। বেকারত্ব, জঙ্গি সহিংসতা এবং গভীরভাবে বিভক্ত একটি দেশের ঐক্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নামতে হবে তাকে। সমাজতান্ত্রিক ওলাদের ৫ বছরের শাসনামলে মন্থর অর্থনীতি দেশটির জন্য উদ্বেগের। এছাড়াও রক্তাক্ত সন্ত্রাসী হামলায় সেই সময়কালে ২৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। ২০১৫ সালের রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা চলছে।
সাবেক ইনভেস্ট ব্যাংকার, সাবেক অর্থমন্ত্রী, ওলাদের সাবেক উপদেষ্টা মাক্রোঁ এর আগে কখনই কোন নির্বাচনে প্রতিদন্দ্বিতা করেননি। মাত্র এক বছর আগেই তিনি তার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলন এন মার্শের (অগ্রযাত্রা) সূচনা করেন। তার অঙ্গিকার ছিলো ফ্রান্সের রাজনৈতিক ব্যবস্থার গভীরে আঘাত করা এবং অর্থনীতিকে উজ্জ্বীবিত করা।
ইইউ-এর প্রতি নিজের আকাঙ্খার নজির স্বরুপ মাক্রোঁ সোমবার জার্মানের চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সাথে দেখা করতে বার্লিন যাবেন। তা হবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম বিদেশ সফর। এর আগে অবশ্য সকালেই দেশটির প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করবেন মাক্রোঁ।
‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তৃতীয় পর্ব’
মাক্রোঁর নতুন রাজনৈতিক দল লা রিপাবলিকা এন মার্শের পরিবর্তনের প্রতি অঙ্গিকার নির্ভর করছে আগামী মাসের সংসদ নির্বাচনের উপর। রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্তঃসারশূণ্যতা ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনতে মাক্রোঁর পরিকল্পিত সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা নির্ভর করছে সেই নির্বাচনের উপর। দলটিকে বড় সংখ্যক আসন নিশ্চিত করতে হবে সেই নির্বাচনে। অন্যথায় ওলাদের মতোই অবস্থা হতে পারে নতুন প্রেসিডেন্টের। পূর্বসুরি ফ্রাসোঁয়া ওলাদও পরিবর্তন আনার অঙ্গিকার করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু সংসদে কম আসনের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ওলাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে আধুনিক সময়ে ফ্রান্সের সবচেয়ে কম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে।
জুন মাসে ফ্রান্সের ৫৭৭টি সংসদীয় আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যাকে ফরাসি গণমাধ্যম অভিহিত করেছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তৃতীয় পর্ব। গত বছরেই এন মার্সে আন্দোলনের সূচনা করা মাক্রোঁর নতুন দল প্রতিটি আসনেই প্রার্থী দিবেন বলে জানিয়েছেন। সংসদের নিম্নকক্ষে নতুন মুখ নিয়ে আসার লক্ষ্য মাক্রোঁর। ইতিমধ্যেই গত সপ্তাহে দলটি ৪২৮ জন প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেছে। প্রার্থীদের অর্ধেকেই এর আগে কোন নির্বাচনে প্রতিদন্দ্বীতা করেননি এবং অর্ধেকই নারী।
চার্লস ডি গল ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৫৮ সালে। নেপোলিয়নের পর কনিষ্ঠতম প্রেসিডেন্টের মাক্রোঁর জন্ম এরও পরে, যা একটি নতুন নজির। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনে অংশ না নিয়েও নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ওলাদ।
আকর্ষণীয় ব্যক্তিজীবনের অধিকারী মাক্রোঁর স্ত্রী ফাস্ট লেডি ব্রিগিত (৬৪) ছিলেন অভিষেক অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ। মাক্রোঁর সাবেক হাইস্কুল শিক্ষক, পরবর্তীতে প্রেমিকা ও স্ত্রী ছিলেন তার ১২ মিনিটের অভিষেক বক্তব্যের মনোযোগী শ্রোতা।
প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাজধানী প্যারিস জুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। শত শত অতিরিক্ত পুলিশ প্রহরায় ছিলো। শহরের বড় একটি অংশ জুড়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।