‘একাত্তরে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিজের কানে শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেদিন ওই ময়দানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন, তাঁর ছোট ভাই শেখ কামাল ছিলেন। ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বলেছিলেন, সংগ্রামটা কিভাবে স্তরে-স্তরে বিকশিত হয়েছে সেটা বলে গেছেন। আমাদের কী করতে হবে সেটা সেদিন তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন।’
ঐতিহাসিক দিনটিকে নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ করতে এসব কথা বলেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
মঙ্গলবার রাতে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অফ দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত হওয়ার সনদ দেশের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আইসিটি বিভাগ একটি। কারণ এই ভাষণের রঙিন সংস্করণ করায় অবদান রেখেছে আইসিটি বিভাগ। তাই এই সনদ প্রাপ্তি উদযাপনে বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি বিভাগ মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মোস্তাফা জব্বার বক্তব্যের শুরুতেই একাত্তরের ৭ মার্চের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
৭ মার্চের ভাষণে গ্রামে গ্রামে সংগ্রাম কমিটি গড়ার নির্দেশনায় তিনিও সাড়া দিয়েছিলেন জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন: ভাষণ শুনে ৭ মার্চ রাত ১০ টায় ঢাকা থেকে ভৈরবগামী ট্রেনে উঠে বাড়ি চলে যাই। কারণ ছাত্রলীগকে দলের পক্ষ থেকে এরকম নির্দেশনা দেয়া ছিল। ৮ মার্চ থেকেই আমরা সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে শুরু করি। সত্তরের নির্বাচনের পর থেকেই একরকম যুদ্ধ প্রস্তুতি কিন্তু চলছিলো। ৭ মার্চ তাই লাঠি হাতে এসেছিল লাখো মানুষ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের রাজনীতিতে উত্থান-পতন এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিচ্যুতির আক্ষেপ শোনান ৭ মার্চের ভাষণ রঙিন করা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত তৎকালীন আইসিটি ও বর্তমানে ডাক টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার।
তিনি বলেন: প্রথমে ফ্রান্স ও পরে আমেরিকার সঙ্গে মোট ৮০ বছর সংগ্রাম করে স্বাধীনতা পায় ভিয়েতনাম। স্বাধীনতা এনে দেয়া নেতা হো চি মিন-কে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে সর্বদা স্মরণ করে ভিয়েতনামবাসী। মাত্র ৯ মাস যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তাই আমাদের অনেকেই স্বাধীনতার মর্মার্থ এবং এর যে গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে না। অথচ আমাদের অনেকে দেশকে স্বাধীনতা এনে দেয়া বঙ্গবন্ধুকে প্রাপ্য মর্যাদা তো দেয়ইনি উল্টো তাকে সপরিবারে হত্যা করার মতো ঘৃণ্য কাজটি করে বসে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জন্য অবতার হিসেবে স্বাধীনতার দীক্ষা দিতে এসেছিলেন মন্তব্য করে ৭ মার্চের ভাষণ শোনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন শ্যাম সুন্দর।
তিনি বলেন: ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ আমি ঢাকায় ছিলাম না। ৮ মার্চ সকালে আমার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে আমাদের স্কুলে এক শিক্ষকের ছেলের নিয়ে আসা রেকর্ড করা ভাষণ আমরা শুনতে পাই। ২৩ মিনিটের ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাস বলেছেন। কী ছিলো না সেই ভাষণে, বাঙালির জীবন দর্শন, জীবন পরিচালনা, যুদ্ধ পরিচালনা সব কিছু ছিলো ৭ মার্চের ভাষণে।
৭ মার্চের ভাষণের স্মৃতিচারণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর রায় বলেন: ৮ মার্চ, ১৯৭১ সকাল আনুমানিক ৯ কিংবা এর কিছু বেশি। আমার বয়স তখন ১০, ক্লাস ফাইভের ছাত্র আমি। আমাদের বাড়িতে একটি বড় অনুষ্ঠান হচ্ছিলো। আমাদের একটি রেডিও ছিলো, রেডিওটি যখন খোলা হলো শুনলাম রেডিও কাঁপানো ভাষণ। আমার কাছে মনে হচ্ছিলো রেডিওটা কাঁপছে। গা শিহরিত হচ্ছিলো, অনুষ্ঠানে আসা সবাই থমকে দাঁড়িয়েছিলো।
গৌরবান্বিত ৭ মার্চের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত করেছে ইউনেস্কো স্বীকৃতি, এই স্বীকৃতির অংশীদার ৫ টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইসিটি বিভাগ একটি। তাই রাজধানীর ট্রাফিক জটলা ঠেলে সময় মতো নিজেদের অর্জন উদযাপন করতে এসেছিলেন ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান তারা এবং পিনপতন নীরবতায় দেখেন-শোনেন ৭ মার্চে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।