আড়মোড়া ভেঙে একুশে গ্রন্থমেলা যখন পাঠক-বোদ্ধা পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠার অপেক্ষায়, তখন স্বকৃত নোমান হাজির দীর্ঘ কুড়ি মাসের সাধনায় রচিত মায়ামুকুট নিয়ে। উপন্যাসটি মেলায় এনেছে ‘অন্যপ্রকাশ’।
শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ, শাপলায় হেফাজতের উত্থান, ২০১৩ পরবর্তী জঙ্গিদের ভয়াবহ সব হামলাসহ বাংলাদেশের কয়েকটি রাজনৈতিক ঘটনাকে ধারণকারী প্রায় তিনশ পৃষ্ঠার উপন্যাস ‘মায়ামুকুট’। উপন্যাসের চরিত্র হয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চ সংশ্লিষ্ট অনেকে।
স্বকৃত নোমান জানালেন, ‘উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র মুলুক আর কেউ নয়, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শাহজাহান, যিনি জল্লাদ শাহজাহান নামে পরিচিত। তিনি দেশের প্রধান জল্লাদ। বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। ২০১৩ সালের একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকে জল্লাদ শাহজাহানকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনটি পড়ে ‘মায়ামুকুট’ উপন্যাসটির আইডিয়া পান তিনি। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট ই-মেইলের ড্রাফটবক্সে রেখে দিয়েছিলেন এমন ভাবনা থেকে যে, কোনোদিন হয়ত কাজে লাগবে, কোনোদিন হয়ত শাহজাহানকে নিয়ে একটা উপন্যাস লিখতে পারবেন।’
স্বকৃত নোমান সঙ্গে যোগ করেন, ‘জল্লাদ শাহজাহানের বৈচিত্র্যময় জীবন উপন্যাসটির কাহিনীসূত্র মাত্র। শেষ পর্যন্ত উপন্যাসের কাহিনী সর্বাংশে শাহজাহানের বাস্তব জীবন সম্ভূত থাকেনি। শাহজাহান হয়ে উঠেছে লেখকের একটি কল্পিত চরিত্র। সেই চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবের শাহজাহান জল্লাদের জীবনের মিল খোঁজারও কোনো অবকাশ নেই।’
উপন্যাসের বিষয়সংক্ষেপে তিনি লিখেছেন- প্রেমিকা শিউলির সঙ্গে মিলনকালে সাবেক সেনাসদস্য মুলুকের মনে পড়ে যায় পিতৃশাপের কথা। মুহূর্তে উবে যায় তার যৌনশক্তি, নিস্তেজ হয়ে পড়ে তার পৌরুষ। ক্লীব ভেবে তাকে প্রত্যাখ্যান করে শিউলি। মুলুক জড়িয়ে পড়ে পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টির গুপ্ত রাজনীতিতে। হয়ে ওঠে দুর্ধর্ষ ডাকাত, ভয়ংকর খুনি। তিরাশিবার তাকে গ্রেপ্তারের ব্যর্থ চেষ্টা করে পুলিশ। তার অস্তিত্ব নিয়ে তৈরি হয় সংশয়। কারণ পুলিশ তো কখনো সরাসরি তাকে দেখেনি, দেখেছে সেনাসদর দপ্তর থেকে সংগৃহীত পাসপোর্ট সাইজের তার একটা সাদাকালো ছবি। ছবির মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে বাস্তবের মানুষটিকে গ্রেপ্তার করা তো দুষ্কর। ফলে মুলুক হয়ে ওঠে কিংবদন্তির মানুষ।
সাংবাদিকের অনুসন্ধানে একদিন বেরিয়ে আসে মুলুকের জীবিত থাকার প্রমাণ। অবশেষে সে গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে মুলুক আবার পালিয়ে যায় আদালত চত্বর থেকে। আশ্রয় নেয় উদারপন্থী প্রয়াত এক বাউলের মাজারে। উদার, বহুত্ববাদী ও সংগীতসাধক বাউল আর সাধু-সন্ন্যাসীদের সংস্পর্শে থেকে বদলে যায় মুলুক। দীক্ষা নেয় মরমীবাদের। যাকে গ্রেপ্তার করাটা গোটা পুলিশ বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, একদিন সেই মুলুক আত্মসমর্পণ করে থানায়। কিন্তু সে আদৌ মুলুক কি না নিশ্চিত হতে পারে না পুলিশ। তৈরি হয় নতুন জটিলতা। পরবর্তীকালে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আটষট্টিটি মামলায় একশ তেতাল্লিশ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। পৃথিবীর সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুলুক হয়ে ওঠে কারাগারের প্রধান জল্লাদ। একাত্তরের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী, পঁচাত্তরের খুনি এবং জঙ্গিসহ কার্যকর করে তেত্রিশজন কুখ্যাত গণশত্রুর ফাঁসি। মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। তাকে ঘিরে তৈরি হয় নানা মিথ। তার জীবনকথা নিয়ে গাঁথা রচনা করেন সংগীতসাধক ভুবন সাধু।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯ এর প্রথম দিন থেকেই পাওয়া যাচ্ছে ‘মায়ামুকুট’। প্রতিশ্রুতিশীল এ লেখক একের পর এক পাঠকনন্দিত উপন্যাস উপহার দিয়ে চলেছেন। রাজনটী, বেগানা, হীরকডানা, কালকেউটের সুখ প্রশংসিত হয়েছে, ধারাবাহিকতায় এবার মায়ামুকুট।
‘মায়ামুকুট’ প্রকাশ করেছে খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশ। উপন্যাসটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোমিন উদ্দীন খালেদ। দাম চারশো টাকা। পাওয়া যাবে ‘প্যাভিলিয়ন নং-২০’এ।