এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বড় হচ্ছে অর্থনীতি। বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে থাকে না, আধাপেটাও থাকে না। উত্তরবঙ্গে মঙ্গা দূর হয়েছে বহুদিন। সন্তান প্রসবের সময় বেঁচে থাকে মা। তৃণমূলের মানুষ চিকিৎসা পায়। ইউনিয়ন ইউনিয়নে আছে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র।
বছরের প্রথম দিনে নতুন বই পেয়ে গ্রামে গ্রামে মেয়েরা দলবেঁধে স্কুলে যায়। শিক্ষায় পয়সা লাগে না, আছে উপবৃত্তি।
অসহায় বিধবারা এখন আর ভিক্ষে করে না। পাচ্ছেন বিধবা ভাতা। বয়স্করাও পান বয়স্ক ভাতা। প্রতি বছরই ভাতার আওতা বাড়ছে। জনকল্যাণে এরকম আরো অনেক উদ্যোগ আছে উল্লেখ করার মতো। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের কারণে। জনগণের কল্যাণ আর উন্নয়নের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা অনন্য।
১৯৪৭ সালের ২৮ অক্টোবর গোপালগঞ্জের মধুমতি পারে জন্ম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা রাজনীতি শিখেছেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখেছেন, মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছেন পরিবার থেকেই।
১৯৫৪ সালে ঢাকায় চলে আসে বঙ্গবন্ধুর পরিবার। আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে পড়েন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। থাকতেন আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-সমাবেশে। বিশিষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিয়ে হয় তার।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের রক্তাক্ত অধ্যায়। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
বাবা, মা, ভাই, বোন, আত্মীয় স্বজন হারিয়ে একরকম নির্বাসনেই কাটান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে। রক্তের টানে, ভালোবাসার টানে দেশে ফিরতে চাইলেও বাধা দেয়া হয়। তিনি বিদেশেও জীবন কাটাতে পারতেন। আমরা যদি একবার ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করি, সব স্বজন হারিয়েও তিনি দেশে ফিরতে চেয়েছেন, ফিরেছেনও। মানুষের প্রতি টান না থাকলে কি এটা সম্ভব?
বিদেশে থাকা অবস্থায়ই ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর দেশে ফিরে হাল ধরেন দলের। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলে আন্দোলনে নেমেছেন। ঝড়, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
গ্রামের পর গ্রাম হেটেছেন। মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এরশাদ পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সরকার গঠন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সাম্প্রদায়িক গুজব, অপপ্রচারে পেরে ওঠেনি আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনের সময় বিএনপি-জামাত প্রচার চালিয়েছিল- ‘আওয়ামী লীগ জয়ী হলে ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে, মসজিদে উলু ধ্বনি, শঙ্খধ্বনি বাজবে। (এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরকম গুজবের সাথেই লড়াই করতে হচ্ছে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে)।’
১৯৮১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দলের ভেতরে-বাইরেও লড়তে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। ৯৬ তে সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার কাজে হাত দিয়েছেন। জনকল্যাণে নিয়েছেন অনেক পদক্ষেপ।
২০০১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর সারাদেশে নির্যাতনের শিকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন শেখ হাসিনা।
বিভিন্ন সময়ে বারবার তার প্রাণ সংহারে হামলা হয়েছে। চট্টগ্রামের লালদীঘী ময়দানে গুলি, ট্রেন ও গাড়ি বহরে গুলি, টুঙ্গিপাড়ায় বোমা পুতে হত্যার চেষ্টা। একুশে আগস্ট গেনেড হামলায়তো কোনোরকমে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত জাতিকে স্বপ্ন দেখাতে শেখান বঙ্গবন্ধুকণ্যা। স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে শুরু করেন বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনা। মানুষকে তিনি জানান, এদেশের মানুষ আর গরীব থাকবে না। ইউরোপের মতো উন্নত হবে বাংলাদেশ। সীমিত হলেও কল্যাণ রাষ্ট্রের মতো বিভিন্ন ভাতা চালু করেন তিনি।
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা- মৌলিক অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত হচ্ছে। মূলত জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নেই এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
নানা ষড়যন্ত্রের পরও পদ্মাসেতু হচ্ছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গল্প নয়, সত্যি। মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্র বন্দর, নদীর নিচ দিয়ে টানেল বাংলাদেশেই হচ্ছে।
শেখ হাসিনা ভবিষ্যৎ দেখতে পান বলেই দীর্ঘ মেয়াদী নানা পরিকল্পনা করেছেন দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিতে। অর্থনীতিতেও জিডিপি, মাথাপিছু আয় অঙ্কের হিসেবে যাই হোক না কেন উন্নয়নতো দৃশ্যমান।
কৃষি ও শিল্প খাত এগোচ্ছে পরিকল্পিতভাবেই। শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্বের কারণেই সমুদ্র জয় সম্ভব হয়েছে।
মহাকাশে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট- এতো কল্পনাতেই আসেনি কখনো। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এখন বাস্তব।
ছোট্ট দেশে ১৬ কোটিরও বেশি মানুষ, শেখ হাসিনা কখনো বোঝা হিসেবে দেখেননি, দেখেছেন সম্পদ হিসেবে।
তার উন্নয়ন দর্শনে খসে পড়েছে গরীব, তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা। উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র থেমে নেই।
শেখ হাসিনা বাংলার মানুষের কাছে মেঘে ঢাকা আকাশে আশার লাল সূর্য। তাঁর আভায় কাটবে মেঘ। তাঁর দেখানো পথেই হাটবে বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনার উন্নত, সমৃদ্ধশালী, মানবিক বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা বিশ্ব দরবারে পত পত করে উড়বে সবসময়। শুভ জন্মদিন প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)