চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

যেসব খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়

গবেষকদের মতে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা দেহে ক্যান্সারের বাসা বাঁধার সুযোগ করে দেয়। নিয়মিত ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত শাকসবজি ও ফলযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, ধূমপান বর্জন, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে যায় বলে মনে করেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।

কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণের সঙ্গে ছাড়তে হবে এমন কিছু খাবার, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। জেনে নিন এমনই কিছু খাবার সম্পর্কে:

পরিশোধিত বা কৃত্রিম চিনিযুক্ত খাবার
রিফাইন্ড বা পরিশোধিত চিনিযুক্ত অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তা মানবদেহে নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। পরিশোধিত অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার রক্তে চিনির পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিসের পথে সিঁড়ি হিসেবেও কাজ করতে পারে। এটা ভেবে অবশ্য অনেকেই চিনি ছাড়া আর্টিফিশিয়াল সুইটনার ব্যবহারকে নিরাপদ মনে করেন।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, পরিশোধিত চিনির মতো কৃত্রিম চিনিও খুবই ক্ষতিকর। এই জিনিসগুলো বেশি পরিমাণে খেতে থাকলে দেহে ইনসুলিনের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। ২০০৬ সালে অ্যামেরিকান সোসাইটি ফর ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, তাদের গবেষণার অংশ যে ব্যক্তিরা পরিমিত পরিমাণে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতেন এবং পরিশোধিত ও কৃত্রিম চিনি থেকে দূরে থাকতেন, তাদের তুলনায় অত্যাধিক পরিমাণে চিনি/সুইটনারযুক্ত খাদ্য গ্রহণকারীদের মধ্যে অগ্নাশয়ের ক্যান্সারে আক্রন্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।

এসবের পরিবর্তে খাঁটি মধু, বা অন্ততপক্ষে কম পরিমাণে অপরিশোধিত চিনি খাওয়া অনেক স্বাস্থ্যকর।

লাল এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস
বেকন, সসেজ ও হ্যামসহ প্রক্রিয়াজাত মাংস ও মাংসযুক্ত খাবারে বিভিন্ন ধরণের প্রিজার্ভেটিভ ও অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি থাকে। আরও থাকে অনেক বেশি লবণ। এ ধরণের প্রক্রিয়াজাত মাংস বেশি খেলে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে বলে একটি গবেষণায় দেখা গেছে।

এছাড়াও বেশি পরিমাণে লাল মাংস বা রেডমিট গ্রহণেও প্রস্টেট এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। তাই এই দু’ধরণের মাংস আপনার খাবারের তালিকা থেকে জলদি বাদ দিন। আর যদি রেডমিট খেতেই হয়, তবে স্বল্প পরিমাণে খান, তাও রাসায়নিক ছাড়া শুধুমাত্র খাস খাওয়ানো সুস্থ পশুর মাংস বেছে নিন।

স্মোকড এবং সংরক্ষিত খাবার
স্মোকড মাছ-মাংস খেতে আমাদের অনেকেরই খুব ভালো লাগে। কিন্তু এই স্মোকি ফ্লেভারটা আনতে গিয়ে খাবারে যোগ হয় বেশ কিছু বিষাক্ত উপাদান। সেগুলো ক্যান্সারের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। এছাড়াও রাসায়নিক দ্রব্যাদির ভেতর ডুবিয়ে আচারের মতো দীর্ঘদিন সংরক্ষিত খাবারে এন-নাইট্রোসো জাতীয় উপাদান তৈরি হয়।

একই সঙ্গে এভাবে সংরক্ষিত খাদ্যদ্রব্য ও টিনজাত স্মোকড মাছ-মাংসে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রিজার্ভেটিভ। অতিরিক্ত পরিমাণে এসব খাদ্যগ্রহণ দেহের স্বাভাবিক সুস্থ কোষগুলোর ক্ষতিসাধন করে এবং ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়।

