পুরনো ঢাকার মুন সিনেমা হলের জমি এবং তার ওপর গড়ে তোলা স্থাপনার নির্ধারিত মূল্য ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সা পরিশোধে সম্মত হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এই অর্থ বুঝিয়ে দিতে সরকারকে দুই মাসের সময় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রাপ্য টাকা দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মত হওয়ার বিষয়টি আজ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বধীন আপিল বেঞ্চকে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
সেই সাথে এ অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল তিন মাস সময় চাইলে আপিল বেঞ্চ অর্থ পরিশোধে সরকারকে ২ মাস সময় দেন।
এই মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে মামলার পরই সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়েছিল।
সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে টাকা পেলেই এ অর্থ নিয়ে তা ইটালিয়ান মার্বেলকে দিয়ে দিবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। কারণ, টাকাটা পরিশোধ করবে মামলার বিবাদি, অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। কিন্তু টাকাটা দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এসময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের এসংক্রান্ত চিঠিটি আদালতে উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। সে চিঠিতে, ‘সংশোধিত বাজেট থেকে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।’
এই মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে এক সময়ের মুন সিনেমা হলের মূল মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করা হয় এবং পরে শিল্প মন্ত্রণালয় ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করে। ইতালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করলেও বিষয়টি আটকে যায়।
এরপর ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান একটি সামরিক ফরমান ঘোষণা করেন, যাতে বলা হয়, সরকার কোনও সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে আদালতে তা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। মুন সিনেমা হলের সম্পত্তিও এর আওতায় পড়ে যায়।
কিন্তু ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস এরপর ২০০০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে, যেখানে সংবিধানের ওই পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করা হয়। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় দেয়। রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান-বহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে এবং ৯০ দিনের মধ্যে মুন সিনেমা হল ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেয়।
এরপর দীর্ঘ দিনেও মালিকানা ফিরে না পেয়ে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইতালিয়ান মার্বেল কর্তৃপক্ষ তখনকার ভূমিসচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করে।
সেই অভিযোগের শুনানি করেই আপিল বিভাগ সিনেমা হলের জমি, স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দেয়। সে ধারাবাহিকতায় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী মূল্য নির্ধারণ করে দেন।
এরপর আদালত মুন সিনেমা হলের মূল মালিক ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড কোম্পানিকে ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতি নির্দেশ দেন। এরপর আবার গত ১ জুলাই মুন সিনেমা হলের মালিককে দ্রুত অর্থ পরিশোধের জন্য মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষকে মৌখিক নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। ওই দিন আদালত বলেন, ‘অর্থ পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট সকলকে তলব করা হবে।’