‘টাকা পয়সা একদিন থাকবে না। কাজটা থেকে যাবে।’- এটাই চিরায়ত সত্য। কিন্তু এমন সত্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গীতিকবি, সুরকার ও শিল্পী কবীর সুমন বলছেন অন্য কথা!
সম্প্রতি নিজের ফেসবুকে একটি ইচ্ছেপত্র (উইল) প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট বাংলায় জানিয়েছেন, তার মৃত্যুর পর যেন তার সমস্ত সৃষ্টি ও স্মৃতিবিজড়িত জিনিসপত্র ধ্বংস করে দেয়া হয়!
কিংবদন্তী এই শিল্পীর এমন ইচ্ছেপত্র নিয়ে নিয়ে আলোচনা সর্বত্ব! কী লিখেছেন ইচ্ছেপত্রে? নিজের প্যাডে লেখা ‘সকলের অবগতির জন্য’ শিরোনামের সেই ইচ্ছাপত্রে তিনি লিখেছেন, ‘আমার মৃতদেহ যেন দান করা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে। কোনও স্মরণসভা, শোকসভা, প্রার্থনাসভা যেন না হয়। আমার সমস্ত পাণ্ডুলিপি, গান, রচনা, স্বরলিপি, রেকর্ডিং, হার্ড ডিস্ক, পেনড্রাইভ, লেখার খাতা, প্রিন্ট আউট যেন কলকাতা পৌরসভার গাড়ি ডেকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেগুলি ধ্বংস করার জন্য। আমার কোনও কিছু যেন আমার মৃত্যুর পর পড়ে না থাকে। আমার ব্যবহার করা সব যন্ত্র, বাজনা, সরঞ্জাম যেন ধ্বংস করা হয়। এর অন্যথা হবে আমার অপমান।’
সেখানে তিনি আরো বলেন, ‘খুব জরুরি বিষয়। আবেগহীনভাবে সকলকে জানিয়ে রাখছি, কারণ হঠাৎ কিছু ঘটে গেলে কঠিন সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় অনুরূপ একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল ২০১২ সালে আমি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবার পর। খোলাখুলি সকলকে জানিয়ে রাখছি। অনুগ্রহ করে মতামত দেবেন না। ভালমন্দ কিছু লিখবেন না। এটা এক প্রবীণ মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি। অনেক অভিজ্ঞতার পর, অনেক ভেবেচিন্তে লিখছি। ফেসবুকে, যাতে অনেকেই এটা জেনে যান। অনুগ্রহ করে আবেগের বশবর্তী হবেন না, উপদেশ পরামর্শ দেবেন না’।
তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমার জীবনে কোনও হতাশা, দুঃখ, ব্যর্থতাবোধ, অবসাদ নেই। আমি সানন্দে বেঁচে আছি। আমার কাজ করে যাচ্ছি’।
ইচ্ছেপত্রে সুমন আরো লিখেন, ‘সজ্ঞানে, সচেতন অবস্থায়, স্বাধীন ভাবনাচিন্তা ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমি জানাচ্ছি, আমার কোনও অসুখ করলে, আমায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে, অথবা আমি মারা গেলে, আমার সম্পর্কিত সব কিছুর, প্রতিটি বিষয় ও ক্ষেত্রে দায়িত্বগ্রহণ এবং সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকার থাকবে একমাত্র মৃন্ময়ী তোকদারের (মায়ের নাম প্রয়াত প্রতিমা তোকদার, বাবার নাম দেবব্রত তোকদার)। অন্য কারওর কোনও অধিকার থাকবে না এই সব বিষয় ও ক্ষেত্রে’।
সুমনের ইচ্ছেপত্র বিষয়ক পোস্টের নীচে মৃন্ময়ী লিখেছেন, তিনি সুমনের দেওয়া ওই দায়িত্ব স্বীকার করে নিচ্ছেন।
তার এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের অনেককেই সেই ইচ্ছেপত্রের নিচে মন্তব্য করতে দেখা গেছে। কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কয়েক কোটি মানুষের মাথায় আপনার যত গান লিপিবদ্ধ হয়ে আছে, তা ধ্বংস করা এমনকি কাগজে/কলমেও অসম্ভব।’ শিল্পী আসিফ আকবরের মন্তব্য, ‘কী ভয়ঙ্কর!’ শিল্পী ও গীতিকার লুৎফর হাসান লিখেছেন, ‘আপনি চিরকালের। এসব ধ্বংস হবে না।’
খুব জরুরি বিষয়। আবেগহীনভাবে সকলকে জানিয়ে রাখছি, কারণ হঠাৎ কিছু ঘটে গেলে কঠিন সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় অনুরূপ একটা সমস্যা…
Posted by Kabir Suman on Friday, October 23, 2020