বাংলাদেশের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যেতে অনেক যদি-কিন্তুর সমীকরণ মেলাতে হবে, সবার আগে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে হবে মাশরাফী দলকে। মহাগুরুত্বপূর্ণ নকআউট ম্যাচের প্রথমটিতে কয়েকঘণ্টা পরই বার্মিংহামে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
বার্মিংহামে বিশ্বকাপের এবারের আসরে একটি ম্যাচও খেলেনি বাংলাদেশ। অন্যদিকে এই ভেন্যুতে নিজেদের একমাত্র ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ৩১ রানে হেরেছে ভারত।
ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সেই জয় বাংলাদেশের সেমির স্বপ্ন কঠিন করে তুলেছে। টাইগাররা যদি ভারত ও পাকিস্তানকে হারাতে পারে, আর নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ইংল্যান্ড হেরে যায়, তবে সরাসরি শেষ চারে যাবে মাশরাফীরা। নয়তো রানরেটের হিসাবে পড়তে হবে। বুধবার যদি ইংল্যান্ড জয় পায়, তবে সমীকরণ যা-ই হোক ছিটকে পড়ার কাতারে যাবে বাংলাদেশ।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বেশ আশাজাগানিয়া। গত বছর এশিয়া কাপের ফাইনালে টাইগারদের হারাতে শেষ বল পর্যন্ত খেলতে হয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে। বার্মিংহামে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে বলেই প্রত্যাশা।
দুই দলের মুখোমুখি ফলাফলে অবশ্য ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্য। তবে ছেড়ে কথা বলবে না বাংলাদেশও। বার্মিংহামে নামার আগে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি দেবে বেশ কয়েকটি বিষয়।
টপঅর্ডারের উড়ন্ত সূচনা: বাংলাদেশের টপঅর্ডার দারুণ ফর্মে রয়েছেন। প্রতি ম্যাচেই এনে দিচ্ছে উড়ন্ত সূচনা। ওপেনিংয়ে বড় সংগ্রহ গড়তে ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় উইকেটেও শক্ত প্রতিরোধ গড়া সম্ভব হচ্ছে। এই টপঅর্ডার ভারতের বিপক্ষেও জ্বলে উঠলে কোহলিদের শক্ত চ্যালেঞ্জই জানাতে পারবে বাংলাদেশ।
ধারাবাহিক মিডলঅর্ডার: লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম ও মোসাদ্দেক হোসেনদের পারফরম্যান্স বাংলাদেশের শক্তিশালী মিডলঅর্ডারের পক্ষেই কথা বলছে। মুশফিক প্রায় প্রতি ম্যাচেই রান পাচ্ছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়ের দিনে সেঞ্চুরি ছুঁইছুঁই ইনিংস উপহার দিয়েছেন লিটন। অন্যদিকে মোসাদ্দেক ছোট অথচ কার্যকরী ইনিংস খেলে বাংলাদেশের সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করছেন। এই জায়গাটা ভরসা দিচ্ছে বড় সংগ্রহ গড়তে।
স্পিন-পেসে ভারসাম্য: সাইফউদ্দিন, মোস্তাফিজরা দারুণ করছেন। ডেথ ওভারে দুজনই সমান কার্যকরী। যোগ হতে পারেন রুবেলও। অন্যদিকে সাকিব ও মিরাজ স্পিনে ধারাবাহিক। তাদের দিয়ে ভারতকে ঘায়েল করতে চাইবে বাংলাদেশ। মিরাজ না খেললেও মোসাদ্দেকের কার্যকরী স্পিন কাজে দেবে। সবমিলিয়ে পেস ও স্পিনে ভারসাম্যপূর্ণ বোলিং আক্রমণ নিয়েই মাঠে নামবে টিম টাইগার্স। যেটা এজবাস্টনের পিচকে নিজেদের জন্য ব্যবহারে কার্যকরী এক আক্রমণ সম্ভার!
ভারতের বিপক্ষে সাম্প্রতিক লড়াই: ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের স্মৃতি এখনো তরতাজা। সেবার আম্পায়ারের বিতর্কিত নো বল ডাকা, পরে কোয়ার্টারে হেরে বসা তাঁতিয়ে দিয়েছিল। চার বছর আগে থেকেই ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। পারফরম্যান্সের ধারা এখনো অব্যাহত। বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে টিম ইন্ডিয়াকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে টাইগাররা। গত বছর এশিয়া কাপের ফাইনালে মাত্র ২২২ রানের পুঁজি নিয়েও ভারতকে শেষ বল পর্যন্ত লড়তে বাধ্য করেছে। শেষ বলের নাটকীয়তার পর যদিও ৩ উইকেটের হার। গত নিধাস ট্রফিতেও ফাইনালে যেয়ে হার। মাঝে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে একেবারে শেষে যেয়ে পথ হরানো। সাম্প্রতিক এই পারফরম্যান্সগুলো বাংলাদেশকে অনুপ্রাণিত করবে। খানিকটা চাপে রাখবে ভারতকেও। সুযোগটা কাজে লগাতে পারলেই দিনটি হতে পারে লাল-সবুজের।