মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় প্রতিদিনই গ্রাহক সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। চলতি বছরের মে মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৪ লাখ। আর একক মাস হিসাবে এই মাসে লেনদেন হয়েছে ৪২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এর আগের মাস এপ্রিলের তুলনায় যা প্রায় ২১ শতাংশ বেশি।
এরআগে একক মাস হিসাবে সর্বোচ্চ ৩৪ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা লেনদেন হয় গত এপ্রিলে। সেই হিসাবে এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে মে মাসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছরই ঈদ উৎসবকে কেন্দ্রে করে এমএফএসে এ লেনদেন বাড়ে। এছাড়া গত ১৯ মে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন সীমা বাড়ানো হয়েছে। সবমিলিয়ে রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে এ সেবায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১৬টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয় সেবা দিচ্ছে। যাদের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৬ কোটি ৮২ লাখ ৮২ হাজার। অর্থাৎ এক মাসে গ্রাহক বেড়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
টানা তিন মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে থাকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই হিসাবে মে শেষে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২১ লাখ ২৯ হাজার।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এমএফএসে গত মে মাসে প্রতিদিন গড়ে ৭৪ লাখ ৬৩ হাজার লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আদান-প্রদান হয়েছে। মে মাসে মোট লেনদেন হয়েছে ৪২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে ২০ দশমকি ৮ শতাংশ বেশি। গত এপ্রিলে লেনদেন হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৭৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৩১ হাজার ৩১২ জন।
জানা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, বিভিন্ন নতুন নতুন সেবাও যুক্ত হচ্ছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন পছন্দের মাধ্যম।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, মে মাসে সব ধরনের সেবায় লেনদেন বেড়েছে। এই সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে ১৬ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। উত্তোলন করা হয়েছে ১৫ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে এক হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪৮২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৬০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সরকারি পরিশোধ ৩২২ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৬১১ কোটি টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা জমা ও উত্তোলন এবং ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি লেনদেন সীমা বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ বা এর বেশি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন এই হিসাব থেকে একজন গ্রাহক দৈনিক ৫ বারে ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন এবং ৫ বারে ২৫ হাজার টাকা ক্যাশ আউট করতে পারেন। আগে যা ২ বারে ১৫ ও ১০ হাজার টাকা করা যেত।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ।