বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের গল্পে যোগ হতে যাচ্ছে আরেকটি নতুন পর্ব। যে গল্পের শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিপক্ষে একটি স্বাধীন দেশের মর্যাদার লড়াই দিয়ে। অবশেষে সেই লড়াইয়ে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থে সবচে বড় প্রকল্প পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হতে চলেছে।
আমরা জানি, শুরুতে এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু দেশি-বিদেশী সেই ষড়যন্ত্রে অর্থ ছাড়ের আগেই দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে এই প্রকল্পে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিশ্বব্যাংক। তবে সরকার চেয়েছিল বিশ্বব্যাংক যেন না ফিরে যায়। এ কারণে মিথ্যা অভিযোগের পরও পদত্যাগে বাধ্য হন ওই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। মামলার প্রধান আসামি হয়ে কারাগারে যেতে হয়, সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকেও।
কিন্তু সরকারের এসব উদ্যোগের পরও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি বিশ্বব্যাংক। তবে পিছিয়ে অাসেনি বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক এবং সাহসী এক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্যোগই অাজ বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ভিন্ন এক দেশ হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।
তাই তো রোববার পদ্মাসেতুর কাজের অগ্রগতি দেখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই কথা স্মরণ করে বলেন, ২০০১ সালে আমরা পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত সরকার এসে তার আর কোনো অগ্রগতি করেনি। আমরা আবার ক্ষমতায় এসে পদ্মাসেতুর কাজে হাত দেই। কিন্তু নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়া হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। এমনকি আমার পরিবারের লোকজনকেও এতে জড়ানো হয়।
সেই চ্যালেঞ্জের কথা উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠেও। এখন এই স্বপ্নের পদ্মাসেতু দেশের নিজস্ব অর্থ দিয়েই নির্মিত হচ্ছে। সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকার নিজস্ব তহবিলে দেশের সর্ববৃহৎ ‘পদ্মাসেতু’ নির্মাণ করছে।
দেশের সার্বিক উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখবে পদ্মাসেতু। এই সেতুর কারণে দেশের অর্থনীতি যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ বাড়বে। এরচেয়েও বড় কথা ওই অঞ্চলে শিল্পের প্রসার ঘটবে। দীর্ঘ বছর উন্নয়নের মূলস্রোতের বাইরে থাকা দক্ষিণাঞ্চল যুক্ত হবে উন্নয়নের মহাসড়কে। যা হতে যাচ্ছে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন মাইলফলক।
আমরা মনে করি, পদ্মাসেতু শুধু একটি সেতু নয়, এটা দেশের আত্মমর্যাদার প্রতীক। এ স্বপ্নবীজ থেকে জন্ম নেবে হাজারো পদ্মাসেতুর গল্প। নতুন প্রজন্ম এর নির্মাণ ইতিহাস শুনে বুক চিতিয়ে বলবে, আমরাও পারি।