অভিনয়ের জন্য এবং নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপনের জন্য যেকোনো চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি টাইগার রবি। তবে সেই চ্যালেঞ্জ যে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে সেটা ভাবতেই পারেননি এই অভিনেতা। টাইগার রবি এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন ‘সাত ভাই চম্পা’ মেগা সিরিজে কাজ করতে গিয়ে।
চ্যানেল আই অনলাইনকে টাইগার রবি বলেন, ঘোড়ার পিঠে ছিলাম, গাজীপুর জঙ্গলে শুটিং করছিলাম। পূর্বে তেমন ঘোড়া চালানোর অভ্যাস ছিল না। কাজটা যেন ভালো হয় সেজন্য রিস্ক নিয়েই শটটা দিতে গিয়েছিলাম। ঘোড়া প্রথমে দেড় মিনিটে পিছনে গিয়ে পুরো ছুটতে থাকে।
তিনি বলেন, যখন ছুটছিল তখন প্রায় ১০০ থেকে ১২০ কি.মি গতি ছিল। দু’পাশে গাছের ডাল ছিল। ওদিক পরিচালক জানাচ্ছিলেন এক্সপ্রেশন যেন ঠিক থাকে। আমি তখনও এক্সপ্রেশন ঠিক রেখেছিলাম। সামনে একটা পিকাপ ছিল। ঘোড়াটা যখন হঠাৎ দাঁড়ায় তখন আমি পিকাপের উপর দিয়ে ২০ থেকে ২৫ ফিট দূরে পড়ে যাই।
বাম-ডান দুই হাতের দুই আঙুল ফেটে গিয়েছিল। আর কোমরে ব্যথা পেয়েছিলাম। আরেকটু হলে হয়তো আরো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। আমার কোনো ধারণা ছিল না ঘোরাটা ওই সময় কীভাবে কন্ট্রোল করতে হতো! পুরো ঘটনাটা ২০ সেকেন্ডে ঘটে।
আমি পরে খেয়াল করি ইউনিটের সবার চোখমুখ লাল হয়েছে। তখন শুটিং বন্ধ রাখা হয়েছিল। শারীরিকভাবে ফিটনেস বলেই হয়তো ওইদিন বেঁচে গিয়েছিলাম। তারপরেও কাজটা ভালো হয়েছে, সেজন্য আমার কোনো কষ্ট নেই। আর ভালো কাজ করতে হলে এমন চ্যালেঞ্জ নিতে হয়।
টাইগার রবি বলেন, আমরা সবাই সর্বোচ্চভাবে নিজেদের সেরাটা দিয়ে এই সিরিজে কাজ করেছি। আমার বিশ্বাস দর্শক ‘সাত ভাই চম্পা’ দেখলে পছন্দ করবেন। এখানে আমরা দেশি শিল্পী, নির্মাতা, টেকনিশিয়ান দিয়েই কাজ করেছি। আমাদের শারীরিক, মানসিক শ্রম ব্যয় হয়েছে।
কথায় কথায় টাইগার রবি জানালেন ‘সাত ভাই চম্পা’ হওয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার গল্প। বললেন, বছর দেড়েক আগে ‘সাত ভাই চম্পা’র পরিচালক রিপন নাগ আমাকে এই সিরিজে কাজের অফার দেন। কিন্তু আমি ফিল্মের মানুষ, নাটক নিয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না। তারপর পরিচালক বলেন, আমার অচেনা হৃদয় ছবিটি দেখে তিনি আমার জন্য চরিত্রে ঠিক করেছেন।
তখন আমার মনটা নরম হয়। ভালো লাগে। কারণ, ওই ছবিটা মুক্তি পেয়েছিল কয়েক বছর আগে। তখন থেকেই আমার জন্য এই চরিত্রটা ভেবেছেন নির্মাতা। এটা নিয়ে অনেক গবেষণা করা হয়েছে। আমার খুব ভালো লাগে। পরে আলাপ আলোচনা করে সবকিছু ঠিক হয়। এটা রাজ্য রাজা নিয়ে গল্প। তাই এখানে রাজ্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সেনাপতিকে দিয়েই হয়। আমিও এটা নিয়ে কিছু লেখাপড়া করেছি। গল্পে দেখা যাবে, আমি বঙ্গের সেনাপতি।
টাইগার রবি বলেন, ‘সাত ভাই চম্পা’ নাটক হলেও এখানে সিনেমাটিক প্যাটার্ন আছে, মেকিংও সিনেমার মতো। মানে সিনেমার ফিলটা নাটকে দিচ্ছি। আর বিশেষ কিছু আছে বলেই আমি এই নাটকে কাজ করছি। আমি যে সেনাপতির চরিত্রে কাজ করছি, সেখানে শুধু অভিনয় জানলেই হবে না, শারীরিক ফিটনেসও লাগবে।
দেখা গেল, আমি যদি সেনাপতির চরিত্র না করতাম তখন আমার স্থানে একজন শারীরিক ফিটনেস সম্পন্ন বিদেশী শিল্পী নেয়াই লাগতো। তাহলে বিদেশি শিল্পী নেয়া লাগলে তবে আর আমাদের দেশের প্রোডাকশন কীভাবে? তাছাড়া সিনেমায় যে একটু খারাপ অবস্থা যাচ্ছে, অনেক নির্মাতা এখানে আমার অভিনয় দেখে হয়তো ভাবতে পারেন, এই লোকটাকে আমার সিনেমায় কাস্ট করে দেখি কেমন কাজ করে!