চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

গৃহবধূ থেকে মহাকাশযান নিয়ন্ত্রণ করা ‘রকেট ওম্যান’

যে রাধে সে চুলও বাঁধে’- কথাটা বোধহয় বেশ সেকেলে হয়ে গেছে। যে রাধতে জানে সেই নারীরা এখন যে মহাকাশযান ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে আট সদস্যের পরিবারের জন্য রান্না বান্না শেষ করে ছুটতে হয় মঙ্গল গ্রহের কাছাকাছি যাত্রা করা একটা মহাকাশ যান পরিচালনা করতে। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে আবার রাতের রান্না করা।– প্রতিদিন এমনটা করা কি কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব?

কিন্তু এই কঠিন কাজটাই সম্ভব করে তুলেছিলেন ভারতের স্পেস এজেন্সির সাবেক ডাইনামিক্স অ্যান্ড স্পেস নেভিগেশন বিভাগের প্রধান বিপি দক্ষিনী।

আর তাই তিনি পরিচিতি পেয়েছেন-  ‘রকেট ওম্যান’ হিসেবে।

চার বছর আগে ভারতের একটি মহাকাশযান সফলভাবে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে। আর যারা এই যানটি পরিচালনা করছিলেন তাদের টিম লিডার ছিলেন এই বিপি দক্ষিনী। তার কাজ ছিল স্যাটালাইটের দিকে কড়া নজর রাখা। পৃথিবীতে বসে নভোযানটিকে ঠিক কোন গতিপথে যেতে হবে সেটার নির্দেশনা দেয়া। এবং কোনভাবেই যেন যানটি কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত না হয় সেটা নিশ্চিত করা। তার দল সেটা সফলভাবেই পেরেছে তার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে।

তবে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। দক্ষিনীর এক সহকর্মীয় কথায় স্পষ্ট কাজটা কেমন কঠিন ছিল!’ ধরুন আপনি ভারতে বসে একটা গলফ বলে কিক দিয়েছেন আর সেই বলটিকে আপনার ফেলতে হবে লস এঞ্জেলসের কোন গর্তে। এমনই ছিল নভোযান পরিচালনা করাটা।

একজন ভারতীয় গৃহবধূর পক্ষে তো সেটা আরো কঠিন ছিল! যেখানে একজন নারীর বিজ্ঞানী হওয়াটাকে সমাজ খুব ভালো চোখে দেখে না।

জেনে নেয়া যাক রকেট ওম্যান খ্যাত বিপি দক্ষিনীর জীবনের কিছু কথা।

ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটকে ১৯৬০ সালে জন্ম নেন দক্ষিনী। পরিবারে বলতে গেলে বাবার থেকেই অনুপ্রেরনা পেয়েছিলেন ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ পড়ার। তবে যে শহরে দক্ষিনীর জন্ম সেখান থেকে এর আগে কেবল একজন মেয়েরই সৌভাগ্য হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার।

মাঝে খানিকটা অনিশ্চিয়তাও দেখা দেয়। কিন্তু শেষমেষ তার বাবা চাইলেন মেয়েকে যে করেই হোক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এ পড়াবেন। অবশেষে তিনি সবার সেরা হয়েই সেখান থেকে পাশ করেন।

এরপর একটি কলেজের গণিতের শিক্ষক হিসেবে শুরু হয় দক্ষিনীর কর্মজীবন। কিন্তু তার আগ্রহ ছিল মহাকাশ গবেষণা নিয়ে। ১৯৮৪ সালে ইন্ডিয়ান স্পেস এজেন্সিতে চাকুরী জুটে যায় তার। আর এখন তিনি রীতিমত মহাকাশ গবেষণার একজন বিশেষজ্ঞ।

চাকরির শুরুর দিকে তাকে দেয়া হয় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর কাজ। কিন্তু প্রোগ্রামিং তো দূরের কথা এর আগে কম্পিউটার ছুয়ে দেখার ভাগ্যও হয় নি তার। তাই বলে হেরে গেলে কি আর চলে? বাসায় বসে প্রোগ্রামিং এর বই পড়ে খুব দ্রুতই শিখে ফেলেন তা।

অন্যদিকে আবার একজন আদর্শ ভারতীয় গৃহিণীর মতো তাকে পরিবারও সামলাতে হতো। দক্ষিনী বলেন, ‘আমাকে রোজ ভোর ৫ টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠতে হতো, তারপর বাড়ির সবার জন্য রুটি বানাতে হতো। আর তারপরই অফিসে আসতাম। নিজের ইচ্ছে আর চেষ্টা থাকলে কোন কিছুই তো অসম্ভব নয়। আর তাই দক্ষিনী আজ রকেট ওম্যান’।