বেশ দীর্ঘ বিরতির পর বাংলাদেশ নারী দলের সামনে আসে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ। একেকটি সিরিজ খেলে যে ভুলত্রুটি খুঁজে বের করেন খেলোয়াড়-কোচরা, তার সবটাই ভুলে বসে থাকেন আরেকটা সিরিজ আসার আগে! এবার বিরতি যেমন ১৪ মাসের।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কায় বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলে যে ঘাটতি বের করেছিল দল, এতদিন পর তা মনে রাখা কঠিন কাজ। এবার সাউথ আফ্রিকা সফর দিয়ে ১৪ মাসের বিরতি ভাঙছে সালমা-রুমানারা। এবার ব্যতিক্রম হল সিরিজ শেষ হওয়ার পরও কয়েকমাস টানা খেলার মধ্যে থাকবে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল।
সাউথ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশ খেলবে পাঁচটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ। শনিবার দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিটে বিদেশ বিভূঁইয়ে যাবে নারী দল। তার আগে বিকেলে মিরপুরের একাডেমি ভবনের সামনে হয়ে গেল আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন।
দুই ফরম্যাট মিলে বাংলাদেশ দল ১৬ সদস্যের। দলে তিন বিদেশি কোচিং স্টাফ। হেড কোচ ডেভিড ক্যাপেল, সহকারী কোচ ভারতের সাবেক নারী ক্রিকেটার দেবিকা পালশিকর ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত একজন ফিজিও। তিনিও ভারতের সাবেক নারী ক্রিকেটার। ট্রেনার হিসেবে যাচ্ছেন সাবেক ক্রিকেটার আনোয়ার হোসেন। দেশের নারী ক্রিকেটের দেখভালের দায়িত্বে থাকা নাজমুল আবেদিন ফাহিম যাচ্ছেন দলের সঙ্গে।
সবাই ক্যামেরাবন্দী হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন ওয়ানডে অধিনায়ক রুমানা আহমেদ ও টি-টুয়েন্টির নেতৃত্বে ফেরা সালমা খাতুন। দীর্ঘদিন পর খেলার সুযোগ এলেও আত্মবিশ্বাসে মরিচা পড়েনি বলে জানালেন ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘অভিজ্ঞতা অর্জন করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য থাকবে। তাছাড়া এ ১৪ মাস যে বসেছিলাম সেটা নয়। আমরা এরমধ্যে অনেক কাজ করেছি এবং ম্যাচ প্র্যাকটিস করেছি। পারফরম্যান্স আগে যেটা ছিল আগে সেটা ধরে রেখে আরো ভালোর দিকে যেতে হবে। সবমিলিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী আছি যে ভালো কিছু করতে পারবো।’
পাশেই দাঁড়ানো বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক সালমার কাছে প্রশ্ন, এত বছর ধরে খেলার পরও কেন অভিজ্ঞতা অর্জনকে বড় করা দেখা হচ্ছে। আমরা কী তাহলে অনেক পিছিয়ে?
সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিমত জানালেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার, ‘আমার মনে হয় না আমরা পিছিয়ে আছি। অভিজ্ঞতা তো অবশ্যই দরকার আছে। ১৪ মাস পর একটা ট্যুর খেলতে যাচ্ছি অবশ্যই প্রত্যাশা থাকবে এখানে ভালো কিছু যেন করি। স্মার্ট ক্রিকেট খেলি। পজিটিভ থাকি, দেশের জন্য একটা ভালো রেজাল্ট করতে পারি।’
রুমানা ও সালমা মনে করেন, তারা যত বেশি ম্যাচ পাবে ততই উন্নতি করবেন। টানা ম্যাচ খেলে উন্নতির রাস্তা খুঁজে বের করার সময় যে এখন সেটি বুঝতে পারছেন দুই অধিনায়ক।
সাউথ আফ্রিকা সফর শেষ হতেই একে একে মালয়েশিয়ায় এশিয়া কাপ, নেদারল্যান্ডস সফর, টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাই ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ। সামনের সময়টা কাজে লাগানোর মিশনে প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই উন্নতির সড়কে উঠতে চান রুমানা।
‘এপ্রিল মাস চলছে, মে মাসে আমাদের খেলা। এ বছর এটাই আমাদের প্রথম খেলা। আমি মনে করি আমাদের আসল লক্ষ্য টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং। আমরা এখান থেকেই শুরু করতে যাচ্ছি। ভুল-ত্রুটি, অনেক কিছু শোধরানোর জায়গা আছে। এখানে পাঁচটা ওয়ানডে তিনটা টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলব। শুরুর একটা-দুইটা ম্যাচে একটু পিছিয়ে থাকলেও আমরা ধরতে পারবো।’
সালমা বলেন, ‘সাউথ আফ্রিকা ট্যুর থেকে শুরু হচ্ছে আমাদের, এরপর অনেক খেলা আছে। আমরা যত ম্যাচ খেলবো আমাদের ততই উন্নতি হবে। আমরা কিন্তু ১৪ মাস কোনো ম্যাচ পাইনি এজন্য একটু পিছিয়ে গেছি, আপনি যেটা বললেন আসলে পিছিয়ে যাইনি। আমরা কিন্তু যার যার এলাকায় সবাই প্র্যাকটিস করেছি। যার যেখানে প্রয়োজন কাজ করেছি। উন্নতিও করেছি। যেহেতু ধারাবাহিকভাবে ম্যাচ পাব, আশা করছি ভালো কিছু নিয়েই ফিরব আমরা।’
২০১৬ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সালমাকে সরিয়ে নেতৃত্বে আনা হয় পেসার জাহানারা আলমকে। ওই বছরের শেষ দিকে ওয়ানডে অধিনায়ক করা হয় রুমানা আহমেদকে। পরে টি-টুয়েন্টির নেতৃত্বও পান তিনি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সালমা এমন সময়ে অধিনায়কত্ব ফিরে পেয়েছেন যখন কিনা সামনে অনেক খেলা। শুনে একটু অবাকই হয়েছিলেন। এখন সালমার ভাবনায় শুধুই ব্যাটিং-বোলিং আর নেতৃত্ব। পারফরম্যান্স দেখিয়ে দেশসেরা অলরাউন্ডারের তকমা পুনরুদ্ধার করতে চান তিনি।
‘লম্বা সময় পর একটু তো অবাক হওয়ার মতোই বিষয়। কারণ দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে আমি নেতৃত্বে ছিলাম না। আগে যেখানে ছিলাম অবশ্যই সেখানে ফিরে যেতে চেষ্টা করবো।’
নারী ক্রিকেট দলের সাউথ আফ্রিকা সফরের সূচি
২ মে প্রস্তুতি ম্যাচ (পচেফস্ট্রুম)
৪ মে প্রথম ওয়ানডে (পচেফস্ট্রুম)
৬ মে দ্বিতীয় ওয়ানডে (পচেফস্ট্রুম)
৯ মে তৃতীয় ওয়ানডে (কিম্বার্লি)
১১ মে চতুর্থ ওয়ানডে (কিম্বার্লি)
১৪ মে পঞ্চম ওয়ানডে (ব্লুমফন্টেইন)
১৭ মে প্রথম টি-টুয়েন্টি (ডায়মন্ড ওভাল)
১৯ মে দ্বিতীয় টি-টুয়েন্টি (মানাঙ্গো ওভাল)
২০ মে তৃতীয় টি-টুয়েন্টি (মানাঙ্গো ওভাল)
বাংলাদেশ নারী দল: রুমানা আহমেদ (অধিনায়ক, ওয়ানডে), সালমা খাতুন (অধিনায়ক, টি-টুয়েন্টি), নিগার সুলতানা জ্যোতি, ফারজানা হক, খাদিজাতুল কুবরা, ফাহিমা খাতুন, জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা, শামিমা সুলতানা, নাহিদা আক্তার, পান্না ঘোষ, সুরাইয়া আজমিন ছন্দা, শারমিন সুলতানা, সোবহানা মোস্তারি, মুর্শিদা খাতুন ও জাহানারা আলম।