আনিস এ খানের জন্ম ১ ডিসেম্বর ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামে। পিতা কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং মাতা শামসুন্নাহার খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৭৮ ও ১৯৮০ সালে। ১৯৮২ সালে কাস্টমস ক্যাডারে ১ম হওয়া সত্ত্বেও সরকারি চাকরিতে যোগদান করেননি। গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক পিএলসিতে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে যোগদান করার পর যখন তার চাকরি কনফার্ম হয়, তখন তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের নিউ মার্কেট শাখার ম্যানেজার হিসেবে।
এই গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকে পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে এএনজেড গ্রুপ নিয়ে নেয়ার পর ব্যাংকের নতুন নাম হয় এএনজেড গ্রিন্ডলেজ এবং ২০০০ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক অ্যাকুয়ার করে নেয়। সেখানে চাকরি করেন ২১ বছর। এই ২১ বছরে তিনি দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন গুরুত্ত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। এর মধ্যে রয়েছে কান্ট্রি প্ল্যানিং ম্যানেজার, হেড অব ক্রেডিট, সিনিয়র রিলেশনশীপ ম্যানেজার, এরিয়া অপারেশনাল ম্যানেজার, হডে অব অপারেশন, চট্টগ্রাম এবং কান্ট্রি ইন্ট্রিগেশন ম্যানেজার পদের দায়িত্ব।
আনিস এ খান ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ইংরেজী দক্ষতা, নিখুঁত কাজ করার ক্ষমতা এবং নেটওয়ার্কিং ক্যাপাসিটির জন্য সবার কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। ২০০৩ সালে যখন তার পোস্টিং দুবাইয়ে তখন তিনি আইডিএলসি’তে সিইও হিসেবে কাজ করার অফার পান। চ্যালেঞ্জটি তিনি গ্রহণ করেন এবং আইডিএলসি’কে বাংলাদেশের এক নম্বর নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করান। ছয় বছর আইডিএলসি’তে কাজ করার পর এপ্রিল ২০০৯ এ মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও হিসেবে যোগদান করেন এবং এখন পর্যন্ত কর্মরত আছেন।
উচ্চ বেতন আর বন্ধুসুলভ কাজের পরিবেশের জন্য মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে কাজ করার জন্য অনেক ব্যাংকারই মুখিয়ে থাকেন। ব্যাংকের কর্মীদের জন্য সন্মানজনক পারিশ্রমিক আর বিভিন্ন ভাতা, পরিচালনা পর্ষদের কাছ থেকে আদায় করার জন্য যে মানসিকতা আর সাহস লাগে- তার শতভাগ আনিস এ খান এর মধ্যে আছে।
জনপ্রিয় এই ব্যাংকার ব্যক্তিত্ব সম্প্রতি কথা বলেন দেশের চলমান অর্থনীতির নানা প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক প্রাইভেট খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম। সার্বিক ব্যাংকিং পরিস্থিতি বিবেচনায় এই ব্যাংকটি এখন কী অবস্থায় আছে?
আনিস এ খান: মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বয়স প্রায় ২০ বছর। একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক সময় লাগে। আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাংককে গড়ে তোলা এতো সহজ কাজ না। প্রথমে একটি কোর ব্যাংকিং সিস্টেম লাগে। এভরিথিং ইজ টেকনোলজি বেজড। তারপরে এফিসিয়েন্ট হিউম্যান রিসোর্সেস লাগে। তাদের প্রপার ট্রেনিং লাগে। তারপরে খুব ইম্পট্যান্টলি লাগে পর্যাপ্ত মূলধন। প্রতি বছর ব্যাংকের ব্যালেন্সশিটের আকার বড় হয়। প্রতি বছর আমাদের ডিপোজিট ও লোন পোর্টফোলিও বাড়ে। এর সাথে সাথে ক্যাপিটাল বাড়াতে হয়। এই সব নিয়ে আবার ইমেজ এবং তারপরে রেপুটেশন স্টাবলিশড করতে হয়। মানুষের মনে আস্থা প্রতিস্থাপিত করতে হয়। তারপরে একটি ব্যাংক যেকোন আকারে যায়। সে যেকোন ব্যাংকই হোক না কেন? ২০ বছর ধরে এই ব্যাংক চলছে। ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ব্যাংকে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আমার প্রধান নির্বাহী হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এই ব্যাংক এখন অনেক প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। দশ বছর আগে পৃথিবীব্যাপী মাত্র ২০০টি করেসপন্ডেট ব্যাংক ছিল আর এখন তা ৬০০ এর বেশি হয়ে গেছে। যার জন্যে এখন আমাদের আন্তর্জাতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে খুব সুবিধা হয়। যেমন, বিদেশ থেকে কষ্ট করে আমাদের ভায়েরা যে রেমিট্যান্স পাঠায়। সেটা পাঠানো এখন সহজ হয়। আমাদের ব্যাংক ছিল ২০-২৫ নম্বর ব্যাংক। এখন আমাদের ব্যাংক হয়ে গেছে ৫ নম্বর ব্যাংক। রেমিট্যান্স বিদেশ থেকে আসার ব্যাপারে। সিমিলারলি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট এর জন্যে বিদেশি ব্যাংকের সহায়তা লাগে। কনফারমেশন লাগে এলসিগুলোর। তারপরে ডিসকাউন্টিং লাইন লাগে যখন এলসি আসে, তখন তারা ডিসকাউন্ট করে দেয়। এগুলোর জন্যে কাজ করতে হয়। ব্যাংকের রেপুটেশন লাগে। ব্যাংকের ব্যালেন্সশিটের প্রফিটিবিলিটি লাগে। নন পারফর্মিং লোন সেটাও কন্ট্রোল করতে হয়। তাই সব মিলিয়ে একটা ব্যাংক স্টাবলিশড করতে অনেক সময় লাগে।
প্রশ্ন: একটি ব্যাংকে ১০ বছর ধরে এমডি ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খুব শক্ত কাজ। কোন দক্ষতার বলে এটি সম্ভব হয়েছে?
আনিস এ খান: আমি ২১ বছর স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকে দেশে বিদেশে কাজ করেছি।তারপরে এক নাগাড়ে ৬ বছর আইডিএলসি’তে ছিলাম। সব জায়গায়ই ভাল ছিলাম। তারপরে প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী ও সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আমাকে তাদের এই ব্যাংকে যোগ দিতে বললেন। তারা বললেন, তুমি ব্যাংকে আসো এবং আমাদের ব্যাংকটি হাতে নাও। আর এই ব্যাংক থেকেই তুমি রিটায়ার্ড করবে। সে কথা তারা রেখেছেন। আমি ১০ বছর আগে জয়েন করেছি আর এই ডিসেম্বরের ১ তারিখে রিটায়ার্ড করবো। কেন আমি থাকতে পেরেছি? হ্যাঁ, অন্য ব্যাংকে ৩-৪ বছর পর পর ব্যাংকের এমডি সিইও চেঞ্জ হয়। আমাদের ক্ষেত্রে যেটি হয়েছে যে, আমি মনে করি আমাদের বোর্ড বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বোর্ড। এখানে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় এন্টারপ্রেনাররা আছেন। তারা অনেক ম্যাচিউরড। ব্যাংক ম্যানেজমেন্টকে তারা অনেক পাওয়ার দিয়েছেন এবং ট্রাস্ট করেন। আমাদের জবাবদিহিতাও অনেক হাই এবং প্রতিটি বোর্ড মিটিংয়ে আমরা প্রেজেন্টেশন দেই- আমরা কোথায় আছি না আছি এবং দরকার হলেই তাদেরক আমি ই-মেইল পাঠাই। একটা গ্রুপ করেছি ডিরেক্টরদের। আজকে সকালেও আমি তাদেরকে মেইল করেছি। এটি দুই দিকের ব্যাপার। আরেকটি ব্যাপার হলো, যে সিইও হবেন, তাকে ট্রাস্ট করতে হবে। কাজ করে সিইওকেও দেখাতে হবে যে, তিনি টিম নিয়ে সামনে দিকে ব্যাংককে নিয়ে যাচ্ছেন, ব্যাংক বড় করছেন এবং সব জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। যখন বোর্ড দেখে তাদের স্ট্যাটেজিতে ব্যাংক চলেছে তখন তারা তখন আর কোন ডিস্টার্ব করে না। একজনকেই থাকতে দেয়। এইরকম উদাহরণ কিন্তু আরও আছে। যেমন, ইস্টার্ন ব্যাংকের আলী রেজা ইফতেখার। তিনিও অনেক বছর ওই ব্যাংকে আছেন। হয়তো ১০-১২ বছর হবে।
প্রশ্ন: আপনার ব্যাংকের বিগত চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টররা আপনাকে কতোটা সহযোগিতা করেছেন ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রে?
