আমেরিকাবাসী শুরুতেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে তাঁদের নবীন গণতন্ত্রকে কার্যকর করতে তথ্যের সহজলভ্যতা একটি মৌলিক শর্ত হয়ে দাঁড়াবে এবং এটি ছাড়া তারা প্রার্থীদের এবং তাদের নীতিমালার বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। উপরন্তু, এই তথ্য সহজলভ্য হতে হবে এবং সর্বস্তরে বিতরণ করতে হবে।
এর জবাবে এল সংবাদপত্র। আমেরিকায় প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় ১৭৮৩ সালে পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া থেকে। ১৮০০ সাল নাগাদ ফিলাডেলফিয়ায় ছয়টি, নিউইয়র্কে পাঁচটি, মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে তিনটি এবং দক্ষিণ ক্যারলাইনার চার্লসটনে দুটি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।
সে সময়ে পুরো আমেরিকা থেকে প্রকাশিত ২৫০টি সংবাদপত্রের বেশীরভাগই ছিল সাপ্তাহিক। ১৮৫০ সাল নাগাদ আমেরিকায় সংবাদপত্রের সংখ্যা দাঁড়ায় ২,০০০-এ যার মধ্যে দৈনিক ছিল ২০০টি।
সাংবাদিকদের স্বাধীন মনোভাবের কারণে স্বাধীনতার পর থেকেই আমেরিকান রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ তৈরী হয়েছে। ১৭৯২ সালে জর্জ ওয়াশিংটন লিখেছিলেন, “যদি সরকার এবং এর কর্মকর্তাগণ অবিরত সংবাদপত্রের আক্রমণের শিকার হতে থাকেন এবং তাও উদ্দেশ্য অথবা তথ্যের সত্যতা যাচাই ছাড়াই, তাহলে আমার মনে হয় যেকোনো মানুষের পক্ষে সরকার নিয়ন্ত্রণ বা রাষ্ট্রপরিচালনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।”
অন্যদিকে রাজনীতিকগণ ভোটারদের অবগত রাখতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করে নিয়েছেন। টমাস জেফারসন ১৭৮৭ সালে লিখেছেন, “আমাকে যদি সংবাদপত্রহীন সরকার অথবা সরকারহীন সংবাদপত্র এর মধ্যে যেকোন একটিকে বেছে নিতে বলা হয় তবে আমি পরেরটি গ্রহণ করতে এক মুহুর্ত দ্বিধা করব না।”
রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় সমাবেশগুলোর বিশদ বিবরণ ১৯২৪ সালে সরাসরি সম্প্রচার শুরুর পর রাজনীতিতে বেতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে। সেবছর দলগুলো বেতার বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থ ব্যয় করা শুরু করে — রিপাবলিকানগণ খরচ করেন প্রায় ১২০,০০০ ডলার এবং ডেমোক্র্যাটগণ খরচ করেন প্রায় ৪০,০০০ ডলার।
চার বছরের মধ্যে দলদুটির এ বাবদ খরচ বেড়ে দাঁড়ায় দশ লাখ ডলারে এবং এভাবেই রাজনৈতিক প্রচারাভিযানের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি শুরু হয় যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
জর্জ গ্যালাপ ১৯৩৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অঞ্চলগুলোতে স্বল্পসংখ্যক নমুনা নিয়ে জনমত জরিপ শুরু করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, “এই জরিপগুলো দ্রুত ও কার্যকরী পন্থা যেগুলোর মাধ্যমে দেশের আইনপ্রণেতা, শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, সম্পাদক এবং দেশের সর্বস্তরের নাগরিকগণ গণতন্ত্রের হাওয়া নির্ভরযোগ্যভাবে মূল্যায়ন করতে পারেন।”
অভিজ্ঞতার আলোকে তৈরী আরো সুবিন্যস্ত প্রশ্নপত্র এবং আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যপুষ্ট বিশ্লেষণের কল্যাণে বর্তমানে জরিপ আরো যুগোপযোগী হয়েছে। মাঝে মধ্যে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি ঘটলেও জনমত যাচাই করতে জরিপকে সাধারণভাবে একটি কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবেই দেখা হয়।
কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ প্রথম টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয় ১৯৪০ সালে, যেটি দেখেছিল প্রায় ১০০,০০০ দর্শক। ১৯৫০ সাল নাগাদ আমেরিকার এক তৃতীয়াংশ বাড়িতে টেলিভিশন পৌছে যায়।
১৯৫২ সালের নির্বাচনী প্রচারে প্রধান দুটি দল প্রায় পঁয়ত্রিশ লক্ষ ডলার খরচ করে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের জন্য। রিপাবলিকানগণ বরাবরের মতই বিজ্ঞাপন বাবদ ডেমক্র্যাটদের চেয়ে অনেক বেশী খরচ করতে থাকে। ১৯৬০ সালের কেনেডি-নিক্সন বিতর্ক আধুনিক সময়ের নির্বাচনী প্রচারে টেলেভিশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিশ্চিত করে।
ক্যাবল টেলিভিশন সরকারের ব্যাপক গণনিরীক্ষণের সুযোগ এনে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সিনেট সেশনগুলোর প্রতিটি মিনিট এবং অনেক কংগ্রেশনাল কমিটির সভা বেসরকারি সি-স্প্যান চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করে থাকে। একইভাবে নাগরিকদের জন্য রাজ্য এবং স্থানীয় সরকারগুলো আইনসভা, পরিষদমণ্ডলী এবং বোর্ডের সভাগুলো সম্প্রচার করে।
নাগরিকরা এখন অনেক বেশী উপায়ে তাদের সরকারের সম্পর্কে বিভিন্ন খবর জানতে পারছে। সংবাদপত্রের সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকলেও সংবাদপত্র এই ডিজিটাল যুগে অনলাইন গণমাধ্যমে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিরীক্ষাধর্মী স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করছে এবং এরই সাথে লাভজনকভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
জনগণ অনেক আগে থেকেই টেলিভিশন ও বেতার সাংবাদিকদের কাছ থেকে সংবাদ পাওয়া স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এখন নাগরিক সাংবাদিকরা (মূলধারা গণমাধ্যমে) অবহেলিত সংবাদকে অনলাইন ব্লগের মাধ্যমে তাদের কমিউনিটির নজরে আনতে পারছেন।