অতুলনীয় প্রতিভায় বিস্ময়কর সৃষ্টি দিয়ে সারাবিশ্বকে মহিমান্বিত করেছেন পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তার কন্ঠ, নাচের স্বতন্ত্র ভঙ্গি আর ফ্যাশন দিয়ে কোনো এক ইন্দ্রজালে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন সঙ্গীতপ্রেমীদের।
২০০৯ সালের ২৫ জুন তারিখটি এসেছিলো এক অপূরণীয় শূন্যতার বেদনার্ত বার্তা নিয়ে। আবারও তার মায়াবী মোহে আবিষ্ট হতে উদগ্রিব কোটি ভক্ত সেদিন বজ্রাহতের মতো শুনলেন; না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি। বিধাতার অপার মহিমার অকৃপণ দান ধারণ করেছিলো যে কন্ঠ, মাত্র ৫০ বছর বয়সেই নীরব হয়ে যায় তা।
অসম্ভব জনপ্রিয় এই মার্কিন পপ সম্রাটের করা কনসার্টগুলোই আবেদনের তীব্রতার পরিচায়ক। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ, ফিলিপাইন, জাপান যেখানেই তার কনসার্ট, হাজারো দর্শকের উপচে পড়া ভীড়ের নিশ্চয়তা। সেই সব কনসার্টে আগত দর্শকদের অঝোরে কান্না, একের পর এক সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়া যেনো এক অদ্ভুত উদ্ভ্রান্ত মুহূর্তের জন্ম দেয়।
গান, নাচের অতুলনীয় সম্মোহনী ক্ষমতায় প্রচন্ড আবেগের জোয়ার জাগাতেন তিনি। কাম ব্যাক কনসার্ট সিরিজ ‘দিস ইজ ইট’ এর মাধ্যমে সেরকমই আরো একটি জাদুকরী সময় উপহার দেয়ার কথা ছিল তার। প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন মহাসমারোহে। কিন্তু হায়, তার হৃদযন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তা স্তব্ধ করে দিয়েছিলো গোটা বিশ্বকেই।
ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের গ্যারি শহরে এক আফ্রিকান-আমেরিকান পরিবারে দশজন ভাই-বোনের বিশাল পরিবারে বেড়ে উঠা তার। কৃষ্ণাবয়ব দেহে অস্ত্রোপাচার করে শ্বেতকায় রূপ নিয়েছিলেন তিনি। মোটা নাকের জন্য শৈশবের বিদ্রুপাত্মক মন্তব্যের কথা মনে রেখে তাতেও এনেছিলেন ভিন্নতা। পছন্দানুযায়ী রূপ পেতে নিজেকে বেশ কয়েকবারই শল্যবিদের ছুরির নিচে সমর্পণ করেছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, প্রযোজক, নাচিয়ে এবং অভিনেতা মাইকেল জ্যাকসন।
১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট জন্ম নেয়া মাইকেলের বিশাল বৈভবের ধারা বন্ধ থাকেনি তার মৃত্যুর পরেও। মৃত তারকাদের মধ্যে একনাগারে ছয় বছর ফোবর্সের হিসেবে সর্বাধিক আয়ের স্বীকৃতি পান তিনি। এসময়কালে তার আয়ের পরিমাণ ১১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সর্বকালের সবচেয়ে সফল বিনোদনদাতা হিসেবে গিনিজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের (২০০৬) স্বীকৃতিও রয়েছে মাইকেলের। এছাড়াও গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ড, বিক্রিত এ্যালবামের নিরিখে সহস্রাব্দের সেরা পুরুষ পপ শিল্পী হিসেবে ওয়ার্ল্ড মিউজিক এ্যাওয়ার্ডস, শতাব্দীর সেরা শিল্পী হিসেবে আমেরিকান মিউজিক এ্যাওয়াডসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
চার ভাই জ্যাকি, টিটো, জারমেইন এবং মারলোনকে নিয়ে ব্যান্ড ‘জ্যাকসন ৫’ গড়ার মধ্য দিয়ে ১৯৬৪ সালে পেশাগত ক্যারিয়ারের অভিষেক ঘটেছিলো জ্যাকসন পরিবারের অষ্টম সদস্য মাইকেলের। ১৯৭১ সালে এককভাবে শুরু তার পথচলা। আর ’৮০ দশক তো ছিলো সঙ্গীতে তার রাজত্বের সূচনাকাল।
১৯৮২ সালে প্রকাশিত সর্বকালের সবার্ধিক বিক্রিত এ্যালবাম থ্রিলারের বিট ইট, বিলি জিন, থ্রিলার গানগুলো তার আধিপত্যের স্বীকৃতি। এছাড়াও তার অফ দ্য ওয়াল (১৯৭৯), ব্যাড (১৯৮৭), ড্যাঞ্জারাস (১৯৯১) এবং হিস্টোরি (১৯৯৫) বিশ্বের সর্বাধিকা বিক্রিত এ্যালবামের তালিকায় রয়েছে। ইউএস ‘বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড’এ শীর্ষস্থান দখল করেছিলো তার ১৯৮৭ সালের ‘ব্যাড’ এ্যালবামের ৫টি গান।
মিউজিক ভিডিও ধারণাটিকেই এক শৈল্পিক রূপ এবং প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি দিয়েছিলেন ব্যতিক্রমি উপস্থাপনায়। তার নাচের ভঙ্গি ‘রোবট’ বা ‘মুনওয়াক’তো এখনও বিস্মিত করে বিশ্বকে।