আনিস এ খান: আমার বোর্ড মেম্বারদের গাইডেন্স বা মেন্টরিং না পেলে আমি তো এই জায়গায় আসতে পারতাম না? প্লাস এ্যাট দ্যা সেম টাইম তারা সবসময়ই আমাকে এনকারেজ করে এসেছেন। প্রতিটি মিটিংয়ে তারা নতুন নতুন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন এবং রিপোর্টিং নতুনভাবে চান। যেমন, মঞ্জুর এলাহী গত মিটিংয়ে বললেন যে, তোমাদের এসএমই লোন এবং রিটেইল লোন কতো বাড়ছে তা আমি দেখতে চাই? কারণ হোলসেল ব্যাংকিংয়ে তো হেভি কনসেনট্রেশন করা তো ঠিক না? এসএমই বাড়াতে হবে এটি বাংলাদেশ ব্যাংক চায়। আর রিটেইল ও বাড়াতে হবে।আমাদের লোকেরা তাই এরজন্য আরও বেশি কাজ করছে যাতে তা বাড়াতে পারে। এটি একটি ডিরেকশন যার কারণে আমাদের কাজটা একদিকে গাইডেড হলো। সিমিলারলি আমাদের একটা রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটি আছে। যা দেখেন ড. আরিফ দৌলা। আপনি জানেন, তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যাথমেটিস এ পিএইডি করেছেন। তিনি অনেকভাবে ডিপ এনালাইসিস করতে পারেন। আমাদেরকে শেখান- কিভাবে একজন কাস্টমারের ব্যবসা, কাস্টমারের ইনটেনশন এবং কাস্টমারের ভবিষ্যত কী হবে না হবে এবং ফাইন্যান্সিয়ালগুলো এনালাইসিস করেন। আর আগে থেকে প্রেডিক্ট করেন কোনটা খারাপ হতে পারে না পারে। যাতে করে আমরা প্রিপারেশন নিতে পারি। এই ক্ষেত্রে আমার আরেকটি কথা মনে পড়ে। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী প্রায়ই বলেন যে, এই ব্যাংক আমার নয়। আমি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। আমি করেছি কয়েকজনকে নিয়ে কিন্তু এই ব্যাংক আমার নয়। আমার ব্যবসা আমার। কারণ সেখানে আমি পার্সোনাল গ্যারান্টি দিয়েছি। আমার ওয়াইফ পার্সোনাল গ্যারান্টি দিয়েছেন। আমার ছেলে মেয়েও দিয়েছে।আমার বাড়ি ঘর হয়তো মর্গেজ আছে সব জায়গায়। তাই ওই ব্যবসা পুরোপুরি আমার। কিন্তু ব্যাংক আমার নয়। আমার শুধু ছোট্ট একটা ক্যাপিটাল আছে। ব্যাংক হলো জনগণের। জনগণের টাকায় ব্যাংক চলে। তাই ব্যাংকের প্রতি তাদের রেসপন্সিবিলিটি ও অ্যাকাউনটিবিলিটি অনেক বেশি বলে তারা মনে করেন। তাই আমাদেরকে টোটাল ইন্ট্রিগ্রিটি ও অনেস্টি নিয়ে চলতে হয়। আমাদের ব্যাংকে জিরো টলারেন্স টু এনি সট অব আনফেয়ার মিনস।
প্রশ্ন: প্রাইভেট ব্যাংক ও বিদেশি ব্যাংকের ব্যাপারে মানুষ যতোটা আগ্রহী সরকারি ব্যাংকের ব্যাপারে ততোটা নয়? এমনটা হওয়ার কারণ কী?
