বার্সেলোনা বনাম লিভারপুল। ম্যাচটা সম্পর্কে এককথায় বললে বলতে হবে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় বনাম ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে সেরা রক্ষণ সেনাদের লড়াই। টানা দ্বিতীয়বার যদি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে যেতেই হয় লিভারপুলকে, তাহলে লিওনেল মেসিকে আটকানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প খোলা নেই। কীভাবে সেটা সম্ভব করবে অলরেডরা?
বুধবার ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে সেমির প্রথম লেগে মুখোমুখি হবে বার্সেলোনা-লিভারপুল। ন্যু ক্যাম্পে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়। সেই ম্যাচে ভালো করতে হলে গোলডটকমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দলের দুই সাবেক তারকা- জেমি ক্যারেগার ও জন আর্নে রাইজের বলা কথা আমলে নিতে পারেন অলরেড কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ।
ইউরোপে হাতেগোণা ক্লাব আছে যাদের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত গোলের খাতা খুলতে পারেননি মেসি। ক্লপের সৌভাগ্য, লিভারপুল তাদের একটি। অবশ্য মেসির সেরা সময়ে কখনোই বার্সেলোনার মুখোমুখি হতে হয়নি অলরেডদের। দুই দলের শেষ দেখা ২০০৭ সালে। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড তখন উঠতি তারকা। অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে বার্সাকে হারিয়ে সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল লিভারপুল।
সেই ম্যাচের প্রথম লেগে ন্যু ক্যাম্প থেকে ২-১ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছিল লিভারপুল। দলে ছিলেন জেমি ক্যারেগার ও জন আর্নে রাইজ দুজনেই। তাই মেসির উত্থানের সময়টা খুব কাছ থেকে দেখা তাদের।
২০০৭ সালের বার্সার মূল তারকা ছিলেন ব্রাজিলিয়ান রোনালদিনহো। কিন্তু ১৯ বছর বয়সী মেসিও তখন বিশ্বের সেরা ফুটবলার দৌড়ে একটু একটু করে এগোচ্ছেন। তাই আর্জেন্টাইন তারকার ব্যাপারে কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি তৎকালীন লিভারপুল কোচ রাফা বেনিতেজ। মেসির পাহারায় লাগিয়ে দেন আলভারো আরবেলোয়াকে।
‘আমার মনে আছে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে রাফা বেনিতেজ আরবেলোয়াকে নিয়ে মাঠের কোণা ধরে হাঁটছিলেন। তিনি আরবেলোয়াকে বলেছিলেন সে যেন বাঁ-পাশে খেলেন, যেটা ছিল ভীষণ অবাক করার মত।’ ২০০৭ সালে কীভাবে মেসিকে আটকেছিল লিভারপুল গোলডটকমকে সেটাই জানিয়েছেন ক্যারেগার।
‘খুব গুছিয়ে এবং কয়েকসপ্তাহ আগেই পরিকল্পনা করার ব্যাপারে সুনাম ছিল রাফার। তবে হঠাত করে চমকে দেয়ার ব্যাপারটাও তিনি ভালো করেই পারতেন।’
‘সে সময়ের বার্সেলোনা দলটা মেসি নির্ভর ছিল না। ছিল রোনালদিনহো নির্ভর। কিন্তু আমরা মেসিকে দেখে তখনই বলেছিলাম যে, এই ছেলেটা একদিন ভবিষ্যতের মহাতারকা হবে।’
মেসিকে না হয় সেবার আটকে দিয়ে সাফল্য পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু বর্তমানের মেসিকে কীভাবে আটকাবে লিভারপুল। বিশেষ করে ২০০৮ সালের পর থেকে প্রতি মৌসুমে কমপক্ষে ৩৮টি করে গোল করেছেন বার্সা মহারতারকা। মাত্র দুই গোল দূরে ৬০০ গোলের মাইলফলক ছুঁতে। এমন ফুটবলারকে আটকাবে কী উপায়?
উত্তরটা দিয়েছেন রাইজ, ‘আমার মতে খেলার জায়গাটা যত ছোট করে আনবে লিভারপুল ততই মেসির গোল করার সুযোগ কমে যাবে। আমরা জানি মেসিই খেলার মূল চাবিকাঠি।’
‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে তাদের মাঠে সে কী করেছে মনে আছে? সে একবার মাত্র সুযোগ পেয়েছে তাতেই ম্যাচটা ঘুরিয়ে দিয়েছে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে তার নড়াচড়া করার জায়গাটা ছিল কম। কিন্তু ন্যু ক্যাম্পে সে অনেক জায়গা পেল। খেলাটাই শেষ করে দিল। তাকে কম জায়গা দেয়া যাবে যত, ততই তার বল পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে।’
ক্যারেগারও বলছেন একই কথা। তবে তার মতে মেসির পাশাপাশি বল দেয়া থেকে বিরত রাখতে হবে সার্জিও বুস্কেটসকেও, ‘ইয়ুর্গেন ক্লপকে সতর্ক থাকতে হবে যেন বুস্কেটস ঠিকমত বল না দিতে পারে।’
‘জানি না রবের্তো ফিরমিনো খেলবে কিনা। তার উচিত বুস্কেটসকে প্রতিনিয়ত বিরক্ত করা যেন বলের যোগানটা ঠিকমত না দিতে পারে। যদি আপনি বুস্কেটসকে আটকাতে পারেন তবে আপনি লড়াইয়ের অনেকখানিই জিতে যাবেন।’
মেসিকে কোনভাবেই একজন ডিফেন্ডার দিয়ে আটকানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন রাইজ ও ক্যারেগার দুজনেই। এই ভুলটা করেছিল ম্যানইউ। ফিল জোনসকে দিয়ে মেসিকে আটকাতে গিয়ে হাসির পাত্র হয়েছিল রেড ডেভিলরা।
‘মেসিকে ফিল জোনস একাই আটকাতে চেয়েছিল। মানুষজন তাতে হেসেছে। মেসিকে কখনোই একজন ডিফেন্ডার আটকাতে পারবে না। তা কখনোই কাজ করবে না।’
ম্যানইউর ভুলটা যেন লিভারপুল না করে সে ব্যাপারে ক্লপকে সতর্ক হতে বলেছেন ক্যারেগার। ভার্জিল ফন ডিক ও জেমস মিলনারকে দিয়ে বার্সা মায়েস্ত্রাকে সামলানোর ব্যাপারে পক্ষপাতি তিনি।
‘ক্লপ জানে সে মেসিকে কীভাবে সামলাবে। তবে আবারও বলছি তাকে আটকানো একজনের কাজ না।’