৩০৩ বলে ২০০, ২০ চার ও ৬ ছক্কা। অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি করা ষষ্ঠ ক্রিকেটার। শেষপর্যন্ত আরেকটি ছয় সমেত ২১০ রানে অপরাজিত কাইল মেয়ার্সের মহাকাব্যিক ইনিংসের কাছেই হারতে হল মুমিনুল হকের দলকে।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ উইকেটের জয়ে দুই টেস্টের সিরিজে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের টেস্ট মিরপুরে।
চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজের ১০৩ রানে ৪৩০-এর বড় সংগ্রহ গড়েছিল বাংলাদেশ। পরে মিরাজ ৪ উইকেট নিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে উইন্ডিজ অলআউট হয়ে যায় ২৫৯ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে অধিনায়ক মুমিনুল হকের ১১৫ রানে ৮ উইকেটে ২২৩ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। সফরকারীদের জন্য লক্ষ্য দেয় ২৯৫ রানের। যেটি শেষদিনে দুই ওভার বাকি থাকতে ৭ উইকেট হারিয়ে তুলে ফেলে উইন্ডিজ। এবারও মিরাজ নিয়েছেন ৪ উইকেট।
এশিয়ায় এটি সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। উইন্ডিজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাড়ার রেকর্ড। তারা রানতাড়া করে একবার ৪১৮ তুলেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, ২০০৩ সালে, সেটা সর্বোচ্চ ক্যারিবীয়দের জন্য।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে আগেরদিন ঝটপট ৩ উইকেট হারানো উইন্ডিজ প্রতিরোধের শুরু করেছিল শেষ বিকেলে। রোববার সেটি জারি রাখে। প্রথম দুই সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি ক্যারিবীয়রা।
কাইল মেয়ার্স ও এনক্রুমা বোনার, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এনে দেন ২১৬ রানের জুটি। চেপে বসে থাকেন বাংলাদেশ বোলারদের উপর। তাতে জাগে জয়ের সম্ভাবনা।
শেষ সেশনের শুরুতে বোনারকে ৮৬ রানে এলবি করে জুটি ভাঙলেন তাইজুল। পরের আঘাত নাঈমের, বোল্ড করেন ব্লেকউডকে। ঘুরে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। সেটিই শেষ। হার প্রায় নিশ্চিত হওয়ার পর আরও দুটি উইকেট তুললেও তা কোনো কাজে আসেনি।
চতুর্থ দিন বিকেলে উইকেট তুলে মিরাজ যে আশার সঞ্চার করেছিলেন, সেই আশার ফানুস ফুটো হয়ে যায় শেষদিনের প্রথম দুই সেশন। উইকেটশূন্য থেকে মাঠে বিমর্ষ হয়ে পড়ে স্বাগতিকরা।
সকালের সেশনে টাইগারদের ক্যাচের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। নিশ্চিত সাফল্যের রিভিউও নেয়নি। সেসব কাজে লাগিয়ে সাফল্য তুলতে থাকে সফরকারীরা।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ উইকেটে ১১০ রানে পঞ্চম দিন শুরু করেছিল। তারপর কাইল মেয়ার্স ও এনক্রুমা বোনারের দ্বিশতক রানের চতুর্থ উইকেট জুটি। ইতিহাসে যেটি দুই অভিষিক্তের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি, উইন্ডিজের সর্বোচ্চ।
মেয়ার্স ও বোনার, প্রথমজনের বয়স ৩০-এর কাছাকাছি, পরেরজন ত্রিশ পেরিয়েছেন। চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষিক্ত দুজনই। অভিষেকেই ত্রাতা তারা। মেয়ার্স তুলেছেন ডাবল সেঞ্চুরি, যে ইনিংসটি ২৮ বছর বয়সী বাঁহাতির জন্য মহাকাব্য রচনার দৃশ্যায়ন। অভিষেকে সেঞ্চুরি তোলা চতুদর্শ ক্যারিবিয়ান মেয়ার্স। অভিষেকে ডাবল তোলা বিশ্বের ষষ্ঠ ক্রিকেটার। চতুর্থ ইনিংসে ডাবল তোলা প্রথম।
সকালের সেশনে সাফল্যের তিন সুযোগ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। মেয়ার্স তখন ৪৭ রানে, তাইজুলের বলে এলবির আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। টিভি রিপ্লে বলছে রিভিউ নিলেই মিলত সাফল্য।
দুই রান পর মেয়ার্স জীবন পান স্লিপে। মিরাজের বলে ক্যাচ নিতে ব্যর্থ শান্ত। বোনার ২৫ রানে থাকার সময় নাঈমের বল আঘাত হেনেছিল তার প্যাডে, রিভিউ নিলে এবারও সাফল্য পেত বাংলাদেশ। এসবের চড়ামূল্যই দিতে হল শেষ অবধি।