আনিস এ খান: না, সরকারি ব্যাংকে মানুষ টাকা পয়সা রাখতে চায়। আমাদের জনগণের আস্থা আছে সরকারি ব্যাংকের উপরে। ব্যক্তি ও অর্গানাইজেশনের অনেক ডিপোজিট আছে সরকারি ব্যাংকে। আস্থা আছে ঠিকই। আর সরকারি ব্যাংকগুলো এখন অনেক উন্নত হয়েছে। তারাও কোর এবং অনলাইন ব্যাংকিং করছে। সরকারি ব্যাংকও চেষ্টা করছে। হ্যাঁ-কিছু অনাস্থা তৈরী হয়েছে সরকারি ব্যাংকের ঋণ খেলাপীর কারণে। তবে তারা চেষ্টা করছে এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে। আশা করি তারা এই কাজেও সফল হবে।
প্রশ্ন: ব্যাংকের পাশাপাশি নন ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিউশনগুলো কাজ করছে। তাদের কাজ কী, তারা কী করছে?
আনিস এ খান: তাদের একটা সুবিধা হলো, তাদেরকে ক্যাশ নিয়ে এবং রিটেইল কাস্টমার নিয়ে ডিল করতে হয় না। কারণ তারা বেশিরভাগই হোলসেল ব্যাংকিং করে এবং স্ট্র্যাকচারড ফাইন্যান্স ব্যবসাটা সুন্দর করে করতে পারে। তাদের হাতে অনেক সময়। তারা কিন্তু ভেরি হাইলি ট্রেইন্ড প্রফেশনালস এবং হাইলি এডুকেটেড মানুষ সব ওখানে। তাই আইডিএলসি, আইপিডিসি বা লংকা বাংলা তারা সুন্দরভাবে এই সিন্ডিকেশন লোন করতে পারে। আবার আমাদের জন্যে কতগুলো আইন আছে যেগুলো আবার তাদের জন্যে প্রযোজ্য নয়। যেমন, আমরা গাড়ির লোন এক্স এর উপরে দিতে পারি না। হোম লোন ওয়াই এর উপরে দিতে পারি না। কিন্তু তাদের কোন লিমিট নেই। তারা খুব সাকসেসফুল হয়েছে হোম লোনে। হোম লোন একটি চমৎকার প্রডাক্ট ওই সব নন ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সিটিটিউশনগুলোর জন্যে। এছাড়া তাদের আরও কিছু প্রডাক্ট আছে- লিজেজ ফর এ এক্সামপল। অভারঅল তাদের জন্যে খুব প্রফিট্যাবল ছিল এক সময়ে। এখন অবশ্য তা কিছুটা কমে গেছে। তারাও টার্ম লোনস করে তারাও ওয়ার্ক অর্ডার ফাইন্যান্সিং করে।
প্রশ্ন: সেখানে কি কালো টাকা সাদা করার কোন ব্যাপার আছে- বড় ধরণের ইনভেস্টের মধ্য দিয়ে?
আনিস এ খান: না, না-সম্ভব না। আজকাল পুরো দেশব্যাপী কেওয়াইসি এন্ট্রি মানি লন্ডারিং প্রাকটিসেস এবং রুলস ও আইনগুলো একেবারে এম্বেডেড ইন দ্যা সিস্টেম। আমরা এগুলো এখন অটোমেশনেও নিয়ে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন এর জন্য মোবাইল ব্যাংকিং বিষয়ে আপনি বিশেষজ্ঞ একজন ব্যাংকার ব্যক্তিত্ব হিসেবে কী ভাবছেন?
