চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

যেসব চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে

আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনেই নির্বাচিত হবেন ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আঘাত-প্রত্যাঘাতের তিক্ত আর কুৎসিত প্রচারণার পর শেষ পর্যন্ত যিনিই প্রেসিডেন্ট হন না কেন, উত্তরাধিকার সূত্রেই নতুন মার্কিন কান্ডারি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। বিশেষ করে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে অপেক্ষা করছে কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। এর পাশাপাশি আরো কিছু সম্ভব্য চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন পর্যবেক্ষকরা।

হোয়াইট হাউজে প্রবেশে শুরুতেই প্রেসিডেন্টের মিটিং রুমে বিশ্বের নানা বিষয়ে গরম-ঠান্ডা আলোচনার অবতারণা হবে। আর এসবের পেছনের গল্প থাকবে চীন ও রাশিয়া। এই দুই দেশের বৃহত্তর আন্তর্জাতিক জোটের চাপ, সেই সাথে ক্রমবর্ধমান সাইবার হামলা এবং দীর্ঘ সময়ের মার্কিন মিত্রদের ওয়াশিংটনের সমর্থন সম্পর্কে চিন্তা।

মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া ও ইরাকের নির্মম যুদ্ধ ওই অঞ্চলসহ ইউরোপে শরণার্থীদের ঢেউ তুলেছে। এর জের ধরে ইউরোপের দেশগুলোতে রাজনৈতিকভাবে ঝড় উঠছে।

শুধু মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপ নয়, অস্থিরতার সর্বোচ্চ পর্যায়ের এশিয়ার অবস্থাও। নর্থ কোরিয়ার আনপ্রেডিক্টেবল নেতা কিমং জং উন তার পারমানবিক অস্ত্রে ভাণ্ডার বাড়িয়ে দিনকে দিনকে অ্যালার্মিং পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রে মতো সাউথ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করছে চীন। আর সিরিয়ায় মুখোমুখি বাগড়ার দেয়ার পর ন্যাটো জোটের ঘাড়ের উপর পরমাণু ক্ষমতাসম্পন্ন মিসাইল তাক করছে রাশিয়া।BEIJING, China - Chinese President Xi Jinping (R) and U.S. President Barack Obama attend a joint press conference in Beijing on Nov. 12, 2014, following their meeting. They agreed to reduce the risk of military conflict and combat climate change. (Kyodo)

     যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-ফাইল ছবি

এছাড়া আরো বড় কিছু জাতীয় সমস্যার সম্মুখীন যুক্তরাষ্ট্র যেগুলো সমাধানও করতে পারছে না কেউ। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে এখনো লিখিত কিছু করতে পারেনি পূর্বসূরি কেউ। সেই সাথে সাইবার যুদ্ধে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে মার্কিনিদের।

যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে এমন কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনার সামনে পড়তে হবে যার পদধ্বনি হয়তো কেউই শুনছে না। কিন্তু ওভাল অফিসে পা রাখার পরই নতুুন কর্মকর্তাদের কিছু নিশ্চিত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।

নতুন প্রেসিডেন্ট ওভাল অফিসের শুরুতেই কি কি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন তার কিছু নতুন নমুনা উঠে এসেছে সিএনএনের প্রতিবেদনেও। এ ব্যাপারে ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসিস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক ডিউবোইচ বলেন, ‘আমি তো গোড়ার দিকেই চ্যালেঞ্জ দেখছি। একটি জবরদস্ত চ্যালেঞ্জ আসবে ইরানের দিক থেকে। এ জন্য নতুন প্রসাশনকে একটি পূর্ণরূপে প্রস্ততি নিতে হবে।’

তবে অন্য বিশ্লেষকদের ধারণা নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য প্রথামিক চ্যালেঞ্জটা ইউরোপ এব এশিয়া থেকেও আসবে। হিলারি হলে একরমক সমস্যা, তো ট্রাম্পের ক্ষেত্রে অন্য। হিলারির প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কোনো উষ্ণতা বা আন্তরিকতা নেই। পুতিন মনে করেন, ২০১২ সালে নিজ দেশে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে প্ররোচণা দিয়েছেন হিলারি। আর ট্রাম্পের বিষয়ে অভিবাসী এবং মুসলিম দেশগুলোর বিরূপ প্রতিক্রিয়া থাকবে। এছাড়া নর্থ কোরিয়ার মাঝে মাঝে উস্কানিমূলক পরমাণু মিসাইল পরীক্ষার বিষয় তো রয়েছে।

us_election3

    যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-ফাইল ছবি

জর্জ বুশের আমলে নর্থ কোরিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা এবং বর্তমানে ‘সেন্টার ফর স্ট্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের’ সিনিয়র উপদেষ্টা ভিক্টর চা বলেন, ‘পরবর্তী প্রশাসনের জন্য নর্থ কোরিয়া নিশ্চিতভাবেই চ্যালেঞ্জ হবে।

