চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

যেসব কারণে ক্রোয়েটদের স্বপ্ন অধরা

বিশ্বকাপের শুরু থেকেই স্বপ্নের ফুটবল উপহার দিয়েছিল রাকিটিচ-মড্রিচরা। প্রত্যাশার চেয়ে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্তি বেশি হয়েছিল এবার। সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হত ক্রোয়েশিয়া চ্যাম্পিয়ন হলে। কিন্তু তা হয়রি, রূপকথা রচনা হল না এবারও।

বিশ্বকাপের ফাইনালে কয়েকটি ভুলই শেষ করে দিল ক্রোয়েশিয়াকে। অনভিজ্ঞতা আর সেইসঙ্গে ক্লান্তির কোপে এদিন রূপকথা গড়া থেকে দূরে রয়ে গেলেন ক্রোয়েট ফুটবলাররা।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

যে যে কারণে ক্রোয়েটদের স্বপ্ন অধরা

অনভিজ্ঞতা
ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো বড় আসরে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না ক্রোয়েশিয়ার এই কোচ-ফুটবলারদের। শুধু বিশ্বকাপই বা কেন ইউরো কাপেও সেভাবে সাফল্য পায়নি। তাই বিশ্বকাপ ফাইনালে যেভাবে দল সাজানো দরকার ছিল, তা হয়নি। এমবাপের দৌড় থামানের মতো কোনো পরিকল্পনা নিতে পারেননি কোচ। কিংবা ফ্রান্সের দলটার নিউক্লিয়াস গ্রিজম্যান আর পোগবা। তারাই খেলা তৈরি করেন। কিন্তু গ্রিজম্যানদের খেলা তৈরি আটকানোরও কোনো পরিকল্পনা ছিল না ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে। শুধু বল পজেসন বেশি রাখার দিকে নজর দিয়েই খেলা থেকে হারিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া।

দুর্দান্ত শুরু, সাদামাটা শেষ
এবার বিশ্বকাপে অসাধারণ শুরু করেছিল ক্রোয়েশিয়া। গ্রুপ লিগের তিনটি ম্যাচেই জয় পায় মদ্রিচরা। এমনকী মেসির আর্জেন্টিনাকেও তারা ৩-০ গোলে হারিয়ে দেয়। গ্রুপপর্বে সব ম্যাচ জিতেই নকআউট পর্বে ওঠে তারা। নকআউট পর্বে পর পর তিনটি ম্যাচে ১২০ মিনিট (অতিরিক্ত সময়) করে লড়াই করেছে। সেই তিনটি ম্যাচেও জিতেছে। এর মধ্যে দুটি ম্যাচ আবার টাইব্রেকারে জয় পায় ক্রোয়েশিয়া। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোল্ডেন গোলে জয়। পুরো টুর্নামেন্টে যে লড়াই উপহার দিয়েছিলেন মদ্রিচ, ফাইনালেও সেই লড়াই আশা করেছিলেন ফুটবল প্রেমীরা। কিন্তু এদিন ভাগ্যও সুপ্রসন্ন ছিল না ক্রোয়েশিয়ার। তার উপর ভর করেছিল ক্লান্তিও।

ক্লান্তি
পরপর তিনটি ম্যাচ ১২০ মিনিটের লড়াই। তার উপর প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালের চাপ। শারীরিক ক্লান্তি ও মানসিক চাপেই ক্রোয়েশিয়া শেষ পর্যন্ত লড়াই ধরে রাখতে পারেনি। বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো বড় আসরে ৪-২ গোলে হেরে গেল ফ্রান্সের কাছে। যদিও পরিসংখ্যানের মতো গোহারা হয়নি ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু ফ্রান্সের পরিকল্পনার কাছে শেষ হয়ে গেছে ক্রোয়েশিয়ার সবকিছু। বল পজেসন বেশি রেখেও হার মানতে বাধ্য হয়েছে। এমবাপেদের দৌড় কিংবা গ্রিজম্যানের প্লে-মেকিং রুখতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে ক্লান্ত লেগেছে ডিফেন্সকে। ডিফেন্ডারদের অদম্য লড়াই ফ্রান্স ম্যাচে দেখা যায়নি। তারই ফলে হারতে হয়েছে ক্রোয়েশিয়াকে।

ফরাসি তারুণ্যের তেজ
ফরাসি কোচ দেশম দু-বছর আগেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দলটা তৈরি করেছিলেন। ছেটে ফেলেছিলেন তিরিশোর্ধ সমস্ত খেলোয়াড়কে। এমনকী করিম বেনজেমার মতো ফরোয়ার্ডকেও তিনি সুযোগ দেননি। দল তৈরি করেছিলেন ২২ থেকে ২৬ বছর বয়সী ছেলেদের নিয়ে। আর তার ফল তিনি পেয়েছেন হাতেনাতে। স্রেফ গতি দিয়ে বড় বড় খেলোয়াড়দের ঘায়েল করেছেন এমবাপেরা। উল্টো দিকে ক্রোয়েশিয়ার দলের সমস্যা তিরিশোর্ধ খেলোয়াড়। এই দলটার অধিকাংশ খেলোয়াড়দেরই বয়স ২৯ থেকে ৩২।

বড় আসরে ছোট ভুল

বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো বড় আসর বলে কথা। সেখানে একটা ছোট ভুলই বড় হয়ে দেখা দেয়। তেমনটাই হয়েছে এবার ফাইনালে। ক্রোয়েশিয়া প্রথম গোলটা খেল ডিফেন্সের ভুলে। নিজেরাই হেড করে বল ঢুকিয়ে দিল নিজেদের গোলে। পিছিয়ে যাওয়ার পর যদিও একটি অসাধারণ গোলে সমতায় ফিরেছিল, তারপর বক্সে বলে হাত লাগিয়ে পেনাল্টি উপহারেই শেষ হয়ে যায় আশা। গ্রিজম্যানের পেনাল্টি গোলের পরও লড়াই দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন মদ্রিচরা। কিন্তু সেই লড়াই বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পগবার একটা দুরন্ত শটই গোলে আশার সমাপ্তি ঘটিয়ে দেয় প্রায়। আর বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে এমবাপের নেয়া গড়ানো শটে সুবাসিচের গোল খেয়ে যাওয়া কফিনে শেষ পেরেক পুতে দেয়।