আনিস এ খান: এটি খুব ভাল প্রশ্ন। আপনি আমার ফেভারিট সাবজেক্টে চলে এলেন আর তা হলো- ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন। এই ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন নিয়ে আমার সৌভাগ্য হয়েছে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে একটি পেপার প্রেজেন্ট করার গত বছর। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের একটি শাখা শহরে খুললে আরেকটি শাখা গ্রামে করতেই হবে। শহরের শাখা খুব তাড়াতাড়ি লাভজনক হয়ে যায়। কিন্তু গ্রামের শাখা ৩/৪/৫ বছরে এমনকি কোন সময়ই লাভের মুখ দেখে না। এটি হলে আমাদের অন্যান্য প্রফিটগুলো ক্র্যাক ডাউন হয়। তাই আমরা আজকাল খুব রিলাকটেন্টলি ব্র্যাঞ্চ নেটওয়ার্ক এক্সপান্ড করছি। আমাদের ১১৪টি ব্রাঞ্চ হয়ে গেছে। আগে ১০-১২টি করে প্রতি বছর করতাম। কিন্তু এখন বছরে ২-৪টির বেশি করছি না। কী করছি আমরা? আমরা করছি এজেন্ট ব্যাংকিং সেক্টর। আমরা সুন্দর মডেল করেছি এবং অলরেডি সারাদেশে আমাদের ১১৪টি এজেন্ট ব্যাংকিং সেন্টার হয়ে গেছে। আর এই বছরের শেষে আমরা আশা করি তা ২০০ হয়ে যাবে। তারা ১৭টি সার্ভিসেস দিচ্ছে। রেমিট্যান্স, লোনস, ডিসবাস, কালেকশন এবং বায়োমেট্রিকসের মাধ্যমে আঙুলের ছাপে টাকা তুলছে এবং টাকা জমা দিচ্ছে। এই কাজে আমাদের ব্যাংকের যে ব্রাঞ্চ কাছে থাকে সেই ব্রাঞ্চ তাদেরকে সাপোর্ট করে। এটা হলো একটা পার্ট। আরেকটি হলো ফোনের মাধ্যমে। হ্যাঁ, যত বেশি স্মার্ট ফোনের প্রসার হবে তত বেশি মানুষ ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকিং করবে। ব্যাংকিং শাখা আমেরিকাতে কমে গেছে। আমি আরও প্রেডিকশন দিতে চাই-এতোগুলো এটিএম আমরা করেছি। কোন একটি ব্যাংক ৫ হাজার এটিএম করেছে। আমরা ৩০০ করেছি। মানুষ এটিএমে যাবে না। আপনি ফোনের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার করবেন। আমরা চায়না ইউনিয়ন পে এর বাংলাদেশে প্রধান ইস্যুয়িং ব্যাংক হয়েছি। চালু করে দিয়েছি। এখন আমার বাইরে গেলে কোন টাকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমার ফোনে ইন্টারনেট ব্যাংকিং আছে। সেখানে চায়না ইউনিয়ন পে এর কিউ আর কোড আছে। আমরা অলরেডি এক হাজার দোকানে কিউ আর কোড দিয়ে দিয়েছি। আমি যদি সেখানে যাই একটা কিছু কিনলাম- বললেন যে, ২৩০৫ টাকা।আমি তার দোকানে যে কিউ আর কোড আছে তা স্ক্যান করলাম। ২৩০৫ টাকা লিখলাম- সেন্ড, ফিনিশড। সাথে সাথে তিনিও একটা ম্যাসেজ পেয়ে যাবেন। উনার অ্যাকাউন্টও ইন্সট্যান্ট ক্রেডিট। ফোনের মাধ্যমে আমিও আপনাকে ট্রান্সফার করতে পারবো। তাই ব্যাংকের শাখা কমে যাবে। এজেন্ট ব্যাংকিং ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং আসবে আর বিকাশ তো খুব সাকসেসফুল।
প্রশ্ন: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আপনাদের সাকসেস কেমন এসেছে আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা কী?
আনিস এ খান: খুব চমৎকার সাকসেস আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। আপনাকে বললাম আমাদের ১১৪টি শাখা অলরেডি হয়ে গেছে এবং এর মাধ্যমে আমাদের একশ ৬০ কোটি টাকার উপরে ডিপোজিট এসে গেছে। প্রায় ৪০ হাজার অ্যাকাউন্ট হয়ে গেছে। এটি যতো প্রসার হবে, ততো আমাদের ডিপোজিট বাড়বে। বিকাশ সাকসেস হয়েছে। আমরাও মোবাইল ফোনের লাইসেন্স নিয়েছিলাম। বাংলা ক্যাশ নামে একটা প্রডাক্ট ডিজাইন করেছিলাম। টিভিসিও করেছিলাম। কিন্তু পরে যখন দেখলাম-ওরা এতো সাকসেসফুল হয়ে গেলো। কস্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ইজ সো হাই। আরও হবে সামনে ভবিষ্যতে। তাই দেখে আমরা আর গেলাম না।বিকাশ করুন ডাচবাংলা ব্যাংক করুক তার মাধ্যমেই আমরা করবো। আমরা বিকাশের সাথে টাই আপ করেছি। বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্স বিকাশের মাধ্যমে গ্রামে গঞ্জে চলে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: টি ক্যাশ- সেনাবাহিনীর ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রডাক্ট। তারাও বেশি সফল হতে না পেরে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির সাথে গেছে। আপনারা কাদের সাথে যাচ্ছেন নাকি ডিরেক্ট?