গত অক্টোবরে নর্থ বিষয়ে ধারণা দেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা ডিরেক্টর জেমস ক্লাপার। বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এই দেশটির বিরুদ্ধে নানা রকম নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে যে আখেরে কোনো লাভ হয়নি সে বিষয়টি তুলে ধরেছেন তিনি। জেমস বলেন, তার (কিম জং উন) কোনো সাফল্যের সম্ভাবনা নাই, কিন্তু তাদের পারমাণবিক সামর্থ্য আছে না নাই সেটাই এখন উদ্বেগের বিষয়।

তিনি বলেন, আট বছর আগের চেয়ে পরিস্থিতি এখন অনেক খারাপ। আর এই কারণেই নতুন প্রশাসনকে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।

নর্থ কোরিয়া ইস্যুতে চীনের চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েত হবে মার্কিন প্রশাসনকে। চীনকে অগ্রাহ্য করে নর্থ কোরিয়ার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই শুভ হবে বলে মনে হয় না। আর এই ঘটনা ওই অঞ্চলে চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ঠান্ডা যুদ্ধ জিইয়ে রাখবে।

us_election1

     নর্থ কোরিয়া প্রেসিডেন্ট  কিম জং উন-ফাইল ছবি

এছাড়াও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে কড়া পরীক্ষায় পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। এই ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেরই ক্ষতি হবে বলে মত বিশ্লেষকদের।

এশিয়ায় মার্কিনিদের চ্যালেঞ্জের আরেক নাম হয়ে উঠছে সাউথ কোরিয়া। চীনের প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র সাউথ কোরিয়ার রাজনৈতিক অবস্থা এখন টালমাতাল। এর পাশাপাশি আরেক মিত্র ফিলিপিন্সের নতুন প্রেসিডেন্ট দুর্তার্তে সম্পর্ক তিক্ত করে বেইজিংয়ে দিকে ঝুঁকেছেন।

মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বাইরে যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে ফেলেছে রাশিয়া। গত আট বছর ধরে সেই চ্যালেঞ্জ ক্রমাগত বাড়িয়ে চলছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। ক্রিমিয়া ‍দিয়ে বড় আঘাত শুরু। এরপর সিরিয়ায় আসাদকে রক্ষা, কালিনগ্রান্ডে ন্যাটো জোটের দিকে মিসাইল তাক, ইউক্রেন হয়ে জর্জিয়া, মলদোভা, পোল্যান্ড ও লিথুনিয়ায় প্রভাববলয় বৃদ্ধি। সবশেষ মার্কিন নির্বাচনেও চলছে পুতিন কার্ড।

সেন্টার ফর ইউরোশিয়া, রাশিয়া এন্ড ইস্টার্ন ইউরোপিয়ান স্টাডিজের ডিরেক্টর অ্যাঞ্জেলা স্টেন্ট বলেন, ‘একবছর আগে বলেছিলাম ঠান্ডাযুদ্ধ সমাপ্তির পর রুশ-মার্কিন সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ। কিন্তু এখন বলতে হচ্ছে, সেটা আরো ছাড়িয়ে গেছে।’

us_election

ইরাক-সিরিয়ার জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট(আইএস)-ফাইল ছবি

শুধু বলকান বা ইউরোপের অন্য জায়গায় নয়, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক মিত্রদেরও নিজ বলয়ে নিচ্ছে রাশিয়া। এর মধ্যে রয়েছে সিরিয়া, মিশর, তুরস্ক। এসবের সাথে মার্কিনিদের দীর্ঘদিনের শত্রু ইরান-রুশ ঘনিষ্ঠতা তো রয়েছেই। এছাড়া ইরাক, লিবিয়া ও ইয়েমেনে দাবার গুটি নাড়াচ্ছেন পুতিন।

এই ইস্যুগুলোর বাইরে বারাক ওবামা ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে নতুন প্রশাসনকে। আর সর্বপরি বিশ্বজুড়ে ত্রাস হয়ে দাঁড়ানো জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল-কায়দা ও তালেবানের মতো সংগঠনের চ্যালেঞ্জ তো আছেই।