বাংলা সিনেমার আদানপ্রদানে যে জটিলতা রয়েছে তা দূরীকরণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক ইচ্ছা রয়েছে। যৌথ প্রযোজনা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে দেওয়ার জন্য আমাদের দিক থেকে কোনো কোনো প্রযোজকের দায়ও রয়েছে। যৌথ কাজের বিপরীতে অহেতুক বিদেশে শুট বা আরও অনেক অনিয়মে প্রশ্ন ওঠাটা অস্বাভাবিক নয়। নিয়ম-কানুন মেনে আগামি এপ্রিলের মধ্যে শুরু করার ইচ্ছা রয়েছে ‘বালিঘর’-এর কাজ। খুশি হবেন জেনে যে চলচ্চিত্রটির ৯৫ ভাগ কাজ বাংলাদেশে আর ৫ ভাগ ভারতে। শান্তিনিকেতনে তিন দিনের কাজ।’
বলছিলেন অরিন্দম শীল। অভিনয়ের জন্য আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাশে ঠেলেছিলেন যিনি। অভিনয়ে নিজের পরিচিতিও উজ্জ্বল করে তুলেছিলেন। তবে ২০১৩তে ‘আবর্ত’ দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতার যে পরিচয় তৈরি করেছিলেন, পাঁচ বছরে আটটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যার সবগুলোই ব্যবসা এবং সমালোচনা সফলতা অর্জন করে তার পরিচালক পরিচিতিকে অন্য সব কিছুর ওপরে নিয়ে গেছে।
প্রথমবারের মত যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন ‘ঈগলের চোখ’ খ্যাত এই নির্মাতা। তিনি বলেন, বেঙ্গল ক্রিয়েশন্স এর কর্ণধার আবুল খায়ের সাহেবের শিল্পানুরাগ বা শিল্প প্রসারের মানসিকতা এবং চেষ্টা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তার প্রস্তাব না পেলে ‘বালিঘর’ করা হয়ে উঠত কিনা সন্দেহ। নিয়ম মেনে সব ধরণের কাজ করতে চাই বলেই এপ্রিলের দিকে শুরু করব। বাংলাদেশের কক্সবাজারে ছবিটির ৯৫ ভাগ কাজ হবে। ১৫-১৬দিন। বিশ্বের দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতকে বড়া পর্দায় নতুন করে দর্শক আবিস্কার করতে পারবে আশা করি।’
পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের সিনেমা প্রদর্শনে নানান বাঁধা বা অসহযোগিতা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় অরিন্দম শীলকে। ‘আপনি পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ স্নেহধন্যও। দারুণ প্রভাবশালীও। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শণে নানান বাঁধা অপসারণে আপনার কি ভূমিকা আশা করতে পারি আমরা?’ প্রশ্ন করা হয় চলচ্চিত্র আমদানি বাণিজ্যের অসমতা সম্পর্কে। বলা হয় এখানকার চলচ্চিত্র তথাকথিত আমদানি হচ্ছে ঠিকই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিনেমা হলে প্রদর্শন না করে ফেলে রাখা হচ্ছে।’ অনেকটা কৌশলী উত্তর দেন তিনি। বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিজে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রানুরাগী। তার দারুন আগ্রহ রয়েছে বাংলা ভাষার ছবি বিনিময়ের গতিশীলতায়। এটুকু বলতে পারি বিয়ন্ডস নাথিং সিনেমা ওদিক থেকে যৌথ প্রযোজনার মূল রূপ তুলে ধরতে পারবে।
গত ১৯ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে তার ‘শবর’ সিরিজের তৃতীয় ছবি ‘আসছে আবার শবর’। ইতিমধ্যে দর্শক সমালোচকের প্রশংসায় ভাসতে শুরু করেছে ছবিটি। ব্যোমকেশ, শবর দুটি সফল গোয়েন্দা ফ্রাঞ্চাইজির নির্মাতা। চ্যানেল আই অনলাইনের প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের নিজস্ব কিছু গোয়েন্দা চরিত্র রয়েছে। যেমন কুয়াশা, মাসুদ রানা। বাংলাদেশের গোয়েন্দা চরিত্র নিয়ে কোন নতুন ফ্রাঞ্চাইজির ইচ্ছা আছে কিনা?’ নির্মল হাসিতে ভেসে গিয়ে ‘ব্যোমকেশ’ নির্মাতা বলেন, ‘আমার এ দুটো চরিত্র নিয়ে পড়াশোনা নেই। পড়ে বলতে পারব। তবে হুমায়ূন আহমেদ এর হিমু, মিসির আলী নিয়ে আমার বেশ আগ্রহ আছে। সময় সুযোগ পেলে এবং অনুমতি মিললে হয়ত এ দুটি চরিত্র নিয়ে ভাবতে পারি।’
তার প্রথম পরিচালনার চলচ্চিত্রে নায়িকা ছিলেন বাংলাদেশের জয়া আহসান। প্রথমবারের মত বাংলাদেশের নায়ক নিয়ে কাজ করছেন ‘বালিঘর’ এ। শুধু কি যৌথ প্রযোজনার বাধ্যবাধকতায় নাকি চরিত্রের দাবী? প্রশ্নে দৃঢ় স্বরে অরিন্দম শীল বলেন, মধুময় চরিত্রটি শুভর জন্যই। আমি খুঁজছিলাম এমন চরিত্র যার শরীর পেটা। বুক ডন দেয়।’ শুভর খোঁজ পাই আমি ঢাকা অ্যাটাক দেখে। আমার বেঙ্গলের বন্ধু শুভজিৎয়ের মাধ্যমে শুভর খোঁজ নেই। সে সময় আমি দুবাইতে অবস্থান করছি। শুভজিৎ জানায় নায়ক শুভও দুবাইতে। ওর সঙ্গে হোটেলে আধা ঘন্টার কথোপকথনে ঠিক করি ও চলচ্চিত্রটির চরিত্র মধুময়। কারণ চরিত্রটির স্ট্রাগলিং আছে, বুক ডন দেওয়ার অভ্যাস রয়েছে। কথার মাঝখানে হঠাৎ করে একলাফে মেঝেতে বুক ডন দিতে দিতে শুভ জিজ্ঞাসা করে দেখুনতো অরিন্দম দা এমন বুক ডনের অভ্যাস হলে চলবে কিনা? আমার দারুন লেগেছিল বিষয়টি।
ছবি: তানভীর আশিক