আনিস এ খান: না- আমরা যাব না মোবাইল ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল সলুউশনে। আমরা সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি। লাইসেন্স সারেন্ডার করে দিয়েছি। আমরা বিকাশের সাথে সংযুক্ত হয়েছি।
প্রশ্ন: একটা সময় দেখলাম- একটা বুথের মধ্যে ৬টি ব্যাংকের কাস্টমাররা ইউজ করতে পারতেন- সেই রকম ব্যাপার?
আনিস এ খান: না- সেইরকম ব্যাপার না। বিকাশের সাথে আমাদের এগ্রিমেন্ট এই যে, বিদেশ থেকে আমাদের রেমিট্যান্স আসলো- আগে আমরা পাঠাতাম সোনালী ব্যাংক নীলফামারী ব্র্যাঞ্চে, জনতা ব্যাংকের সৈয়দপুর ব্র্যাঞ্চে এই রকম। কিন্তু এখন বিকাশের মাধ্যমে তা সরাসরি গ্রামে চলে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: আগে ব্যাংকের কাছে মানুষ আসতো। আর এখন মানুষের কাছে ব্যাংক যাচ্ছে। এই পরিবর্তন দেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব রাখছে?
আনিস এ খান: আমি বলবো যে, এটি দ্বিপাক্ষিক। আমরাও যাবো কাস্টমারের কাছে। কাস্টমাররাও আসবেন আমাদের কাছে। আমি সবসময়ই পছন্দ করি- কাস্টমারের কাছে যেতে। কাস্টমারের মিল ফ্যাক্টরি দেখতে। কাস্টমার কী করছেন। তাদের প্রডাক্ট কী, কিভাবে তারা মানুষের সাথে ইন্টার্যাক্ট করছে। আমি বুঝতে পারি- বেটার আন্ডারস্টান্ডিং হয়।
প্রশ্ন: লোন পরিশোধ না করলে তখন যান?
আনিস এ খান: না, না, না- এমনিই ভিজিটে যাই। লোন তো চলছেই। ভাল কাস্টমার তখন যাই। চলছে না তখনও যাই। যেসব কাস্টমার সুন্দর চলছে। আমাদের তো এতোগুলো ডিএমডি আছেন। এতো সিনিয়র আছেন। তারাই ডে টু ডে ব্যবসাটা করবেন। আমার তো টু ডে ব্যবসা করার কোন প্রয়োজন নেই? আমার দরকার হলো স্ট্যাটেজি, কমপ্ল্যায়েন্স এবং তারপরে গর্ভমেন্ট রিলেশনশিপ। আবার নন পারফর্মিং লোনের ক্ষেত্রে আমি স্ট্রেচ বেশি দেই। কারণ এটা আমাদের জন্যে বিরাট ডিজিস। নন পারফর্মিং লোনের জন্যে যেকোন জায়গায় আমি দেখা করতে রাজি। আমার অফিস হোক তার অফিস হোক কিংবা তার বাড়ি। যেকান জায়গায় আমি বসতে রাজি।
প্রশ্ন: ব্যাংকিং সেক্টরের সব ব্যাংকই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আন্ডারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকার আপনাদের কী কী সুবিধা দিয়েছে? আরও কী সুবিধা চান ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে আরও সুশৃংখল হতে?
আনিস এ খান: আমি সবসময়ই বলি- বাংলাদেশ ব্যাংক হলো কেয়ারিং রেগুলেটর। সরকারের অনেক অর্গান বা শাখা প্রশাখা আছে। কিন্তু আমাদের ইন্টার্যাকশন হলো মেইনলি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে। সবকিছু করতে হয় থ্রু বাংলাদেশ ব্যাংক। যেকোন সময় আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসারদের সাথে দেখা করতে পারি। চিঠিপত্র লিখলে দ্রুত তারা উত্তর দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আমাদের সম্পর্ক সুদৃঢ়। গভর্নর ত্রৈমাসিক সিইও’দের সাথে মিটিং করেন। সেখানে দেশের সার্বিক আর্থিক অবস্থা জানা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সবদিক দিয়ে সহযোগিতা করে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন গভর্নর এর সাথে আপনার কেমন ইন্টারঅ্যাকশন ছিল? কী ধরণের সহযোগিতা করতেন তারা?
আনিস এ খান: আমি প্রথমে পেলাম ড. ফখরউদ্দীন আহমেদকে। আমি তখন আইএলডিসিতে ছিলাম। উনি খুব হ্যান্ড জোন ছিলেন। মাঝে মাঝে ডিরেক্ট ফোন দিতেন। যখন কল মানি ইন্টারেস্ট বেড়ে যেতো তখন বলতেন- কোন ব্যাংক তোমার কাছ থেকে এতো টাকা ইন্টারেস্ট চাইলো? তিনি চাইতেন রিপোর্ট তাকে ডিরেক্টলি পাঠাই ফ্যাক্স মেশিনে। তখন তো ফ্যাক্স মেশিনই চলতো। এরপরে ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদ সাহেব। তিনিও খুব ভাল এবং এক্সেসিভেন ছিলেন এক সময়। তার অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। খুব সোজা পথে সাধারণভাবে সব কাজ করতেন। সোজা পথে হাঁটতেন। এরপরে ড. আতিউর রহমান আসলেন। অন্য ধাঁচের, অন্য ব্যাক গ্রাউন্ডের মানুষ। তার খুব স্পৃহা। তিনি বলতেন ব্যাংককে তিনি গ্রামে নিয়ে যাবেন। সাউথ এশিয়াতে প্রথম সোলার পাওয়ারে আমরা ফাইন্যান্স করেছিলাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার সাথে আমি গিয়েছিলাম। তিনি চাইতেন প্রতি শুক্রবার তার সাথে আমরা গ্রামে যাই। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের সম্মান করি।কৃষক ভাইদের ডাকি। ডেকে তাদের হাতে লোন দেই। তিনি চেয়েছিলেন, আমরা মহিলা উদ্যোক্তা গড়ে তুলি। এরপরে এখন এসেছেন ফজলে কবীর। তার সম্পর্কে আমার বলা মুশকিল। কারণ তিনি আমার ছোটবেলার বন্ধু। স্কুলে এবং ফৌজদারহাট ক্যাটেড কলেজে আমরা একসাথে পড়েছি। পরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন আর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু বিসিএস এ আমরা একসাথে পাশ করি। তিনি ফাইন্যান্স সেক্রেটারী হলেন। আর আমি বিসিএস এ না গিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরে চলে আসি। তিনি আমার বন্ধু। তাই তার সাথে আমার কাজ করা অনেক সহজ। আমি তার কাছে ডিমান্ড করতে পারি। তিনিও আমাকে ডিরেক্ট অনেক কিছু বলতে পারেন। যা অন্য সিইওদের পারেন না কিন্তু আমাকে পারেন বলতে। তার সাথে কাজ করতে তাই খুব ভাল লাগছে।
প্রশ্ন: এখনকার অর্থমন্ত্রীর ব্যাপারে কী বলতে চান?
আনিস এ খান: পারিবারিকভাবে খুব ভালভাবে ছোটবেলা থেকেই চিনি- সেটা অন্য সম্পর্ক। তিনি খুব কিন(আগ্রহী)। তিনি চান- নন পারফর্মিং লোনের পরিমাণ কমানো হোক। অর্থমন্ত্রী হওয়ার দ্বিতীয় দিনেই তিনি আমাদের সময় দিয়েছেন, দেখা করেছি। তার জন্যে আমরা কৃতজ্ঞ। ৪৫ মিনিট সময় দিয়েছিলেন। এরপরে আবার তিনি আমাদের সাথে দেখা করেছেন। তিনি চাচ্ছেন- ডিপোজিট রেট কমে যাক এবং নন পারফর্মিং লোন কমানো হোক। আমরাও বলেছি- কেমন করে কমানো যায়? নন পারফর্মিং লোনের জন্যে রিটস এবং হাইকোর্ট-এই বিষয়ে তো আমরা কিছু বলতে পারি না। এইগুলো স্মুথ করতে হবে। কারণ নন পারফর্মিং লোন বেড়ে গেলে ব্যাংকের লিকুইডিটি ড্যামেজ হয়। এছাড়া নন পারফর্মিং লোন কমলে ডিপোজিট রেটও কমবে। প্রধানমন্ত্রীও চান আমরা সিঙ্গেল ডিজিটে ইন্টারেস্ট রেট নিয়ে আসি। এই ব্যাপারে সবাই মিলেমিশে চেষ্টা করতে হবে। একা কারও পক্ষে সম্ভব না।
প্রশ্ন: প্রযুক্তির এই আধুনিকায়নের সময়ে পেপারলেস ব্যাংকিং কবে হবে?
