আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি যে দেশগুলোতে, তার মধ্যে সাউথ কোরিয়া অন্যতম। অবস্থা এমনই যে, লোকজন কর্মস্থলে গিয়েও প্রায়ই জানায় তারা মানসিক পীড়ায় ভুগছেন। তাই মানুষকে জীবনের মূল্য উপলব্ধি করাতে দেশটির বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জন্য করেছে ‘কফিন থেরাপি’র ব্যবস্থা।
সিউলে বাইরে থেকে দেখতে আর দশটা সাধারণ অফিস ভবনের মতোই দেখতে এই অফিসগুলোর ভেতরে বড় একটি আলাদা ঘর থাকে, যেখানে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদেরই শেষকৃত্যের জন্য তৈরি হন! মৃত্যুযাত্রার সাদা পোশাক পরে তারা প্রথমে ডেস্কে বসেন প্রিয়জনকে জীবনের শেষ চিঠিটি লেখার জন্য। চিঠি লেখার সময় মন থেকে হাতের কলমে বেরিয়ে আসে আবেগ, চোখে অশ্রুর বন্যা। তাই প্রত্যেকের ডেস্কে থাকে এক বাক্স টিস্যু পেপার।
এরপর তাদের দেখানো হয় জীবনের মূল্য বোঝা কিছু মানুষের ভিডিও – ক্যান্সারে আক্রান্ত এক ব্যক্তি, যার জীবনের শেষ কয়টা দিনও তিনি কাটাচ্ছেন প্রাণবন্তভাবে; হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেওয়া একজন, নিজের চেষ্টায় যিনি সাঁতার শিখেছেন, তারপরও জীবনের প্রতি হতাশ হননি এদের কেউ।
তারপর আসে সেই চরম মুহূর্ত। ডেস্ক ছেড়ে উঠে দাঁড়ান তারা সেই কাঠের কফিনের পাশে, যার ভেতর একমাত্র মৃত্যুর পরই ঢোকার সাহস হয় একজন মানুষের। কিছুক্ষণ ইতস্তত করে অবশেষে যার যার কফিনে ঢুকে শুয়ে পড়েন প্রত্যেক কর্মচারী। সবাই কালো ফিতায় মোড়ানো নিজের একটি ছবি বুকে জড়িয়ে থাকেন।
কফিনের ভেতর শুয়ে ওপরে তাকিয়ে তারা দেখতে পান কালো পোশাক এবং লম্বা কালো টুপি পরা একজন (সাজানো মৃত্যুদূত) সশব্দে ঢাকনা লাগিয়ে দিচ্ছে। তারপর সব নিস্তব্ধ অন্ধকার। সেই নিস্তব্ধতায় বন্দী থেকে মানুষগুলো উপলব্ধি করেন বেঁচে থাকার মানেটা আসলে কী।
এই থেরাপিগুলোতে অংশ নিতে কোম্পানিগুলো কর্মচারীদের বাধ্য করে, যেনো তারা বুঝতে পারেন, সমস্যা থাকলে তার মোকাবেলা করতে হবে, ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। কারণ জীবন একটাই। একবার আত্মহত্যা করলে তা আর ফিরে পাওয়া যাবে না।
এই থেরাপি নেয়ার পর জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পেছেন বলে জানিয়েছেন অফিসগুলোর বেশিরভাগ কর্মচারী। তারা এখন ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে আগের চেয়ে অনেক বেশি শান্তিতে আছেন বলে উল্লেখ করেন।