সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তৃতীয় দিনের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। সাক্ষ্য উপলক্ষে আদালত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বুধবার সকাল ১০ টা ৪০ মিনিটে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সিনহার সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের মূলতবী সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে দিনের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানিয়েছেন আদালতটির পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম।
মামলায় সাক্ষ্যদানের ধার্য দিনের প্রথম দিনে আদালতে জবানবন্দি দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। পরে দ্বিতীয় দিন বিকাল ৫ টা ২০ মিনিটে শেষ হয় তাকে ১৫ আসামীর আইনজীবীর জেরা।
এরপর আদালতে সাক্ষ্য দেন ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। দ্বিতীয় দিনে তার ( সিফাত ) সম্পূর্ণ সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি। এতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় বিচার কার্যক্রম মূলতবী ঘোষণা করে তৃতীয়দিনে তা গ্রহণ করা হবে বলে আদেশ দেন আদালত। এরপর আজ সকালে আবার শুরু হয় আদালতের মুলতবি করা কার্যক্রম।
সকাল পৌনে ১০ টায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে ১৫ আসামীকে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, বুধবার সকাল ১০ টা ৪০ মিনিটে দ্বিতীয় দিনে সাক্ষ্যদানে অংশ নেয়া সিনহার সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের মূলতবী সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার তৃতীয় দিনের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। তার সাক্ষ্যদান শেষ হলে আসামীদের আইনজীবীরা জেরা শুরু করবেন। এরপরই কর্ম-দিবসের নির্ধারিত সময়ে সম্ভব হলে আদালতের সমন জারি থাকা অপর সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেয়া হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী জানান, প্রথম দফায় তিনদিনে সাক্ষ্যদানের জন্য মামলার ৮৩ আসামীর মধ্যে ১৫ জনকে আদালতে উপস্থিত থাকতে সমন জারি করা হয়েছিল। এদের মধ্যে প্রথম দিনে সাক্ষ্যদানের জন্য বাদী ও মামলার ২ নম্বর সাক্ষীসহ চারজন আদালতে উপস্থিত ছিল। তবে গত দুইদিনে শুধু দুইজনের সাক্ষ্য নেয়া সম্ভব হয়েছে।
গত ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা পিছিয়ে যায়। পরে ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে।
গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় সে সময় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামী করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা করে।
সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারি আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গত ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামী টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
আসামীদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তদন্ত শেষে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তৎকালীন র্যাব ১৫-এর সহকারি পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাস ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
মামলার আসামীরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক পরির্দশক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএন এর তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাবেক এএসআই সাগর দেব।
গত ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচার মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।