চট্টগ্রাম থেকে: ম্যাচ শেষ। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চ প্রস্তুত করছেন মাঠকর্মীরা। গ্যালারির চোখগুলো তাকিয়ে সেদিকে। কিছুক্ষণ পর এ মঞ্চেই আসবেন দারুণ সব কীর্তি গড়া মুমিনুল হক। হাতে তুলবেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। ‘লোকাল বয়ে’র ট্রফি হাতে তোলার দৃশ্য দেখতেই সাগরিকায় ম্যাচ শেষেও দর্শকদের ঘরে ফেরার তাড়া নেই।
মুমিনুল পুরস্কার হাতে তুলতেই করতালিতে সরব হল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। কিন্তু মুমিনুলের কথা শোনা হল না অপেক্ষারত ক্রিকেটপ্রেমীদের। সাউন্ড সিস্টেম যে নষ্ট! জায়ান্ট স্ক্রিনে চোখ রেখে বুঝে নিতে হল ভাষা!
রোববার ড্র ম্যাচে জয়ের সমান আনন্দই এনে দিয়েছেন মুমিনুল। এ বাঁহাতি জোড়া সেঞ্চুরি না করলে ম্যাচের কী হত সেটা সহজেই অনুমেয়! ঘরের ছেলে বলে মুমিনুলের কীর্তি প্রাণভরে উপভোগ করেছে চট্টগ্রামের মানুষ। যেভাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করে হার বাঁচিয়েছেন তাতে অবশ্য আনন্দে ভেসেছে পুরো বাংলাদেশই।
মুমিনুল ব্যাটিংয়ে নামলে দর্শক বেড়ে যায় জহুর আহমেদে। এটা সাগরিকার চেনা দৃশ্য। প্রথম ইনিংসের ১৭৬ রান, আর দ্বিতীয় ইনিংসের ১০৫ রানের সময় দর্শকের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়ার পর ‘হান্ড্রেড চাই, মুমিনুল’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়েছে সাগরিকার আকাশ।
ক্রিকেট পিপাসু যারা পাঁচদিনই মাঠে এসেছেন, তারা খুব কাছে থেকে দেখেছেন ম্যাচের রং বদলানো। হয়েছেন চড়াই-উতরাইয়ের সঙ্গী। দর্শকদের উচ্ছ্বাসটা ভালভাবেই ফিরিয়ে দিয়েছেন মুমিনুল। পেয়েছেন অপার ভালবাসাও। দিনভর খেলা দেখে যেমন দর্শকদের ক্লান্তি নেই, মাঠে ওভারের পর ওভার ব্যাটিং-ফিল্ডিং করে ক্লান্তি নেই মুমিনুলেরও।
১৭৬ রানের ইনিংস খেলে যাওয়া মুমিনুল ফিল্ডিং করেছেন ২০০ ওভার। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে আবার ১০৫ রানের ইনিংস। সামলেছেন সংবাদমাধ্যমকেও। সেটি শেষ করে মাহমুদউল্লাহর জন্মদিন পালন করতে ক্রীড়া সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আনা কেকও কেটেছেন বার্থডে বয়ের পাশে দাঁড়িয়ে। মেতেছিলেন দুষ্টুমিতেও।
এই স্টেডিয়ামে মুমিনুলের অনেক স্মৃতি, অনেক প্রাপ্তি। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন খুব চেনা সেই ভেন্যুতেই। এখানে মাত্র ৭ টেস্ট খেলে পাঁচ সেঞ্চুরি হয়ে গেল তার। তাতে এক ভেন্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম এক হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়ার অপেক্ষায় থাকলেন। চট্টগ্রামে এক হাজার রান করা একমাত্র বাংলাদেশি মুশফিকুর রহিমের লেগেছে ১৪ টেস্ট। সাত টেস্টেই মুমিনুলের রান ৮৬৯। গড় ৮৬.৯০।
জহুর আহমেদে ফিরলেই কেন রানের ফল্গুধারা ছোটে ব্যাটে সে রহস্য জানা নেই মুমিনুলেরও, ‘সে রহস্য জানা নেই, আমার কাছে মনে হয় না যে বিশেষ কোন কারণ আছে। ওভাবে চিন্তা করেও নামি না যে এই মাঠে রান করি। গত দুই, তিন টেস্টে এ মাঠে কিন্তু রান পাইনি। এখানে আসলে হয়ত রান হয়ে যায়।’
রহস্যটা মুমিনুল জানুন আর না জানুন, এই মাঠে, এমনকি সব মাঠেই তার ব্যাটে রানবন্যা ছুটুক সেটা কায়মন বাক্যে চেয়ে থাকেন টাইগারপ্রেমীরা। মুমিনুলকে জাগিয়ে তোলার পেছনে রহস্য হয়ত সেই ক্রিকেটপ্রমী দর্শকরাই! সারাদিন ‘মুমিনুল, মুমিনুল’ বলে যারা গলা ফাটান।