সাদা আটা
দোকানে পাওয়া রুটি, পরোটা থেকে শুরু করে বড় বড় বেকারির কেক, বিস্কুট, ফাস্টফুডের পিজা…..এমনকি বাসায় বানানো রুটি-পরোটা – সবকিছুতেই এখন পরিশোধিত সাদা আটা-ময়দার ব্যবহার। সাদা আটায় থাকে উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, বেশি বেশি গ্রহণে যা নানা রোগের কারণ হতে পারে।

শুধু তাই নয়, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যে নারীরা খুব বেশি পরিমাণে শর্করাযুক্ত খাবার খান তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। রক্তে চিনি শোষণের মাত্রাও বেড়ে যায় বেশি শর্করা খেলে। তাই এর পরিবর্তে পুরো গম, কাঠবাদাম, কিনোয়া বা বার্লির আটা খাওয়া স্বাস্থ্যকর।

হাইড্রোজেনেটেড তেল
বেশিদিন ভালো রাখা এবং খাবার সংরক্ষণের কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সবজি থেকে রাসায়নিক উপায়ে সংগ্রহ করা হয় হাইড্রোজেনেটেড তেল। এসব তেলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ট্রান্স ফ্যাট। অল্প পরিমাণে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। কিন্তু খুব বেশি পরিমাণে এই উপাদানটি খেলে তা দেহকোষের পর্দার গঠন ও স্থিতিস্থাপকতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং ত্বকের ক্যান্সারসহ বেশ কিছু ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

তাই ক্ষতিকর হাইড্রোজেনেটেড তেলের পরিবর্তে এক্সট্রা-ভার্জিন নারিকেল বা জলপাইয়ের তেল (অলিভ অয়েল) বা অর্গানিক পাম তেল ব্যবহার অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত।

মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন
বাজারে কিছু রেডি-টু-বেক মাইক্রোওয়েভ পপকর্নের প্যাকেট পাওয়া যায়। এগুলো মাইক্রোওয়েভ ওভেনে প্যাকেটসহ দিয়েই তৈরি করা যায় সুস্বাদু খাওয়ার যোগ্য গরম গরম পপকর্ন। কিন্তু এসব পপকর্নে ব্যবহৃত হয় এমন কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এতে থাকতে পারে পিএফওএ জাতীয় বিষাক্ত রাসায়নিক, যার নিয়মিত গ্রহণে কিডনি ও ব্লাডারে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এসব রাসায়নিক অত্যাধিক খেলে নারীদেহে বন্ধ্যাত্বের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে।

চাষ করা স্যামন
চাষ করা এবং প্রকৃতিতে জন্মানো স্যামন মাছের মধ্যে পুষ্টিগুণে বিশাল ফারাক। প্রকৃতিতে জন্মানো স্যামনে স্বাস্থকর বেশকিছু খাদ্য উপাদান রয়েছে। কিন্তু গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন, চাষ করা স্যামন মাছে এমন কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান, যা নানা মারাত্মক রোগ, এমনি ক্যান্সারের কারণও হতে পারে। এসব রাসায়নিকের মধ্যে রয়েছে টক্সাফিন, মার্কারি, ডাইঅক্সিন, পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইলসহ আরও অনেক কিছু।

আলুর চিপস
আলুর চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই – আমাদের অনেকেরই এই খাবারগুলো ভীষণ প্রিয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, আলুর চিপস ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই জাতীয় খাবারগুলো ঠিকঠাক ভাজার জন্য অতি উচ্চ তাপমাত্রার দরকার হয়। সেই তাপমাত্রায় আলু ভাজার সময় অ্যাক্রিলামাইড নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়। এটি দেহে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য সরাসরিভাবেই দায়ী। তাই আলুর চিপস ও কড়া করে আলু ভাজা বেশি বা নিয়মিত খেলে তা স্তন, প্রস্টেট, ডিম্বথলী এবং পাকস্থলির ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

এছাড়াও এসব ভাজাপোড়া খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি ও ক্ষতিকর ফ্যাট থাকে, যা থেকে হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধি। আবার কৃত্রিম প্রিজার্ভেটিভ ও ফ্লেভারও থাকে এই খাবারগুলোতে। তাই এগুলো থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ভালো।