প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল এবং পুনরায় পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলনরতরা শুক্রবার বিকেল থেকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক-বুদ্ধিজীবী’ ব্যানারে সমাবেশ করছে। এসময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়।
বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সেখানে অবস্থান কর্মূসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে অভিভাবকরা ছাড়াও সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও গণ্যমান্য অনেক ব্যক্তিও তাদের সাথে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ থেকে আগামী দুইদিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকাল চারটা থেকেই শিক্ষার্থী অভিভাবকেরা শাহবাগের সমাবেশ স্থলে আসতে থাকেন। আধাঘন্টার মধ্যেই সমাজের বুদ্ধিজীবী অংশের প্রতিনিধিত্বকারী অনেকেই সেখানে উপস্থিত হন। এসময় উপস্থিত আন্দোলনকারীরা ভর্তি পরীক্ষা পুনরায় অনুষ্ঠানের দাবিতে নানা স্লোগান দেয়।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, শিক্ষায় টাকা বানানোর জন্য একটি চক্র কাজ করছে যারা প্রশ্নপত্র ফাসের সাথে জড়িত। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় কোন তদন্ত ছাড়া কিভাবে বললো যে কোন প্রশ্ন ফাঁস হয়নি।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, অবিলম্বে পরীক্ষা বাতিল করে এটা প্রমাণ করতে হবে বাংলাদেশে আর কখনো প্রশ্ন ফাঁস হবে না। এই আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে ইমরান বলেন, পরীক্ষা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের সাথে থাকবো।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী শিক্ষাক্ষেত্রের শোচনীয় পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, এক ব্যক্তিকে এক কোটি টাকা দিলে প্রশ্ন পাওয়া যায়। সরকারের উচিত ১০ দিনের মধ্যে এ্ই সমস্যার সমাধান বের করা।
লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, রাস্তায় ব্যানার দেখি এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাস্তবে এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে প্রশ্নফাঁস ও দূর্নীতিতে এগিয়ে চলছে দেশ। অপ্রতিরোধ্য গতিতে ১০ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থী ৯০ নাম্বার পাচ্ছে।
গাজীপুরের মীরের বাজার থেকে আসা এক অভিভাবক আমির হোসেন বলেন, আন্দোলনে সংহতি জানাতে এসেছি। মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কারণে আমার ছেলে মেডিকেলে চান্স পায় নাই। সুষ্ঠু পরীক্ষা হলে আমার ছেলে চান্স পেতো। রেজাল্ট হওয়ার পর থেকে সে কাঁদছে। প্রশ্নফাঁসের ফলে মেধাবীদের চোখের পানি ঝরছে।
শিক্ষার্থী সাজিয়া আক্তার বলেন, আন্দোলন শুরু হওয়ার সময় থেকেই এর সাথে রয়েছি।
এছাড়াও সমাবেশ থেকে দাবি মানা না হলে শনিবার এবং রোববারের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। শনিবার সকাল ১০ টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি ও ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শনির আয়োজন করা হবে এবং রোববার শাহবাগ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি প্রদানের জন্য যাওয়া হবে বলে জানানো হয়।
শাহবাগের এই আন্দোলনে ডা. জাফরুল্লাহ, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ, জুনায়েদ সাকি, সৈয়দ আবুল মকসুদ, বুয়েটের শিক্ষক হাসিব চৌধুরি, শিক্ষক ফয়জুল করিম, মাহমুদুজ্জামান বাবুসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।