আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির সময় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র হালিমুল হক মিরুর শর্টগানের গুলিতে গুলিবিদ্ধ দৈনিক সমকাল-এর স্থানীয় প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল মারা গেছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক শিমুলকে প্রথম চিকিৎসার জন্য বগুড়ায় নেওয়া হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনার পথে শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) তার মৃত্যু হয়। কিছুদিন আগে রাজধানীতে হরতালের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দুই সংবাদ কর্মী পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরে শাহজাদপুরে সাংবাদিক নিহতের ঘটনা ঘটলো। সাংবাদিক শিমুলই হয়তো প্রথম সাংবাদিক, যিনি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হলেন। যদিও আমাদের দেশে গণমাধ্যম কর্মীরা যুগ যুগ ধরে নানা ধরণের হামলা-মামলা-হুমকি মাথায় নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গণমাধ্যম বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের সূত্রমতে, দেশে গত তিন বছরের মধ্যে গত ২০১৬ সালে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যমের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দুই ধাপ এগিয়ে ১৪৪তম হয়েছে। বিশ্বের ১৮০টি দেশের গণমাধ্যম পর্যালোচনা করে এবারের সূচক করা হয়। ওই সূচকে ২০১৫ ও ২০১৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৬তম। তবে গতবছরের সূচক যাইহোক, ২০১৭ সালের শুরুতে সাংবাদিক শিমুল নিহতের সঙ্গে সঙ্গে শাহবাগে পুলিশ কর্তৃক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার কারণে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা ও কর্ম-পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। গণমাধ্যম একটি স্বাধীন-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ। গণমাধ্যমের একজন কর্মী পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে যে নিহত হলেন, এটা মোটেও কোনো সাধারণ-বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। সাংবাদিক শিমুলের নিহতের ঘটনায় ইতিমধ্যে মামলা হয়েছে ও অভিযুক্ত মেয়রকে বাদ দিয়ে কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে। আমাদের জোর প্রত্যাশা এই ঘটনার প্রকৃত অপরাধীকে তদন্ত সাপেক্ষে চিহ্নিত করে আইনী ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। সেইসঙ্গে বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই ঘটনা যেনো অন্য ঘটনার স্রোতে হারিয়ে না যায়, সেজন্য সরকারের বিশেষ দৃষ্টি কামনা করছি।