আনিস এ খান: আমরা অনেকটা পেপারলেস। আগে আমরা ওয়ার্ক অর্ডার লিখতাম যখন জয়েন করেছিলাম ১৯৮২ সালে। আমি তখন প্রিপেয়ার করতাম। আরেকজন চেক করতেন আর আরেকজন তা অ্যাপ্রুভ করতেন। আজকাল তো সবকিছু্ অনলাইনে চলে গেছে। এভরিথিং ইন অনলাইন। তারপরে ঠিঠিপত্রও কমে গেছে। সবকিছু ই-মেইলের মাধ্যমে হচ্ছে। তাই আমরা অনেকটাই এখন পেপারলেস।
প্রশ্ন: আপনার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল মিডিয়া থেকে। আপনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিউজ প্রেজেন্টার ছিলেন, বিতর্ক করতেন। ব্যাংকিং সেক্টরে মিডিয়ার প্রভাব কতোটা?
আনিস এ খান: অনেক প্রভাব মিডিয়ার। এই যে পাঁচটা ব্যাংক ব্লাক লিস্টের যে সংবাদ প্রচার করা হলো টিভির স্ক্রলে। আসলে এই সংবাদ আমি দেখেছি, খোঁজ নিয়ে জেনেছি সঠিক নয়। এই সব কাজ কেন করা হয়- না জেনে? তারপরে কিন্তু নিউজে আবার আসলো যে, না- আমাদের কোন ব্যাংক ব্লাক লিস্টে নেই। এই সব কাজ কেন করা হয়? আমার কোন ডিউ কোন বিদেশ প্রতিষ্ঠানে নেই। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম কোথাও আসেনি। তারপরেও দেয়া হলো। আমার প্রতিষ্ঠানের রেপুটেশনের উপরে প্রভাব পড়ে। তাই না জেনে এই সব সংবাদ প্রচার করা ঠিক না।
প্রশ্ন: ভাল ব্যাংকের সাথে রুগ্ন ব্যাংকের মার্জারিং করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নতুন আইন কানুন তৈরীর প্রক্রিয়া চলছে- এই বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?
আনিস এ খান: আপনি আবার আমার প্রিয় বিষয়ে চলে এসেছেন। ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও গ্রিনলেজের মার্জার হয়েছিল আমার হাতে। আমরা তখন শিখেছি কিভাবে মার্জার করতে হয়। এখন ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশে কতো শক্ত অবস্থানে আছে। পরে তারা আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকও কিনে নিয়েছে। এখন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত। ভাল কাস্টমার প্রোফাইল এবং ভাল প্রফিট তাদের এখন। আরেকটা উদাহরণ দেই সবসময়ই- ব্যাংক এশিয়া। তারা আমাদের মতই ২০ বছরের পুরনো ব্যাংক। তারাও তিনটা ব্যাংক কিনে নিলো। এটা করে তারা আমাদের প্রায় ডাবল সাইজ হয়ে গেছে ব্যাংক এশিয়া। তাই সরকার যদি মার্জার করতে দেয় তাহলে ভাল হবে। আমাদের ব্যাংকগুলো বড় হবে। ক্যাপিটাল অ্যাডিকুয়েসির একটা ব্যাপার আছে। ইন্ডিয়াতে খুব ভালভাবে হয়ে গেলো। মার্জার তাই আমাদের এখানেও দরকার।
প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাই?
আনিস এ খান: এই প্রশ্ন এখন সকাল বিকাল আমাকে অনেকেই করছেন। ৩৮ বছর কাজ করলাম- এটি খুব স্ট্রেসডফুল জব। বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, শেয়ারহোল্ডার, মিডিয়া এবং কাস্টমার সবার কাছেই জবাবদিহি করতে হয়। দিনে রাতে কাজ করতে হয়। খুব স্ট্রেসড নিতে হয়। বয়স হয়েছে তাই এই চাপ আর নিতে পারি না। আমি তাই কোন নন এক্সিকিউটিভ রোলে চলে যাবো। কোন ব্যাংকের ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর হবো কিংবা চেয়ারম্যান অডিট কমিটি হবো- যেটা তারা আমাকে দেন। এছাড়া আমি যা শিখেছি তা ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে দিয়ে যেতে চাই।