চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘যতটুকু ভালোবাসা প্রাপ্য ছিল তার চেয়ে বেশি পাচ্ছি’

‘শান’ নির্মাতা এম রাহিম

চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে প্রথম ছবি ‘শান’ বানিয়ে গেল ঈদে আলোচনায় এসেছেন এম রাহিম। বড় বাজেটে অ্যাকশন ধর্মী এ ছবির মধ্য দিয়ে রাহিম তার নির্মাণ মুন্সিয়ানায় মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। সম্প্রতি চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে আলাপে পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন বলছিলেন, ‘প্রথম ছবিতে রাহিম যে মেকিং সেন্স দেখিয়েছে এতে আমি মুগ্ধ হয়েছি।’

‘লাভ ম্যারেজ’সহ একাধিক ব্যবসা সফল ছবির পরিচালক শাহীন সুমন মনে করেন, দর্শকের পালস বুঝে রাহিম ছবি বানিয়েছেন। তার মতো নতুন নির্মাতারা এগিয়ে এলে আরও ভালো সিনেমা নির্মাণ হবে। কথায় কথায় এম রাহিমকে সিনেমা নির্মাণে নিয়মিত হওয়ার কথা বার বার বলছিলেন ‘শান’-এর সঙ্গে ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘বিদ্রোহী’ ছবির পরিচালক শাহীন সুমন।

অনেকেই বলছেন, ‘শান’-এর মাধ্যমে বহুদিন পর চলচ্চিত্র একজন ভালো নির্মাতা পেল! প্রথমবার ছবি বানিয়ে এমন মুন্সিয়ানা কম চোখে পড়ে! তবে অনেকেই নাটক, টিভিসি বানিয়ে নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রাখলেও রাহিম শুরু থেকেই ছিলেন আড়ালে।

তিনি বলেন, প্রথম ছবি বানিয়ে যে বিশ্বাস অর্জন করেছি পরের কাজগুলোতে যেন একই বিশ্বাস ধরে রাখতে পারি সেই চেষ্টা থাকবে। যারা আমার কাজ দেখে প্রশংসা করছেন সবার কাছে কৃতজ্ঞতা। সাপোর্ট পেলে নিশ্চয়ই আরও ভালো করতে পারবো।

শাকিব খানের ‘নবাব’, রায়হান রাফীর ‘পোড়ামন ২’, পশ্চিমবঙ্গের রাজ চক্রবর্তীর প্রডাকশনের ‘প্রেম আমার ২’, ‘নূরজাহান’ এর সহকারী পরিচালক ছিলেন এম রাহিম। সৃজিত মুখার্জির ‘ইয়েতি অভিজান’-এর প্রি প্রডাকশনের সহকারী হিসেবে ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। রাহিমের কথা, শুরু থেকেই আমার ধ্যান ধারণা ছিল ফিল্ম নিয়ে। এজন্য অন্য কোনো কাজ করিনি।

এম রাহিম জানান, ১৯৯৮ সাল থেকে তার সিনেমা বানানোর ইচ্ছা হয়। প্রথম সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন শাকিব-সাহারা অভিনীত ‘প্রেম কয়েদী’ ছবির। পরে শাকিব খানের ‘জান আমার জান’, ‘জান কোরবান’, ‘তোর কারণে বেঁচে আছি’সহ ৯টি ছবির সহকারী পরিচালক হয়েছিলেন। সর্বশেষ শাকিবের ব্লকবাস্টার ছবি ‘নবাব’ এও ছিলেন এম রাহিম।

এম রাহিম বলেন, শাকিব ভাইকে বহুদিন ধরে চিনি। তার ৯টি ছবির সহকারী পরিচালক ছিলাম। তিনি বাংলাদেশের সুপারস্টার। সব পরিচালকের ইচ্ছে থাকে সুপারস্টারকে নিয়ে কাজের। আমারও খুব ইচ্ছা, শাকিব ভাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।

মানব পাচারের গল্পকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সাল থেকে ‘শান’ বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন এম রাহিম। শুরু থেকে তার ভাবনা ছিল হলে যখন দর্শক ছবিটি দেখবে গল্পের সঙ্গে কীভাবে দর্শককে যুক্ত করা যায়। রাহিমের সেই ভাবনার প্রতিফলন দেখা গেছে মুক্তির পর। ঢাকা কেন্দ্রিক দর্শক ‘শান’ ছবি বেশ লুফে নিয়েছে।

চ্যানেল আই অনলাইনকে এম রাহিম বলেন, যেসব জায়গায় বেশি মনযোগ দিয়েছি দর্শক সেগুলো দেখার পর বেশি প্রশংসা করেছে। প্রি-প্রডাকশনের সময়ের ভাবনাগুলো এখন চোখের সামনে প্রতিফলন পেয়েছি। কোভিডের কারণে গত দুই বছর এই ভাবনাগুলো নিজের মধ্যে চেপে রাখতে হয়েছিল। এখন দর্শক পছন্দ করছে, এই সুখের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ সম্ভব না।

সিয়াম-পূজা জুটির ‘শান’ প্রশংসিত হচ্ছে, কিন্তু ব্যবসায়িক সাফল্যের দেখা পেয়েছেন? জানতে চাইলে রাহিম বলেন, ফিল্মম্যান প্রডাকশন হাউজের প্রথম ছবি এবং আমার প্রথম ছবি হিসেবে যতটুকু ভালোবাসা প্রাপ্য ছিল তার চেয়ে বেশি পাচ্ছি। ২০১৮ সালে যখন ‘শান’ বানানোর পরিকল্পনা করি, তখন সিনেমা হল সংখ্যা ছিল সাড়ে তিনশ’র মতো। তাই বড় বাজেট মাথায় ছিল।

নির্মাতা এম রাহিম

কিন্তু গত কয়েক বছরে হল কমে ১০০-তে চলে এসেছে। যা আমাদের চিন্তার বাইরে ছিল। এ কারণে আমার উপর প্রেশার সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমাদের বাজেট উঠে আসতে সময় লাগবে। কিন্তু শান যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এতে করে আমরা সন্তুষ্ট।

রাহিম জানান, গেল বছর ‘শান’ ট্রেলার প্রকাশের পর একাধিক প্রযোজক রাহিমকে দিয়ে সিনেমা বানাতে আগ্রহী হয়েছিলেন। কিন্তু রাহিম জানিয়েছেন, আগে শান মুক্তি পাক। দর্শক কীভাবে গ্রহণ করেন সেটা দেখার জন্য আগ্রহী ছিলেন এই তরুণ নির্মাতা। রাহিম বলেন, আমার কাছে কয়েকটা গল্প তৈরি আছে। যদি প্রযোজকের সঙ্গে বাজেটে মিলে যায় নতুন কাজে নামবো।

”নেক্সট যদি অ্যাকশন ছবি করি তাহলে বেশি বাজেট লাগবে। কারণ অ্যাকশন ছবি করতে গেলে বাজেটে কোনো ছাড় দেয়া যায় না। কিন্তু রোম্যান্টিক বা অন্য গল্প করলে হয়তো বাজেট কিছুটা কম লাগে। শান যে আয়োজনে করেছি সেখান থেকে নিচে নামা যাবে না। বরং আরও ভালো করতে চাই। এ জন্য পরের ছবিতে বাজেট অবশ্যই একটা ইস্যু থাকবে। তবে শান মুক্তির পর আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।”