মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নাগরিকত্ব আইন ২০১৬ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর মানবতাবিরোধী অপরাধে কেউ দণ্ডিত হলে তার নাগরিকত্বও বাতিল হবে। তবে, এ আইনের
কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যবস্থায় কোনো প্রভাব আসবে না বলে জানিয়েছেন
আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, যেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ হয়েছে বা যেসব
যুদ্ধাপরাধীর বিচার এখনো বিচারাধীন রয়েছে তাদের বিচার প্রক্রিয়া আগের মতোই চলবে, শুধু চূড়ান্তভাবে শাস্তিপ্রাপ্তদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থাকবে না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের অন্যতম কৌঁসুলি তুরিন আফরোজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, অাইনটি পাস হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচার সম্পন্ন করতে কোনো বাধা নেই।
‘আমরা এর আগে সেভাবেই আশরাফুজ্জামান খান এবং চৌধুরী মঈনুদ্দিনের বিচার সম্পন্ন করেছি,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। এসব আন্তর্জাতিক অপরাধ তাই সেটা যেখানেই সংঘটিত হোক না কেনো বা যে দেশেই হোক না কেনো এই বিচার সম্পন্ন করা যায়।
‘আর বিচারে যদি প্রমাণিত হয় যে সে অপরাধী তাহলেই কেবল তার নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে। মানে নাগরিক হিসেবে তার সকল অধিকার নষ্ট হবে,’ বলে উল্লেখ করেন তুরিন আফরোজ।
একই কথা বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন।
‘যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে আন্তর্জাতিক একটি বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৭১ সালে তারা বাংলাদেশের নাগরিক ছিলো। আজ অপরাধ প্রমাণিত হয়ে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল হলেও তাদের বিচারে কোনো প্রভাব আসবে না,’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: এতোদিন যারা হাইপ্রোফাইল যুদ্ধাপরাধী ছিলো শুধু তাদের কথাই সামনে এসেছে। যারা একটু কম পরিচিত তাদের কথা সেভাবে উঠে আসেনি। এখন তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। বিচার হবে, শাস্তি হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে। বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে এই আইন অনুমোদনের কোনো প্রভাব নেই।
তবে আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব বাতিলের আইনটি তাদের বিচারের উপর কোনো ধরনের প্রভাব না আনলেও নাগরিকত্ব বাতিলের ধারণাটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি জানান, অপরাধের বিচার কখনো নাগরিকত্ব দিয়ে হয় না। আর যুদ্ধাপরাধীর বিচারতো সম্পন্ন হচ্ছে আন্তর্জাতিক আইনে। সেখানে নাগরিকত্ব কোনো প্রভাব আনবে না নিশ্চয়ই। কিন্তু শাস্তি হিসেবে নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
সঙ্গে অবশ্য তিনি একথাও বলেন: আমাদের অনুমোদিত আইনে কী লেখা রয়েছে সেটা না দেখেও নিশ্চয়ই মন্তব্য করা সম্ভব না। ধারা অনুযায়ীই হয়তো এভাবে নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনে আমরা একসময় একঘরে হয়ে পড়বো।
নাগরিকত্ব আইন ২০১৬ অনুযায়ী যারা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করেছে ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে বা করবে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল হবে।
আইন অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী, সহায়তাকারী এমনকি তাদের সন্তানেরাও বাংলাদেশের নাগরিক হবার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
তবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে আইনটি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে এখানে জন্মগ্রহণকারীদের জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক বলে বিবেচনা করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সার্কভূক্ত ৮ দেশ ও মিয়ানমারের নাগরিকেরা বৈবাহিক বা অন্য কোনো সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হলে তাদের যে কোনো এক দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হবে। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত রাষ্ট্র ছাড়া সব দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবে বাংলাদেশের নাগরিকরা। তবে বিচারপতি, এমপি এবং সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিটিত অবস্থায় কেউ দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন না।