ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবকে সন্ত্রাসবাদ, দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির মতো সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীত পাশের ৮নং সড়কের ৪০৪ নং বাসায় অভিযান চালিয়ে কাউন্সিলর রাজীবকে আটকের পর সাংবাদিকদের একথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।
তিনি বলেন: চলমান ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মধ্যে গত ৪-৫ দিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন কাউন্সিলর রাজীব। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আত্মগোপনে থাকা রাজীবকে তার বন্ধুর ওই বাসা থেকে আটক করা হয়।
অভিযানকালে ওই বাসা থেকে ৭টি বিদেশি মদের বোতল, একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, তিন রাউন্ড গুলি, নগদ ৩৩ হাজার টাকা ও একটি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। অস্ত্রের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি রাজীব।
কাউন্সিলর রাজীব এই বাসায় কত দিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: আমাদের জানামতে তিনি গত ১৩ অক্টোবর থেকে এই বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন। তার বন্ধুকে আমরা পাইনি। তিনি বিদেশে রয়েছেন।
সারওয়ার বিন কাশেম বলেন: রাজীবের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। পাসপোর্ট নিয়ে বন্ধুর ওই বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। দেশ থেকে পালানোর চেষ্টায় ছিলেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আটকের পর রাজীবকে নিয়ে তার মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। রাত আড়াইটার পর তার বাসায় অভিযান চালানো হয়।
জানা যায়, কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব নিজের এলাকায় রাজত্ব গড়ে তুলেছেন। স্বঘোষিত এই ‘জনতার কমিশনার’ চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজি, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ আর মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত করেছেন তার সাম্রাজ্য।
২০১৫ সালের কাউন্সিলর নির্বাচনে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় প্রার্থী ও মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে হারিয়ে নির্বাচিত হন তিনি।
যুবলীগের সাইনবোর্ড আর কাউন্সিলরের পদ ব্যবহার করে এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, ডিশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজীব। বিগত ৪ বছরে ৮-১০টির বেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনেছেন। যার মধ্যে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, ক্রাউন প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮, বিএমডব্লিউ স্পোর্টস কার রয়েছে।
রাজধানীর গুলশানে রয়েছে তার একাধিক ফ্ল্যাট।
রাজীবের বিরুদ্ধে এলাকার ফুটপাত, সিএনজি স্টেশন, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মাসে কোটি টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে।