চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘যাকাতের কাপড় কে কিনবে স্যার?’

বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা একবার এই রোগী আমার চেম্বারে একটা prescription দেখিয়ে বলে, স্যার এই কাপড়টা নিয়া আমারে এই ওষুধগুলি দিবেন? যাচাই করে দেখি ওষুধগুলো তার আসলেই প্রয়োজন। এর আগে ওষুধের দোকানে দোকানে একই রকম অফার নিয়ে গিয়ে ফেরত এসেছে। অনেকেরই ধারণা, ডাক্তারের চেম্বারে প্রেসক্রিপশনের সাথে ওষধও পাওয়া যায়। যাক যেভাবেই হোক তার ওষুধ এর ব্যবস্থা হয়।

আমি বলি, এইটা বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে আপনি পরে আবার ওষুধ লাগলে ডিসপেনসারি থেকে কিনতে পারবেন। (ওষুধ ব্যাবসায়ীদের সিন্ডিকেটেড মার্কেটিং এর ফলে ওষুধের দাম যা গলাকাটা।)

সে বলে, যাকাতের কাপড় কে কিনবে স্যার?

আসলেই কাপড়ের আগে ”যাকাতের” শব্দটা যোগ করলে নিম্নবর্গীয় অচ্ছুৎ কোনো বস্তু যেনো চোখের সামনে ভেসে উঠে। বাস্তবতাও সেরকমটাই। গরীবদের দেয়া হবে, সুতরাং স্পেশাল অর্ডার দিয়ে যোগাড় করা হয় খারাপ মানের (যাকাতের) লুঙ্গি-শাড়ি। এর অর্থনৈতিক ভ্যালু নারীটির কাছে এখন বলতে গেলে শূন্য।

যাওয়ার সময় নারীটি লজ্জায় আনত হয়ে কাচুঁমাচু হয়ে বলে, একটা জিনিস চাইবো স্যার?

আমি বলি, কি?

একটা কলম আর খাতা দিবেন?- মাইয়াটা লেখবো। স্কুলে পড়ে।

ডাক্তারের টেবিলে সাধারণত: নানারকম কলম প্যাড থাকে।

আসলে এই নারীটির প্রয়োজন চিকিৎসার খরচ, তার ছেলেমেয়েদের প্রয়োজন শিক্ষার ব্যয়বহনের কেউ। অথচ তাকে একটা শাড়ি দিয়েই আত্মপ্রসাদে ভুগছি যেনো দোজাহানের অশেষ নেকি হাসিল করে ফেললাম বুঝি। একটা ‘মুত্তাকী’ ভাব চলে আসে নিজের মধ্যে।

যতোদিন আমাদের মনমানসিকতা নেকীর ক্ষুদ্রগণ্ডি থেকে মু্ক্ত হয়ে মানবিকতাকে উর্ধে তুলে ধরার বিবেকসম্পন্ন না হবে ততোদিন একদল পদদলিত হয়ে মরতে থাকবে, আর আরেকদল বেঁচে থেকেও দলিতের জীবন নিয়ে টিকে থাকবে। আর আমরা স্বচ্ছলরা শতকরা হিসাবের অংকের দায়িত্ব পালন ও শো-অফ শেষে পূণ্য হাসিলের আত্মতুষ্টিতে ভুগতে থাকবো।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)