ভোক্তা অধিদপ্তরে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংকসহ কয়েকটি মোবাইল অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে ৬ শতাধিক অভিযোগ এসেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
সোমবার রাজধানীর টিসিবি ভবনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ১৬তম সভায় তিনি বলেন: বিভিন্ন সময়ে রবি, গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের বিরুদ্ধে কলড্রপসহ নানা ধরনের ৬শ’র বেশি অভিযোগ এসেছে। কোনো কোনো অভিযোগে তাদের জরিমানা করা হয়েছে। তবে এসব জরিমানার বিরুদ্ধে কোম্পানিগুলোর কেউ কেউ হাইকোর্টে রিট করেছে।
ভোক্তা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল অপারেটর রবিকে ৫/৬টি অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর তারা হাইকোর্টে রিট করে। চলতি সপ্তাহে সে বিষয়ে শুনানি হতে পারে। এছাড়াও বাংলালিংক একটি রিট করেছে। তাও তদন্তাধীন রয়েছে। তবে গ্রামীণকে জরিমানা করলেও তারা এর বিরুদ্ধে আদালতে যায়নি।
বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন: ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার টন চাল রপ্তানি করেছি। নেপালে ভূমিকম্প হওয়ার পর তাদের ১০ হাজার টন চাল সাহায্য করেছি। কিন্তু হঠাৎ বন্যার কারণে উৎপাদনে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।
বর্তমানে থাইল্যান্ড, ভারত ও নেপালসহ অনেক দেশেই গড়ে প্রতি কেজি চালের মূল্য ৪০ টাকার উপরে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশে চাল রপ্তানি করবে না এমন সংবাদের কারণে দেশে চালের দাম বেড়েছে। নতুবা বাড়তো না। এ ধরণের প্রতিবেদন প্রকাশ করা ঠিক হয়নি।
“তবে বাংলাদেশে একটা রেওয়াজ আছে যে, কোনো জিনিসের দাম বাড়লে তা সহসায় আগের দামে ফিরে আসে না। তবুও চালের দাম এখন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।”
কখনো কখনো দুই-একটা পণ্যের দাম বাড়ে জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, দুই-একটা পণ্যের দাম বাড়লেও এটা তো বলা যাবে না যে, সব পণ্যের দাম বেড়েছে। যেমন ডালের বা ভোজ্য তেলের দাম তো বাড়েনি।
‘‘আমিও এক সময় এক টাকায় চাল কিনেছি। কিন্তু এখন কি তা সম্ভব? কারণ মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে। এক সময় ডলারের দাম ছিল ৪ টাকা ৭৩ পয়সা। এখন তা ৮০ টাকা।’
তবে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানিকারক, পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ি সবার সাথে নিয়মিত বৈঠক করা হয় বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
ভোক্তারা যত বেশি সচেতন হবে তত কম ঠকবে উল্লেখ করে ভোক্তা অধিকার সংগঠনের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বিক্রেতা বা উৎপাদনকারীরা ওজনে কম দেয়, নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করে নির্ধারিতি দামের চেয়ে বেশি দাম নেয়। কিন্তু ভোক্তারা সচেতন হলে এ ধরণের প্রতারণা থেকে রক্ষা পাবেন। তবে ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি সম্পর্কে আরো বেশি প্রচার করে ভোক্তাদের জানানোর দরকার আছে।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি কাজী আাকরাম উদ্দিন বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনটি আরো শক্তিশালী করে এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি।
এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল পর্যায়ে ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভোক্তাদের আরো সচেতন করতে থিম সং তৈরি করে তা শিগগিরই গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে ভোক্তাদের না ঠকাতে পারে সে বিষয়েও পদক্ষেপ নেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১০ সালে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম চালু হয়। ওই বছর মাত্র ৭৩টি অভিযোগ করেছিল ভোক্তারা। আর চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে অভিযোগ জমা পড়েছে ৩ হাজার ৮৯টি। যাচাই-বাছাই করে এসব অভিযোগের শতভাগই নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
এছাড়াও কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে দেশব্যাপী প্রায় ৭৫ হাজার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে তদারকি কার্যক্রম চালিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর বিভিন্ন ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ৩৩ হাজার ২২৮টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা আদায়ের পরিমাণ প্রায় ২৩ কোটি ২২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আইন অনুযায়ী ২ হাজার ৪৭০ জন অভিযোগকারীকে ২৫ শতাংশ হিসেবে ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫২ টাকা প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট ২২ কোটি ৮৮ লাখ ৫১ হাজার ৪৪৮ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসুসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।