কিচ্ছু হয়নি। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতেনি। ম্যারাডোনা আবার মাঠেও নামেননি। মেসি নামের লোকটা কেবল লাতিন আমেরিকার প্রথম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ২১তম গোল করেছেন। আর তার দলকে বিশ্বকাপে নিয়ে গেছেন। আসলেই তো আহামরি কোনও ঘটনা নয়। এ রাত কেবল কয়েকটি স্বস্তির নিশ্বাস পড়ার রাত।
‘মেসির আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ খেলবে না,’ এই বাক্যটি এতদিন ধরে কতটা নির্মম হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা চায়ের দোকানে ঘুরছিল, তা শুধু তারাই জানেন যারা বিশ্বকাপ এলে বাড়িতে আসর বসান। যারা বিশ্বকাপ এলে শহরের ওই কোনায় কিংবা রাস্তার বড় গাছটায় আকাশী-নীল পতাকা ওড়ান।
শেষ পর্যন্ত মেসি ওই নির্মমতাকে হাওয়া করে দিলেন বাঁ পায়ের খেলে। জাদুকরী পা দিয়ে তিনটি গোল করে দলকে নিয়ে গেলেন বিশ্বকাপে।
টানা তিন ড্রয়ে শেষ রাউন্ডের আগে ষষ্ঠ স্থানে থাকা আর্জেন্টিনা ছিল ভীষণ শঙ্কায়। ম্যাচটি আবার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ৮৫০ মিটার উঁচুতে। যেখানে ২০০১ সালের পর জেতেনি আর্জেন্টিনা। ভৌগোলিক এই জটিলতার সঙ্গে চাপ পাহাড়সমান। একটি হার কিংবা ‘ড্র’ই সব শেষ করে দিত পারতো। কিচ্ছু হয়নি। আবার নতুন করে শুরু করেছেন মেসি। সামনে বিশ্বকাপ!
ম্যাচের স্কোরলাইন (৩-১) বোঝাতে পারছে না, লড়াইটা কেমন হয়েছে। বেনোদেত্তিকে সামনে রেখে নিচে ছিলেন ডি মারিয়া আর মেসি। মারিয়া গোটা ম্যাচেই মেসিকে সমানতালে বল তুলে দিয়েছেন। প্রথম দুটি গোলে তার সরাসরি অবদান। এই রাতের পর হিগুয়েন নামের কোনও এক স্ট্রাইকারকে ভুলে যাওয়া যাবে, কিন্তু একজন আর্জেন্টাইন সমর্থক ডি মারিয়া নামের এক উইঙ্গারকে ভুলতে পারবেন না।
ইকুয়েডর বল দখলের লড়াইয়ে আর্জেন্টিনার থেকে এগিয়ে ছিল। ৫৫ শতাংশ ছিল তাদের দখলে। দ্বিতীয়ার্ধে ভালো আক্রমণও গড়ে তারা। গোলের দিকে মোট ৯টি শট নিতে সক্ষম হয় দলটি। আর্জেন্টিনা নিয়েছে ১৩টি। তার মধ্যে মেসির পা থেকে ৮টি!
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ২১তম গোল করার রেকর্ডটি মেসি খুব বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি। দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন উরুগুয়ের সুয়ারেজ।
যেভাবে মেসির তিন গোল:
১২তম মিনিট: বক্সের ঠিক সামনে থেকে বল ধরে ডি মারিয়াকে ছাড়েন ফুটবল জাদুকর। মারিয়া তিন পা এগিয়ে কাটব্যাক করে ফের মেসিকে বল দেন। দুই পাশে দুই ডিফেন্ডার। সামনে গোলরক্ষক। বল ডান পায়ের পজিশনে। মেসি ব্যবহার করলেন তার ‘ঈশ্বরপ্রদত্ত’ ওই বাম পা। টোকা দিয়ে খুঁজে নিলেন জাল।
২০তম মিনিট: বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে মেসিকে বল দেন ডি মারিয়া। ভিড়ের ভেতর থেকে পাশ কাটিয়ে মেসি আগে উঠে যান। সামনে গোলরক্ষক। পাশে তিনজন। এবারও সেই বাঁ পা। প্রথম পোস্ট দিয়ে জোরালো শট। একটু তুলে মারেন। গোলরক্ষক মাটিকামড়ানো পাস ভেবে ডাইভ দিতে চেয়েছিলেন। বল জালে জড়ায় তার মাথার উপর দিয়ে।
৬২তম মিনিট: মাঝ মাঠের একটু উপর থেকে পেরেজ বল দেন। এবার একটু দূর থেকে শট নেন। অবদান ওই বাঁ পায়ের। সঙ্গে লেগে ছিলেন তিনজন। আগুয়ান মেসি বল কাট করে হালকা বাঁদিকে সরে যান। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার হাত দিয়ে ফেলে দেয়ার আগেই বল তুলে মারেন। গোলমুখ ছোট করতে রক্ষক একটু সামনে ছিলেন। তাতে কাজ হয়নি। মেসির তুলে দেয়া বল তার মাথার উপর দিয়ে জালে জড়ায়। ইকুয়েডর গোলরক্ষক সামনে পজিশন নেয়ায় বল টাচও করতে পারেননি!