মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের আইনজীবীরা ‘বেনিফিট অব ডাউট’ যুক্তিতে তার মুক্তি দাবি করেছেন। ট্রাইব্যুনালের মতো আপিল বিভাগেও তাদের মুল যুক্তি, ‘সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়’। মুজাহিদ ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি এবং সভাপতি ছিলেন বলেই তাকে শাস্তি দেওয়া যৌক্তিক নয় বলেও দাবি তাদের।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের আপিলের উপর ২৯ এপ্রিল শুনানি শুরু হয় আপিল বিভাগে। মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত ৫ অভিযোগ, সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং রায় আদালতে উপস্থাপন করে আসামীপক্ষ। পরে টানা দু’দিনে আইনি যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছেন তারা।
মুজাহিদের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “ যাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে, তারা বিভিন্নভাবে এমন সব কথা বলেছে যেটা বিশ্বাসযোগ্য না। এই বিশ্বাসযোগ্য না থাকার কারনে এই সাক্ষীর উপর ভিত্তি করে কাউকে সাজা দেয়া উচিত হবে না। অতএব আমার আসামী বেনেফিট অব ডাউট পেতে পারে।
মাহবুব হোসেন আরও বলেন, “মুজাহিদ ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রথমে সেক্রেটারি ছিলেন, পরে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। শুধু এই কারনে তাকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালস তাকে যে সাজা দিয়েছে সে সাজাটা আইন মোতাবেক হয়নি। আসামীর পক্ষে যে অভিযোগ গুলো আনা হয়েছে সব অভিযোগ গুলা প্রমাণিত হয় নাই। সে কারনে সে মামলা থেকে খালাস পেতে পারে।”
আসামীপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে শুনানি শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষ। প্রথম দিনে ৭টির মধ্যে ২টি অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশ্যে যে উনার হুমকি ছিলো তারই পরিপ্রেক্ষীতে পরবর্তী সময়ে সিরাজউদ্দিন হোসেনের মতো অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের তুলে নেয়া হয়েছিলো এবং হত্যা করা হয়েছিলো। যেহেতু ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন, এই ব্যপারে তার দায়িত্ব ছিলো। সুতরাং ট্রাইব্যুনাল তাকে যদিও আলাদা শাস্তি দেয়নি, কিন্তু দোষী সাব্যস্ত করে সঠিক কাজই করেছে।”
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে ৪ সদস্যের বেঞ্চ বুধবার (২৭ মে) পর্যন্ত মুলতবি করেন মুজাহিদের আপিল শুনানি। বাকি ৫ অভিযোগের উপর বুধবার বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন।
২০১৩ সালের ১১ আগস্ট মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন মুজাহিদের আইনজীবীরা। ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনীত রাষ্ট্রপক্ষের সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়েছে মর্মে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।